Ameen Qudir

Published:
2017-02-07 16:53:47 BdST

ডাক্তারদের এত অপমান, লাঞ্ছনা: তোমরা আমাদের কেমন অভিভাবক



ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
___________________________

গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিশ্লেষন করলে একজন চিকিৎসক হিসেবে হতাশ না হয়ে উপায় কি?
সূদুর ভোলাতে থানা হেল্থ কমপ্লেক্সে বসে অফিস টাইমে ভিজিট নিয়ে রুগী দেখা এবং টেষ্ট না দেয়ার জন্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্মীর দ্বারা নারী চিকিৎসক অপমানিত!
এস এস সি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে প্রশ্নকর্তা জাহেদ সাহেব লোভী ডাক্তার বলে সমগ্র চিকিৎসক সমাজকে লোভী শব্দটার সিনোনেম হিসেবে সাতাশি লক্ষ কোমল মতি পরীক্ষার্থী,সেই সাথে দেশবাসী সকলের মনে সেট করে দেয়া হয়েছে।রাজশাহী মেডিকেলের এক প্রফেসরের বিরুদ্ধে কিডনী চুরির অপবাদ দিয়ে অপসাংবাদিকতা করে তাকে সমাজে চরম ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।


আর কিছু সময় যেতে না যেতেই ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক কে তার কর্তব্য পালন কালে জানালার কাঁচের টুকরা দিয়ে আঘাত করেছে রুগীর সাথে আসা দুর্বৃত্ত আত্মীয় স্বজন।

আমি নিজেও জানি আর আপনারাও জানেন এই দুর্ঘটনা গুলো আবারো রিপিট হতে থাকবে।এটা ছোট বেলার রেপিড রিডিং এ পড়া দুষ্ট ছেলেরা আর ব্যাঙাচির গল্পের মত!ওরা ইট মারছে আমরা লাফাচ্ছি,থেমে যাচ্ছি।ওরা দ্বিগুন উৎসাহে আবারো ইট মারছে।


খুব কি অসম্ভব ইটের বদলে পাটকেল ছুঁড়ে মারা!
ভোলার থানা হেল্থ কমপ্লেক্স এর UH&FPO চাইলেই পারতেন ঐ ডায়াগনষ্টিক কর্মীর বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাঁধা প্রদানে মামলা করা।ঐ হেল্থ কমপ্লেক্স এ এমন ঘটনা আর ঘটত না।উনি তা করেননি।


আজ চার পাঁচ দিন হয়ে গেল,এত বড় অসভ্য বর্বর মানসিকতার প্রশ্নকর্তা শিক্ষকের পরিচয় ই বের হলো না।বিচার তো দূর!
আর সেই সার্জারীর প্রফেসর?শুধুই কি মাছের মত বাঁচতে চাই আমরা না কি সম্মান চাই?কেন উনি কোটি টাকার মানহানীর মামলা করছেন না ঐ মিডিয়াদের বিরুদ্ধে!এক মিডিয়া মালিকের কোটি টাকা খসাতে পারলে এই জীবনে অনেকেই আর এই দুঃসাহস করবে না!


আর ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক সাহেব,আপনাকে কি বলে ক্ষোভ জানাই বলুন তো?দায়িত্ব শব্দটা বোঝেন তো স্যার?আপনার কন্যা সন্তান আছে?আপনাকে ফোন করে আপনার মেয়ে যদি বলত,বাবা আমি কর্মস্থলে আমার কর্তব্য করছিলাম আর একদল সন্ত্রাসী জানালার কাঁচ দিয়ে কেটে আমায় রক্তাক্ত করেছে।আপনি ঠিক এই কথা বলতেন তো যাহা ডাঃ আফরীন,শর্মিষ্ঠাকে বলেছেন?আমি জানতে চাই একজন সন্ত্রাসী ও ধরা পড়েছে??


তোমরা আমাদের কেমন অভিভাবক?
যে সে যখন তখন যেখানে সেখানে আমাকে মারবে,আঘাত করবে,গালি দেবে,অপদস্ত করবে আর তুমি নীরব দর্শক হয়ে উপভোগ করবে যা কিনা আরো বড় অপরাধে উদ্ধুদ্ধ করবে সন্ত্রাসীদের!


তাই স্বাস্থ্য খাতে এই মুহুর্তে সবথেকে বড় প্রয়োজন বিশেষায়িত স্বাস্থ্য প্রশাসন।স্বাস্থ্য থেকে নেয়া চিকিৎসক ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বারা নিয়ন্ত্রন করতে হবে।প্রতিটি ঘটনায় এরা তদন্ত করবে।দ্রুত বিচার আইনে মামলা হবে।এবং স্বল্প সময়ে নিষ্পতি।

এই দেশে চিকিৎসক হওয়া এতটাই পাপ,যে একজন সাধারন নারী যে সুবিধা এবং সামাজিক সিমপ্যাথি ভোগ করে,একজন নারী কেবল চিকিৎসক হবার অপরাধে তা থেকে বঞ্চিত হয়।
অসুস্থ হলে আপনার মা,বোন,স্ত্রী,কন্যার সম্ভ্রম এবং শালীনতা রক্ষায় আপনার প্রথম পছন্দ নারী ডাক্তার!আর বিকৃত মানসিকতার কিছু নরপশু নারী চিকিৎসককে আহত করলে সকলে পৈশাচিক আনন্দ পান।


আমার দাবী অতি সত্বর চিকিৎসক আদালত গঠিত হোক যেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী চিকিৎসক ম্যাজিষ্ট্রেসী পাবে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের সঠিক বিচার কার্যে।

______________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । দেশের জনপ্রিয় কলামিস্ট। মহৎপ্রতিভাবান কথাশিল্পী। মেডিকেল অফিসার, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়