SAHA ANTAR

Published:
2021-02-28 14:54:21 BdST

কাজী নজরুল ও শিবরাম চক্রবর্তী যখন জেলখানায় একসঙ্গে


 

 

রাজিক হাসান, লন্ডন থেকে 

_________________________

শিবরাম চক্রবর্তী তখন যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক হয়ে ইংরাজ সরকারের বিরুদ্ধে লেখা ছাপিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে স্থান করে নিয়েছেন। প্রেসিডেন্সি জেলের অখাদ্য লপসি খেতে খেতে তার মন মেজাজ দুই খারাপ। এমন সময় তার বহরমপুর জেলে বদলি হবার নির্দেশ এলো। শিবরাম শুনেছিলেন বহরমপুর জেল হল পাগলদের জন্যে। তাই জেলারকে ডেকে বললেন, স্যার, আমি কি তবে পুরো পাগল হয়ে গেছি। জেলার শুনে বললেন, না না তা কেন, ওখানেও সব বিশেষ রাজবন্দী্রাই থাকে। কাজী নজরুল ইসলা্মও এখন ওখানেই বন্দী আছেন। জেলারের কথা শুনে শিবরাম আনন্দে আত্মহারা। তাহলে কাজী সাহেবের সাথে তার নিশ্চই দেখা হবে।

ওই সময় বিপ্লবীদের কাছে মস্ত এক আনন্দের বিষয় ছিল, জেলে কাজী নজরুলের সঙ্গ পাওয়া। তার কারণ ঠিক কি তা শিবরাম জানতেন না। জানলেন সেই জেলে যাওয়ার পর।

সেখানে যাবার সাথে সাথেই কাজী সাহেবের অভ্যর্থনা, “লে হালুয়া, দে গরুর গা ধুইয়ে”।

প্রথম আপ্যয়নেই শিবরামের দিলখুশ। আর তার পরেরদিনই বুঝে গেলেন, সারা জেলখানাতেই কাজীর রাজত্ব। সারাদিন গান, কবিতা, হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডায় কাজীসাহেব মাতিয়ে রাখেন সবাইকে।

শিবরাম ছিলেন বড় কুঁড়ে প্রকৃতির। খাওয়া আর শোয়া এই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য।

মস্ত একটা হলঘরে সার সার লোহার খাট পাতা। খাওয়াদাওয়ার পর নিজের জন্য নির্দিষ্ট খাটে শিবরাম হয়তো একটু শোবার ব্যবস্থা করছেন, অমনি কাজী সাহেব এসে হাজির। “আরে দূর ভায়া এখন শোবে কী! চলো চলো গানবাজনা হবে”। বলে টেনে নিয়ে যেতেন।কাজী গান ধরতেন, আর বন্দী শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনতেন।

শুধু নিজের গান নয়, একের পর এক রবীন্দ্রসংগীতও গাইতেন নজরুল। এমন কি রবি ঠাকুরের গানের প্যারোডিও করতেন। যেমন, ‘তোমারই গেহে পালিছ স্নেহে’র তিনি প্যারোডি করেছিলেন, ‘তোমারই জেলে পালিত স্নেহে, তুমি ধন্য ধন্য হে’।

কিন্তু শুধু গান আর কবিতা শুনে কাজীতে মজেননি রসনাবিলাসী শিবরাম।

নজরুলের প্রতি গদগদ হবার যে মস্ত কারণ ছিল, তা হল, জেলখানার রাজবন্দীদের জন্য খানাদানা নিজের হাতে রান্না করতেন নজরুল। অল্প বয়সে কোথায় যেন বাবুর্চির করেছিলেন বেশ কিছুকাল। সেখান থেকেই মোগলাই খানা বানানো শিখেছিলেন আর জেলে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে সে সব রান্না করতেন। সে এক এলাহি ব্যাপার। কী অপূর্ব সে সব রান্নার স্বাদ।
শিবরামের নিজের ভাষায়, “মনে পড়লে এখনও জিভে জল সরে।

নিজেকে সজিভ মনে করি। আর জেলখানার সেই খানা...আহা, আমি তো বহরমপুর জেলে যাওয়ার আগে টিঙটিঙে রোগা ছিলাম। তারপর দুইবেলা কাজীর খানা খেয়ে এমন মোগলাই চেহারা নিয়ে বেরলাম যে আর রোগা হলাম না। জেলখানায় আর জেলের খানায় গড়া এই চেহারা এতটুকু টসকায়নি”।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়