SAHA ANTAR

Published:
2021-07-04 04:32:05 BdST

টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরাই করোনার ‘নতুন ধরনের কারখানা’


 

ডেস্ক

করোনার টিকা যাঁরা নেননি, তাঁরা শুধু নিজেদেরই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেননি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁরা সবার জন্যই ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ান। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেছেন বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এই বক্তব্যের পেছনে যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলেছেন, করোনার নতুন ধরন শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকেই তৈরি হয়।

ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক উইলিয়াম শাফনার শুক্রবার সিএনএনকে বলেছেন, ‘টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরাই সম্ভাব্য করোনার নতুন ধরন তৈরির কারখানা। টিকা না নেওয়া মানুষ যত বেশি হবে, ভাইরাসের বংশবিস্তারের আশঙ্কা তত বেশি হবে। এই বংশবিস্তারকালেই ভাইরাসের রূপান্তর ঘটে। এবং এর মধ্য দিয়ে নতুন একটি ধরন তৈরি হতে পারে, যা মূল ধরনের চেয়ে আরও বিপজ্জনক।’


শুধু করোনা নয়, সব ভাইরাসেরই রূপান্তর ঘটে। অধিকংশ রূপান্তরে ভাইরাসের তেমন কোনো তারতম্য হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাইরাসটি আরও দুর্বলও হয়ে থাকে। তবে মাঝে মাঝে কোনো একটি ভাইরাসের হরদম রূপান্তর (মিউটেশন) ঘটে। এর মধ্য দিয়ে ভাইরাসটি আরও শক্তিশালী হয়, সেটি হয়ে ওঠে আরও বেশি সংক্রামক, কাদের কাদের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারবে, সেই সক্ষমতাও বেড়ে যেতে পারে।

এই ভাইরাসগুলো অন্যান্য ভাইরাসকে টপকে বেশি ক্রিয়াশীল থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এসব ভাইরাসই প্রধান হয়ে ওঠে। এই আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে যদি আরেকজনের দেহে ভাইরাসটি যায়, তাহলে তার শরীরে ভাইরাসের নতুন সংস্করণটি যাবে। এই মিউটেন্ট সংস্করণ সফল হলে তা হয়ে ওঠে নতুন ধরন।


তবে এটা হওয়ার জন্য ভাইরাসটির প্রতিলিপি তৈরি করতে হয়। টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে ভাইরাস সেই সুযোগ পেয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অণুজীব ও রোগপ্রতিরোধবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু পেকোজ বলেন, ভাইরাসের মিউটেশন ঘটতে থাকলে জনসাধারণের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়াটা সহজ হয়।

তিনি বলেন, ‘যতবার ভাইরাসের পরিবর্তন ঘটে, প্রতিবারই আরও মিউটেশনের জন্য তা ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম পায়। এখন আমাদের কাছে সেই সব ভাইরাস আছে, যেগুলো আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’


যেসব ভাইরাস ছড়ায় না, সেগুলোর মিউটেশনও হয় না
বিশ্বজুড়ে করোনার নানা ধরন দেখা দিয়েছে। বি.১.১.৭ বা আলফা ধরন প্রথম দেখা দেয় ইংল্যান্ডে। বি.১.৩৫১ বা বিটা ধরন শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। বি.১.৬১৭.২ বা ডেলটা ধরন প্রথম দেখা দেয় ভারতে। যুক্তরাষ্ট্রেও কয়েকটি ধরন দেখা দিয়েছে। বি.১.৪২৭ বা ইপসিলোন লিনেজ প্রথম দেখা গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ায়। আর বি.১.৫২৬ বা ইটা ধরন ধরা পড়েছিল নিউইয়র্কে।

এর মধ্যে একটি নতুন ধরন বিশ্বের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। গত গ্রীষ্মে ডি৬১৪জি নামের ভাইরাসটির একটি সংস্করণ প্রথম ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। পরে বিশ্বের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। এই পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ভাইরাসটির অধিকাংশ নতুন ধরনে ডি৬১৪জি সংস্করণ থেকে ভিন্নতা রয়েছে। আলফা ধরন বা বি.১.১.৭ বিগত বসন্তের শেষ দিক পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। অতি সংক্রামক হওয়ায় করোনার এই ধরনে যুক্তরাষ্ট্রে বেসামাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এখন ডেলটা ধরন আরও বেশি সংক্রামক। করোনার এই ধরন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশেই সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ধরন হতে চলেছে।

বর্তমানে করোনার যেসব টিকা রয়েছে, সেগুলো সব কটি ধরনের বিরুদ্ধেই সুরক্ষা দেয়। তবে যেকোনো সময় এর পরিবর্তন ঘটতে পারে। সে কারণে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চাইছেন, যত বেশি সম্ভব মানুষকে যাতে টিকা দেওয়া হয়।
গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ভাইরাসকে আমরা যত বেশি ছড়াতে দেব, ভাইরাসটির পরিবর্তনের সুযোগও তত বেশি হবে

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়