SAHA ANTAR
Published:2021-03-18 15:47:45 BdST
প্রতি মিনিটে আমরা ২০,০০০ কিমি ভ্রমণ করে থাকি
রাজিক হাসান
লন্ডন থেকে
-----------------------------
আমরা কেউ স্থির নই। আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি প্রতি সেকেন্ড ২২৫ কিমি বেগে নিজের কেন্দ্রে ঘুরছে, এবং সেকেন্ডে ৩০৫ কিমি বেগে মহাশূন্যে ছুটে চলেছে। দুটো গতিবেগ যোগ করলে হয় ৫৩০ কিমি প্রতি সেকেন্ড। তাই এক মিনিট সময়কালে আমরা প্রায় ২০,০০০ কিমি ভ্রমণ করে থাকি।
পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্র সৈকতে যত বালুকণা আছে আমাদের ইউনিভার্সের নক্ষত্রর সংখ্যা তার থেকেও বেশী। প্রায় দশ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন স্টার অর্থাৎ নক্ষত্র আছে। সংখ্যায় প্রকাশ করব? এই যে ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০।
আশা করি সব পরিষ্কার বোঝা গেল। ????
ইউনিভার্সের দশ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন নক্ষত্রের মধ্যে যদি ১% এও পৃথিবীসম গ্রহ থাকে তা হলে বলতে হবে আমাদের ইউনিভার্স জীবনে পরিপূর্ন।
হয়তো একারণেই দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন - " পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্র নয় এবং সম্ভবত মানুষ তার উদ্দেশ্যও নয় "।
অর্থাৎ ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে মানুষের একটা প্রাথমিক ধারনা গড়ে ওঠার পর এখন আর এটা ভাবার অবকাশ নেই , সৃষ্টির কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে আমাদের ' পৃথিবী ' কে ।
মজার ব্যাপার সকল ধর্মের মূল কার্যক্রমই কিন্তু এই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে দেখানো হয়েছে। বিশ্বব্রহ্মান্ডের আর কোথাও ধর্মের উপস্থিতি আছে বলে জানা নেই। যদি থেকেও থাকে তবে তা পৃথিবীতে বিদ্যমান ধর্মগুলোকে তাত্ত্বিকভাবে নাকচ করে দেবে।
এবার অন্য একটি প্রশ্ন বিবেচনা করি, মহাজগতের কোনো বস্তু বা শক্তির উদ্দেশ্য থাকা সম্ভব কি? উত্তর হল, না। কারণ বস্তু বা শক্তির উদ্দেশ্য থাকলে তাকে ' মনবিশিষ্ট ' হতে হবে। উদ্দেশ্য যদি থাকে তবে সেই বস্তু বা শক্তির ভেতর কোন না কোন ' ইচ্ছা ' আরোপ করতে হবে যেন সে মনবিশিষ্ট হতে পারে। কারণ আমরা জানি ' ইচ্ছা ' যুক্ত হয় বলেই ' উদ্দেশ্য ' তৈরি হয় । ' ইচ্ছা ' বাদ দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ' উদ্দেশ্য ' অবস্থান করতে পারে না। অর্থাৎ সত্য এই, বস্তু বা শক্তি কখনো মনবিশিষ্ট হতে পারে না। তাই এর উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা থাকতে পারে না।
যেমন আগুন শক্তির এক ধরনের প্রকাশ। আগুন কোনো ইচ্ছা দ্বারা তাড়িত না হয়েই অগ্নিকান্ড ঘটায়। আগুনের ইচ্ছাতে অগ্নিকান্ড ঘটেনা। অগ্নিকান্ড ঘটানো আগুনের উদ্দেশ্যও নয়। অর্থাৎ আগুনের ভেতর পোড়ানোর ' শক্তি ' আছে সত্যি, কিন্তু আগুনের ভেতর কোন কোন ইচ্ছা বা মন নেই। তাই আগুনের কোন উদ্দেশ্যও নেই।
কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ইচ্ছা, মন ও উদ্দেশ্য বিশিষ্ট ঈশ্বরের অস্তিত্ব দাবী করে। এখন প্রশ্ন হল ' সর্বশক্তিমান ' হিসেবে ' ঈশ্বর ' কে দাবি করা হয় , সেই শক্তি ' মনবিশিষ্ট ' হয় কীভাবে?
আবার ঈশ্বরের যদি মনই না থেকে, চিন্তা করতে স্বক্ষম স্বত্বা যদি ঈশ্বর নাই হন তাহলে তার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা কীভাবে দেয়া হবে?
বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর মতামতে বলেছেন --- " উদ্দেশ্য এমন এক ধারণা যা বৈজ্ঞানিক চিন্তায় অপ্রয়োজনীয় "।
তাই আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোতে "প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম" মানুষের কাছে তার মৌলিক সংজ্ঞা হারিয়েছে। দিন দিন তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। এমনকি পৃথিবীতে বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম গুলোর মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রবল। এগুলো কোনোটাই ধর্ম নাকি অধর্ম তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ধর্মকে ভাববাদী দার্শনিকতা দিয়ে বিচার করে আজ পরিস্থিতির এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির হয়েছে। অসংখ্য ধর্ম এবং অসংখ্য দর্শন। সনাতন ধর্মগুলো এক প্যাটার্নের, আর আব্রাহামিক ধর্মগুলো আরেক ধরনের।
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল বস্তুবাদী ধারার। বস্তুবাদ বহু আগে ভাববাদী দর্শনকে পরাজিত করে বসে আছে। তবে দর্শনের মজাটা এই, এখানে চট জলদি কোন সিদ্ধান্ত নেবার তাড়া থাকেনা। এখানে কোন একটা ভাবনার সূত্রপাত হয় তারপর সেই ভাবনাকে এগিয়ে নেয়া। বহু আঙ্গিকে, বহু মাত্রায়।
আপনার মতামত দিন: