ডাক্তার প্রতিদিন
Published:2021-04-11 14:59:25 BdST
জি জেনারেশন, ব্রাউন প্যারেন্টিংএর ধমক ধামকি : যা করণীয়
ডা: ডালিয়া সাঈদা
কানাডা থেকে
-----------------------------
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ানরা বা ব্রাউন প্যারেন্ট রা, আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের ভাবাদর্শে মানুষ করতে চাই, আমরা ভুলে যাই ওরা জি প্রজন্ম, ওদের ধমক দিয়ে বা কঠোর হয়ে শাসন করতে গেলে, হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনাই প্রবল থাকে;
জি জেনারেশন মোর কনফিডেন্ট দেন এক্স; আমাদের উচিত ওদের মানসিকতা বুঝে ওদের বিশ্বাসের মূল্য দেয়া, ওদের জেনারেশনের ভাবনাগুলোকে সম্মান করা; ওদের গুডউইলের জন্য ওদের উপর বিশ্বাস রাখা, ওদের ইমোশনাল হেল্থ তথা মানসিক হেল্থের পাত্তা দেয়া।
কিভাবে? কমিউনিকেশন গ্যাপ সিল্ড করে, কাউন্সেলিং, কনভার্সেশন আর কোয়ালিটি টাইম দিয়ে; ওদের চ্যালেন্জগুলো কে নিজের চ্যালেন্জ মনে করে;
এক্ষেত্রে কমিউনিকেশন গ্যাপ বিশাল অংশে দায়ি; আমরা ভাবি, আমাদের বাচ্চার সাথে আমাদের কোন গ্যাপ নেই;
আছে, চব্বিশ ঘন্টার মাঝে কত ঘন্টা আমরা, আমাদের বাচ্চার সাথে এক টানা কথা বলতে পারি? যদি না পারি, তবে এটাই কমিউনিকেশন গ্যাপ।
আমরা ইউজুয়ালি কি কথা বলি; যেমন, ভাল আছো? কেমন আছো? তোমার দিন কেমন গেল? কি খেলে? কোথায় গিয়েছিলে? কি খাবে? নাস্তা করেছো? পড়াশোনা কেমন হচ্ছে ? সবকিছু ঠি ক আছে? স্কুলে গিয়েছিলা? কোচিং এ গিয়েছো? বাসভাডা আছে? লান্চের পয়সা? এররমক হাজারো সব পারপাসিং বা লেকচারিং টাইপ কথা;
সন্তান তো আমার কাছে, পারপাসিং বা লেকচারিং শুনতে চায় না; সন্তান চায় কোয়ালিটি টাইম।
আমরা কয়জন বুঝি কোয়ালিটি টাইম কি?
যখন বাচ্চা আর প্যারেন্ট, সকলেই ঐ সময়টা এনজয় করবে, এবং তেমনি আরেকটা এপিসোড অব টাইমের, জন্য সন্তান এগারলি, অপেক্ষা করবে, সেটাই হবে কোয়ালিটি টাইম;
চব্বিশ ঘন্টায় দশ মিনিট ও আমরা সন্তানের সাথে সেভাবে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করি না, বা করার টপিক পাই না, পারপাসিভ টক ছাড়া।
বন্ধুর সাথে তো, সময় গডিয়ে ঘন্টার হিসেবই থাকে না; দুজনেই এনজয় করি মূহুর্তটা। এটাই কোয়ালিটি টাইম;
বাচ্চারা ভাবে বাবা মা ওল্ড ভার্সন, তাদের ব্যাপারটা বাবা-মা বুঝবে না, বা সহজ ভাবে নিবে না, বা তারা শুনে কষ্ট পাবে,
আরো সহজ করে ব্যাপারটা বলি;
বাচ্চার হয়তো কোথাও লাইকিং আছে,
অথবা, বাচ্চা ইন্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল পড়তে চাচ্ছে না,
চান্স পেয়েছে কোয়ালিফাইড হয়েছে তারপরেও বাচ্চা শান্তির জীবন চায় বা এক বছর ইয়ার অফ চায়;
নিজের মত নিজের ঝামেলাহীন এডুকেশন চায়, শান্তি চায়।
আমরা মা-বাবারা তখন, ওদের মানসিক ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে, সোসাইটি তে মুখ দেখানো নিয়ে ভাবি, ওদের ইচ্ছাকে জলান্জলি দিয়ে, নিজেদের ইচ্ছেটাকে ওদের উপর চাপিয়ে দেই;
অথবা, বাচ্চা কোর্স আউট হয়েছে, ওপেন হতে পারছে না; বিষন্নতায় ভুগছে, মেন্টাল হেল্থ নিয়ে স্ট্রাগল করছে, পাত্তা দেই না; বলি সময়ে ঠি ক হয়ে যাবে;
যেটা ঘটেছিল কানাডায়, জামানের তিন জেনারেশন হত্যা করার বেলায়; টেক্সাসে সাথে অবশ্য যুক্ত ছিল সহজলভ্য উইপনও।
টিনএজ সন্তান নিয়ে ইমিগ্র্যান্ট হলে, অনেক বৈরি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়; ইমিগ্রেশন একটা বিশাল ব্যাপার, শিকড় উপড়ে ফেলে নতুন শিকড়ের সার্চ;
বয়সন্ধিকালে বাচ্চাদের হরমোন সার্জ হতে থাকে,
ব্যাক্তিত্বের ফুটি ফুটি করে অনেকটাই বিকাশ হয়ে যায়; তৈরি হয় নিজস্ব ভুবন, আইডেনটিটি;
