SAHA ANTAR
Published:2021-05-25 15:56:35 BdST
প্রেম মিলন দ্রোহের গীতিকবি এবং সাম্প্রদায়িকতা- ধর্মান্ধতা-বিনাশী কবি নজরুল
অন্তর সাহা
_________________
অসাম্প্রদায়িকতার নজরুল। ধর্মান্ধতা-বিনাশী কবি কাজী নজরুল। হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান বৌদ্ধ শিখ পার্সি সর্ব মিলনের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির কবি নজরুল। নিখিল ভারতীয় কবি নজরুল। ভারত বর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নি কলম কবি নজরুল।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে) দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় কবি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম এ প্রাণপুরুষের জন্মদিনটি গতবারের মতো এবারও সীমিত আকারে উদযাপন করা হবে।
দুই বাংলাতে উদযাপন হবে সীমিত অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় আয়োজন ছাড়াও ছায়ানটসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন দিনটি পালন করছে।
নজরুল ইসলাম অমর নাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মত তিনিও দুই বাংলায় বরিত। বাংলাদেশ ও ভারত বর্ষের হৃদয়ের কবি।
একই হাতে অবিরাম লিখেছেন শ্যামাসঙ্গীত ও হযরত মুহাম্মদ স. ও আল্লাহর গুণকীর্তন করে অমর সব গান। তাঁর দুই হাতে ই ছিল সুরের বাঁশরী। তাতে শ্যামাসঙ্গীত, কৃষ্ণ রাধা শিব বন্দনা এবং রসুলাল্লাহর বন্দনা হয়েছে অজস্র ধারা ঝরনার মত।
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়,মহাবিদ্যালয়, প্রধান সরণী, ভাস্কর্য সহ নানাভাবে সম্মানিত।
পশ্চিম বঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর, প্রধান সরণী,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ভাস্কর্য, মিলনায়তন হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসাবে সেটা ছিল ১৮৯৯ সালের ২৪ মে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া।
অভাবী পরিবারে বেড়ে ওঠা এ প্রতিভা জীবিকার তাগিদে সম্পৃক্ত হয়েছেন নানা পেশায়। লেটো দলের বাদক, রেল গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের শ্রমিক—নানারকম পেশা বেছে নিয়েছিলেন শৈশব ও কৈশোরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছেন। শাসকের কোপানলে পড়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন। করেছেন সাংবাদিকতাও। এই সময়গুলোতেই কালি ও কলমে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছেন তিনি।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আর্বিভাব একেবারেই উল্কার মতো। বাংলা সাহিত্যে আর্বিভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনও গবেষণা হচ্ছে দেশ-বিদেশে।
সংগীত বিশিষ্টজনদের মতে, রবীন্দ্র পরবর্তী নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। অধিকাংশ গান সুরপ্রধান। বৈচিত্রপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবিকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্টে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
আপনার মতামত দিন: