SAHA ANTAR

Published:
2021-04-29 19:24:05 BdST

কবি শঙ্খ ঘোষের স্ত্রী প্রতিমা ঘোষের আর দেরি সইলো না


অন্তর সাহা
------------------------
কবি শঙ্খ ঘোষের স্ত্রী ও সহপাঠী প্রতিমা ঘোষের আর দেরি সইলো না। মহাপ্রস্থানের পথে তিনিও পাড়ি দিলেন, যেন স্বামীর হাত ধরেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠী ছিলেন দু'জন । তারপর দীর্ঘ এক সহজীবন। তারপর রিলে কাঠি ধরে চলে যাওয়া অতিমারীতে। 

অনির্বাণ  কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুর আট দিনের মাথায় চলে গেলেন তাঁর সহধর্মিণী প্রতিমা ঘোষ। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে তিনি কলকাতায় তাঁরই বাসভবনে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

২১ এপ্রিল ভোরে কবি শঙ্খ ঘোষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতার নিজ বাসভবনে মারা যান। তখনই তাঁর স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। ১৪ এপ্রিল কবি ও তাঁর স্ত্রীর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু শঙ্খ ঘোষ চাননি বাড়ির বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে। তাই করোনায় আক্রান্তের পর কবির বাড়িতে আইসিইউর পরিকাঠামো তৈরি করে সেখানে চিকিৎসা চলে। পরে তিনি মারা যান।
সারা জীবন অনাড়ম্বরভাবে জীবন যাপন করেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ আর তাঁর স্ত্রী প্রতিমা ঘোষ। প্রতিমা ঘোষও নিজ বাড়িতে নিভৃতবাসে থেকে চিকিৎসা নিয়ে অবশেষে আজ ভোরে মারা যান। প্রতিমা ঘোষের জন্ম জলপাইগুড়িতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শঙ্খ ঘোষের সহপাঠী ছিলেন প্রতিমা। তিনি লেখিকা ছিলেন। তাঁর লেখা বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিমা ঘোষ কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে (মর্নিং) অধ্যাপনা করেছেন।

কবি শ্রী জাত বন্দোপাধ্যায় শোক এপিটাফ এ লিখেছেন, 

Srijato Bandyopadhyay
1tSposnessonhred ·
শঙ্খবাবু চলে যাবার পর আমি আর দূর্বা কেবল এই আলোচনাই করছিলাম যে, কীভাবে আবার ফিরে যাব ওই বাড়িতে? কীভাবে আবার ফটক পেরিয়ে ঢুকব রোদ ঝলমলে বাগানঘেরা আবাসনের পথে, কীভাবেই-বা আবার বহুচেনা বাড়িটির চওড়া লাল সিঁড়িতে পা রাখব, আর কেমন করে ‘মিঠি/টিয়া’ লেখা দরজা ঠেলে ঢুকব সেই বসার ঘরে, যেখানে অজস্র বইয়ের মাঝখানে বসে আড্ডা দিতেন শঙ্খবাবু?
সবকিছুইরই দাম দিতে হয়, তেমনই স্মৃতির দাম যন্ত্রণা। এবার তো ও-বাড়িতে যেতে গেলে সেই যন্ত্রণার সামনে দাঁড়াতে হবে। দেখতে হবে, বসার ঘরটা ফাঁকা, তোয়ালে ঢাকা ওঁর কেদারাটি শূন্য। এমন দৃশ্য আগেও দেখেছি, কিন্তু অপেক্ষায়। লিখছেন হয়তো ভিতরের ঘরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধীর পায়ে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছেন আমাদের সামনে। সেই এসে দাঁড়ানো আর হবে না। শত ব্যস্ততায় বা অসুস্থতায় একবারের জন্যেও ভোলেননি দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে, যখন ফিরে আসতাম আমরা। সেই এগিয়ে দেওয়াও থমকে গেল। এত এত অনুপস্থিতিতে মেনে নিয়ে কীভাবে যাব আবার, ঈশ্বরচন্দ্র নিবাসের ওই দরজায়? এই আলোচনাই করছিলাম। আর বলছিলাম নিজেদের মধ্যে, যন্ত্রণা সহ্য করেও যেতে হবে। যেতে তো হবেই। কেননা প্রতিমাদি রইলেন। আমাদের সব আড্ডার সঙ্গী তিনি নন, কিন্তু আমাদের সমস্ত অত্যাচারের প্রশ্রয়ী তো বটেই। ভিতরঘরে বসে থাকা, আড্ডা থেকে সর্বদা একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা, শঙ্খবাবুর চেয়েও স্বল্পভাষ, স্মিতহাস এই মানুষটির জন্যেই ফিরে যেতে হবে ও-বাড়িতে। তাঁর একাকীত্বের সামনে আমাদের নিঃস্বতা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্যেই ফিরে যেতে হবে।
সেই প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছিলাম মনে মনে। তাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আজ চলে গেলেন প্রতিমাদিও। জীবনসঙ্গী’র বিদায় থেকে আট দিনের দূরত্বে ছুটি নিলেন, যেভাবে আড্ডা বা জটলা থেকেও রাখতেন সামান্য দূরত্ব, সেভাবেই। আমাদেরও মুক্তি হলো। ও-বাড়িতে যেতে হবে না আর। দিনের আড্ডায়, সন্ধের লেখা দেখানোয়, কক্ষনও যেতে হবে না। এমনকী প্রতিমাদি’র খবর নিতেও নয়। বইয়ে ঠাসা কয়েকটা ঘর, পায়চারির দাগ লাগা একটা মেঝে, লেখার ভার নেওয়া একটা টেবিল আর কিছু খোলা জানলা পড়ে থাকবে। আসুক, আলো হাওয়া আসুক। ওদেরই আড্ডা হোক এবার, ওই বাড়িঘর...।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়