ঐ বয়সটায়, ওদের মাত্র শিকড গেডে ছডিয়ে বসা, চেনা চারপাশটা থেকে, ওদের কে উপড়ে ফেলে, নতুন পরিবেশ নতুন জায়গায় অভিযোজন করতে বলা, ওদের জন্য বেশ কষ্ট হয়;
নতুন পরিবেশে ওদের চারপাশটা তখন শূন্য হয়ে যায়, প্রবল ভাবে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর কালচারাল শকে ভুগে, নিজেকে নীরবে চারপাশ থেকে গুটিয়ে নেয়;
অনেকেই বিষন্নতায় ভোগে, আর তা প্রকাশ ঘটায় বাবা-মা র উপর রাগ, অভিমান বা ননকোঅপারেশনের মাধ্যমে, অনেকের মাঝে সুইসাইডাল টেনডেনসিও প্রবল থাকে।
আমার টিনএজ মেয়েকে নিয়ে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে, আমারও অনেক বেগ পেতে হয়েছে;
ওকে কোয়ালিটি টাইম দিয়ে, ওর ইচ্ছের মূল্যায়ন করতে গিয়ে, ধীরে ধীরে আমাকে হতে হয়েছে অসামাজিক, আমার মেয়ে হয়েছে একটু একটু করে সামাজিক;
ভাগ্যিস ড্রাইভিং টা পারতাম, ও গ্যাদারিং পছন্দ করতো না; দূরে কোথাও লং ড্রাইভে, যেতে যেতে লাউড় ভলিউমে গান শুনতে পছন্দ করতো ও,
লেকের পাডে ঘুরতে চাইতো, পরিবারের সাথে সিনেমা এনজয় করতো, গুগল করে, নতুন নতুন খাবার তৈরি করা শিখতে চাইতো, সারাক্ষন কোয়ালিটি টাইম দিয়ে, বন্ধুর মত ছায়া হয়ে থেকেছি; হয়তো উপরঅলা প্রসন্ন ছিল;
ইমিগ্র্যান্ট প্যারেন্টরা ভাবে, বাচ্চার সাথে ল্যাংগুয়েজ ব্যারিয়ার, বিরাট ইমপেক্ট রাখে কমিউনিকেশন গ্যাপে, যা একেবারেই সত্যি নয়; এটা প্যারেন্টস দের একটা ভুল ধারনা।
কমিউনিকেশন গ্যাপ প্রবলেম আছে, কিন্তু সেটা ভাষায় না কনটেন্টে। তারা কনটেন্টের ব্যাপারে ক্লিয়ার না; লুকোচুরি থাকে তাদের, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্তের কনটেন্টের কনসেপ্টে।
মনে রাখতে হবে, content of the communication is main barrier not the language. Content of the communication gap is the huge gap.
বিদেশে জন্ম নেয়া বা বেড়ে ওঠা, ইমিগ্র্যান্ট সন্তাানদের, ঘরে বাইরে প্রতিনিয়ত, বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়;
অনেক চ্যালেন্জিং ইস্যুর মধ্য দিয়ে, তাদের এগুতে হয়;
আছে কালচার, রিলিজন, ল্যাংগুয়েজ আর বিলিভের ঘরে বাইরে অসামন্জস্যের চ্যালেঞ্জ; আছে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর প্রতি পদক্ষেপে কালচারাল শকের চ্যালেন্জ:
বাচ্চাদের সে সব দেশের নাগরিক হয়েও, বাংলাদেশের কালচার ফলো করতে হয়; এটা যেন জলেই ডুবে আছে, কিন্তু ভিজবে না টাইপের হাস্যকর কিছু; যা ওদের মনোজগতে প্রবল ভাবে ছাপ ফেলে; তারা তো ঐ দেশের ই নাগরিক, এ কথাটা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই।
এই চ্যালেঞ্জ টাও সচেতন ভাবে ওভারকাম করা যায় কোয়ালিটি টাইম দিয়েই।
মনে রাখতে হবে মেন্টাল হেল্থ একটা হিলিং প্রসিজুর; ট্রমা শুধু ওষুধেই সারে না। কাউন্সেলিং, কনভার্সেশন, কোয়ালিটি টাইম ও লাগে, খুবই লাগে; এওয়ারনেস এন্ড এজুকেশন অব মেন্টাল হেল্থের, আসলেও কোন বিকল্প নেই;
এ সমস্যা পারিবারিক না; এ সমস্যা সামগ্রিক; এ সমস্যা সামাজিক; সমাজের অস্হিরতার ছাপ পরিবারে এসে পড়ে; ভিকটিম হয় কোমলমতি সন্তানেরা; কোন কোন সময় আমরা ও হারাই নিজেদেরকে,
নাড়ী ছেঁড়া কলজের করাল থাবায়;
এখনই সময়, সচেতন হয়ে সমাজ, তথা পরিবার তথা সন্তান দের কে রক্ষা করি সুইসাইডের করাল গ্রাস থেকে; সাথে আমাদেকেও হোমিসাইডের অভিশাপ থেকে, নইলে, নগর পুডলে দেবালয় কি বাঁচেবে !!
ডা: ডালিয়া
( প্রফেসর এনাটমি; পাবলিক হেল্থ বিশেষজ্ঞ, মেন্টাল হেল্থ এত্সপার্ট ও রিসার্চার, জেরোন্টোলোজিস্ট)
এম ২৭
টরন্টো, কানাডা।
আপনার মতামত দিন: