SAHA ANTAR

Published:
2021-07-10 15:36:44 BdST

হালাল সাবান,মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি:দিন শেষে কোয়ালিটিই ফ্যাক্টর


 

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ
বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী
________________________

বাংলাদেশে নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে এরোমেটিক বলে একটা টয়লেট্রিজ ব্র‍্যান্ড বাজারে এসেছিলো।

হঠাৎ তারা হালাল সাবান বলে একটা সৌন্দর্য-সুগন্ধি সাবান আনলো। তারা ঘোষণা দিলো এই সাবান হালাল। তার মানে এদ্দিন যে সাবান আমরা ব্যাবহার করেছি সেটা ছিল হারাম! তাদের বিজ্ঞাপনের ভাষায় অনেকটা সেরকম বার্তাই।

তারা বিজ্ঞাপন বানিয়ে দেখালো মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাম গাছের বাগান। সেখান থেকে তারা পাম ওয়েল সংগ্রহ করে তৈরি করে তাদের সাবান। তারা এও বলল, বাজারের আর সব সৌন্দর্য সাবানে আছে শুকরের চর্বি।

এই বিজ্ঞাপনের ম্যাসেজ লোকে লুফে নিলো। পয়সা দিয়ে হালাল সাবান রেখে কে হারাম সাবান কিনতে চায়? আমিও কিনলাম হালাল সাবান। তখন এইচএসসি তে পড়ি। লেমন ডিউ, রেক্সোনা, লাক্স ছেড়ে একটাকা বেশি দিয়ে এরোমেটিক হালাল সাবান কিনতাম। আস্তে আস্তে অন্য কোম্পানিও তাদের সাবানকে হালাল বলে ঘোষণা দিল। শুধু ঘোষণা না, মোড়কের উপর আরবি দিয়ে লিখে দিতো 'হালাল'। বাংলায় না।

শুনেছিলাম সে বছর লাক্সের বাজারের শেয়ার অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছিলো।

তবে লাক্স এখনো পূরনো দাপটেই বহাল আছে। আজকাল সাবানের হালাল হারাম নিয়ে কোন মার্কেটিং ভাইভ দেখিনা৷ এরোমেটিক সাবানটি আদৌ আর বাজারেই আছে কিনা আমার জানা নাই।

কসকো সাবান বিজ্ঞাপন বানালো পাত্রী সেজেগুজে বসেছে। কিন্তু চেহারা দেখে পাত্রপক্ষের ভাল লাগলোনা। পাত্রীর বোন/বান্ধবী কসকো সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে এলো। তারপর বিয়ে হয়ে গেলো।
এরকম কন্সেপ্টের বিজ্ঞাপন তখন খুব কমন ছিলো।

ফেয়ার এন্ড লাভলি বিজ্ঞাপন বানালো। এক মেয়ে কালো বলে স্বামীর কাছে উপেক্ষিত হতে থাকলো। স্বামী তাকে পছন্দ করেনা। তারপর সে ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখা শুরু করলো। এখন স্বামী তাকে কদর করে।

সমাজ বদলাতে থাকলো। নারীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে মানুষ সোচ্চার হলো। এসব বিজ্ঞাপনে প্রগতিশীলরা খুব খেপে গেল।

তারপর ফেয়ার এন্ড লাভলি স্ট্র‍্যাটেজি বদলে ফেললো। তারা বিজ্ঞাপন বানিয়ে নারীকে স্বাবলম্বী দেখালো। অসুস্থ বাবার সংসারে হাল ধরতে এগিয়ে এলো ঘরের মেয়েটি। ফেয়ার এন্ড লাভলি মেখে আত্মবিশ্বাসী (ফর্সা নয়) হলো। তারপর তার চাকরি হলো। বাবা এবার মেয়েকে নিয়ে গর্বিত হলো। ছেলে না থাকার আফসোস ভুলে গেল।

সমাজের ধর্মানুভুতি কিংবা প্রগতিশীল অনুভুতি বা নারীর প্রতি দৃষ্টি ভংগিকে কাজে লাগিয়ে যুগে যুগে ব্যাবসা হয়েছে। পুঁজির দুনিয়া পুঁজিকেই উপাস্য জ্ঞান করে। মুনাফাই এখানে আসল। ধর্ম, প্রগতি বা নারীবাদ কোন কিছুই পুঁজিবাদের জন্য সমস্যা না। সব কিছুকেই নিজেদের ফেভারে নিয়ে ব্যাবসা চালানো যাবে৷ বরং মানুষ কোন একটা ইজম নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকলে তার ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর ক্যাপাসিটি কমে যায়। তাকে তখন মোটিভেট করা সহজ হয়। সেটা পুঁজিবাদের জন্য একটা উর্বর জমি হিসেবে কাজ করে।

তবে দিন শেষে কোয়ালিটি একটা ফ্যাক্টর। ক্লাস ইজ পারমানেন্ট বলে একটা কথা আছে। মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজির কারণে কেউ সাময়িক সাফল্য পেলেও শেষ অবধি টিকে থাকে ক্লাস।

 

লেখা র শিরনাম দিয়েছেন অন্তর সাহা, যুক্ত সম্পাদক, কলকাতা। 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়