Dr. Aminul Islam

Published:
2021-04-21 17:33:28 BdST

রবীন্দ্র সঙ্গীত , হাই সঙ্গীত এবং অন্যান্য



অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
বাংলা দেশের স্বাস্থ্যাচার্য
------------------------------------

এক সময় খুব ছোট বেলায় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখতে হয়েছিল যেহেতু আমি খুব ছোট বেলায় ছিলাম শান্তিনিকেতনে পাঠ ভবনে ছাত্র তাই গান , নাচ আঁকা শেখা হয়েছিল ।
তখনকার পাকিস্তানে ফিরে এর তেমন চর্চা ছিলনা , বাসায় মায়ের কাছ থেকে রবীন্দ্র প্রভাব, কিন্তু আর চলেনা।
এক সময় মনে হয় ১৯৬৫ এর দিকে সিলেট বেতারে অডিশন দিতে গেছি , বন্ধুরা ধরে বেঁধে পাঠিয়েছে দেখি সুবির নন্দীও অডিশন দিচ্ছে । খুব ভাল গায় । আমাকে ডাকা হল। আমি গাইলাম " প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন" রবীন্দ্র সঙ্গীত ।
আমার গান শেষে আমাকে ডেকে পাঠা লেন । বললেন দেখ বেশ গলা ভাল তোমার একটা আধুনিক গাও । রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ । জানলাম তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের নাতি ওস্তাদ আয়েত আলি। যা হোক ব্যাপার হল পাকিস্তান সরকারের নির্দেশ । তুমি একটা আধুনিক গাও। আমি বললাম আমি ত পারিনা। যা হোক গাও । আমি আর কি করি আবার গাইলাম রবীন্দ্র সঙ্গীত " এই করেছ ভালো , নিঠুর হে"
তারা কিছু বললেন না । কিন্তু আমাকে নির্বাচন করলেন । রেডিও আর্টিস্ট হয়ে গেলাম । কিন্তু কি করি?
তখন সিলেটে ছিলেন সুরসাগর প্রানেশ দাসের ছেলে প্রনব দাস আমার বন্ধু , চমৎকার একরডিয়ান বাজায় আবার গানে সুর দেয় । ভারতের ভি বালসারার কাছে শিখেছে । আমাকে বল্ল আমি শিখিয়ে দেব ,কিছু আধুনিক আমার তালিম শুরু হল । কয়েকটি প্রোগ্রাম করলাম কিন্তু মন খারাপ হয়ে গেল । ছেড়ে দিলাম বলা যায় গান আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল।

যা হোক আরেক কাহিনী
আমরা আজিম পুরে যে বাসায় ৪৩/আই এর পাশের ফ্লাটে থাকতেন অধ্যাপক আব্দুল হাই , ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় । পরে সেই ফ্লাটে এলেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ ।
যাহোক , একদিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান তাকে ডেকে পাঠালেন বললেন কি করেন হাই সাহেব , রবীন্দ্র সঙ্গীত লেখতে পারেন না
তিনি বলেন তাহলে এটা হবে হাই সঙ্গীত ।
পাকিস্তান আমল আর বাংলাদেশ আমল যে কি তফাত এখনকার প্রজন্ম বুঝবেনা । কিছু বাংলা ভাষী প্পাকিস্তানি শাসকদের তোষণ করে ছিটে ফোঁটা পেয়েছে , বাংলাদেশের হিস্যা পাকিস্তানে ফেরত দিয়ে বাহবা পেয়েছে আর তমঘায়ে খিদমত , নিশানে পাকিস্তান এসব খেতাব পেয়েছে\আর নিজ দেশের মানুষদের বঞ্চিত করেছে এরাই আবার পাকিস্তানি জান্তাকে উৎসাহিত করেছে গন হত্যা , ধর্ষণ লুট করতে আর বুদ্ধিজীবীদের চিনিয়ে দিয়েছে । আমরা সব ভুলে যাই ।
আমরা কত বঞ্চিত ছিলাম আর এখন যে কতো সুযোগ তা তারা কি করে বুঝবে ।তবু এই দেশ কে নিয়ে কত অন্যরকম ভাবনা আর অনেকে হয় বিভ্রান্ত ।

এর পরে আমি তখন বিলেতে । আশির দশক । সেন্ট খমাস হাসপাতালে কাজ করি।
বাঙালি কমুনিটি স্থির করলেন অনুষ্ঠান হবে স্বাধীনতা দিবসে । আয়োজন হল । সমবেত সঙ্গীত । আর অনেকের সাথে আমারও একটা সোলো , বহুদিন পর গানের জন্য ষ্টেজে। না করা গেলনা । আমার জন্য নির্বাচিত হল , " আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে" রিহারসেল শুরু কিন্তু হাই কমিশন খবর পাঠালেন এই গান গাওয়া যাবেনা আপত্তিকর শব্দ আছে । বোঝা গেল । বোঝা গেল । আমি ভয় পেলাম বাংলাদেশেও রবীন্দ্র সঙ্গীত আবার ব্যান নাকি ? যাক তা না আরেকটি গান নির্বাচন হল " ও আমার দেশের মাটি ।"
এর পর অবস্থা বদলেছে কিন্তু আগামিতে কি হবে জানিনা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়