SAHA ANTAR

Published:
2021-06-17 15:08:54 BdST

'বাবার মৃত্যুর পরে আমি বাবার বিছানায় ঘুমাতাম,' বাবার গন্ধ পাওয়া যেত বালিশে'


দীপংকর গৌতম
_____________________

আমার বাবা
----------------------
বাবা যখোন প্রয়াত হলেন তখন শীতকাল। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে যতলোক পাগলের মতো ছুটে এসেছিলো অত ব্যথিত মানুষ আমার এলাকায় কখনো দেখিনি। বাবার মরদেহ সূর্যালোকের সাথে সাথে আমাদের নিয়ন্ত্রনে ছিলো না। বাবার মৃত্যু হলেও অনেকদিন পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো বাবাকে খুঁজতে। শহীদ মিনার, স্কুল -কলেজ যতোখানে বাবার মরদেহ নেয়া হলো লোকের ভিড় উপচে পড়ছিলো। বাবা চিকিৎসক ছিলেন,তার চিকিৎসার ধরন রোগীদের সাথে সম্পর্ক এটা আর কোথাও দেখিনি। বাবার রোগীরা গাছের বা ক্ষেতের ফল প্রথমটা নিজেরা না খেয়ে বাবার জন্য নিযে আসতো। সন্তান হলে যকোন বাড়ি থেকে বের করতো -প্রথম মিষ্টি -মন্ডা শাড়ি, কাপড় নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসতেন। রোগীরা আমাদের আত্মীয় ছিলো। বাবা চিকিৎসা করলেও আমা্র এলাকার স্কুল কলেজ গড়ার সাথে যুক্ত থাকা ও প্রথম দিকে শিক্ষকের অভাবে ক্লাস নেয়ার জন্য বাবাকে সবাই 'মাস্টার মশাই' বলে ডাকতেন। বাবা মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত ছিলো কি ছিলো না,সে বিষয়ে কিছু বলবো না। আমাদের বাড়িতে দুটো ট্রেঞ্চ ছিলো এবং এটা সত্য যে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক আক্রমন চালাতেন আমাদের বাড়ি থেকে,অনেক সময় খেতেন আমাদের বাড়িতে। আমাদের এলাকার কিংবদন্তীতুল্য মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ বেদজ্ঞ আমাদের এলাকায় আসলে আমাদের বাড়িতে থাকতে। বাবা ন্যাপের রাজনীতি করতেন।
আমার বাবা আমাদের বন্ধু ছিলেন,শিক্ষক ছিলেন। বাবা আর আমি দোকানে এক সাথে চা খেতাম।দেখে আমার বন্ধুরা হাসতো। আমাদের বাজারে মানিক লাল রায়ের মিষ্টির দোকান ছিলো। তিনি প্রথম চা কাপ বাবাকে খাইয়ে বিক্রি শুরু করতেন। বাবাকে বসতে দেয়া চেয়ারে তিনি অণ্য কাউকে বসতে দিতেন না। বাবার ব্যবহৃত শেষ রুমালখানা বাবা মানিক কাকার দোকানে ভেুলে রেখে গিয়েছিলেন। মানিক কাকা সে রুমালটাকে চেয়ারের উপর বিছিয়ে রাখতেন। মানিক কাকা এখন ব্যবসা করেন না,কিন্তু তিনি বাবার সম্বন্ধে যত খবর জানেন তা অনেকেই জানেন না। বাবা শত কষ্টে থাকলেও গান,যাত্রা নাটক দিয়ে মূখরিত করে রাখতেন আমাদের এলাকা। বাবার কথা খুব করে মনে করে এখনও আমাদের এলাকার মানুষ। আমাদের এলাকার বিদ্যাপীঠ ও শিক্ষাবিস্তারে বাবার অবদান ছিলো, সেটা বাবা কখনও বলতেন না। তবে যত কাজেই থাকতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্তঃপ্রান ছিলেন।মা মারা যাওয়ার পর বাবা কেমন দ্রুত বুড়িয়ে গেলেন। ভীষন কষ্ট বয়ে বেড়াতেন। তারপর একদিন বাবা চলে গেলে আমার নিঃস্বতা বাড়লোই। আমার দাদারা -বোনেরা, এলাকাবাসী, ব্ন্ধু স্বজন সবার ভালোবাসা আমি মুগ্ধ। তারপরও মা-বাবা না থাকার শুন্যতা হাড়ে হাড়ে অনুভব করি।
বাবার মৃত্যুর পরে আমি বাড়ি গেলে বাবার বিছানায় ঘুমাতাম। বাবার গন্ধ পাওয়া যেত বালিশে লেপে-তোষকে। এক সময় বাবার গন্ধ ফুরাতে লাগলো। ধীরে ধীরে বাবার গন্ধ মিলিয়ে গেল!বাবার বৈঠক ঘর্ বাবার নিজের টাকায় করা ঘর সব রইলো বাবা থাকলেন না। বাবার কথা মনে পড়ে সব সময়। বটবৃক্ষের মতো মানুষটি চলে গেলে,ছায়া বলতে আর কিছু থাকে না। বাবা যেখানেই থাকবেন ভালো থাকবেন-এটা বিশ্বাস আমার।

লেখক বাংলা দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়