SAHA ANTAR

Published:
2021-02-25 05:28:50 BdST

মফিজ সাহেবের হজ্ব


 

লেখক এর ছবি 

ডা এহসান আলম 

______________________

ফজরের নামাজ শেষে
ঝুল বারান্দায় বসে তসবি টিপছে মফিজ সাহেব। বাসা ছেড়ে পাখিরা কিচির মিচির করছে রাত পোহানোর আনন্দে। ঘাসের আড়ালে লুকাতে না পারা পোকা মাকড় খেয়ে নিচ্ছে দোয়েল দম্পতি। কি একটা কালো পাখি, নাম জানেনা মফিজ সাহেব হঠাৎ উড়ে এসে দু তিনটে পোকা মুখে করে আম গাছটার ঘন পাতার আড়ালে অদৃশ্য হলো। হয়তো ছানাদের জন্য। এ যেনো মানব জীবনের এক নাটক ,পাখী পোকা মাকড় গাছ গাছালিরা অভিনয় করে দেখাচ্ছে। সে সৃষ্টি কর্তার খেয়ালীপনার কথা ভাবে , শোকর আদায় করে, আর তওবা পড়তে থাকে।

বড় সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন মফিজ সাহেব। অবসরে যাবার আগে সরকারী খরচে হজ্ব করে এসেছেন। হজ্বের পূন্য সরকারী কোষাগারে যাবে না নিজের হিসেবে আসবে এমন শিশু সুলভ ভাবনা যে তাকে পায়না এমন নয়। বার্ধক্যে মানুষ ফিরে যায় শৈশবের কাছে।

ঠিক করেছেন আগামী বছর আবার নিজের টাকায় হজ্ব করে আসবেন। নিজের অঢেল সম্পত্তি থাকতেও মনস্থির করেছেন পৈত্রিক সম্পত্তির ধানী জমিটা বিক্রী করেই হজ্ব করবেন এবার। বাবা তার ভূমি অফিসের সাব রেজিষ্ট্রার ছিলেন। তিনিও অনেক বিষয় সম্পত্তি করেছেন। তবে বিক্রী করতে চাওয়া জমিটা কৃষক দাদার থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া।

এসব ভাবনা ফালতু তিনি বোঝেন। তিনি ছাড়তে চাইলেও ভাবনারা তাকে মোটেই ছাড়েনা। আচ্ছা চাকুরী জীবনে তিনিতো কাউকে কষ্ট দিয়ে টাকা নেননি। পুলিশের মত পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে কাউকে হেনস্থা করেননি কিংবা ক্রশ ফায়ারের ভয় দেখিয়েও টাকা দাবী করেননি। লোকদের কাজের সুবিধা করে দিয়েছেন তারাইতো খুশী হয়ে দিয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে অফিস সহকারী সুকুমার রেটটা জানিয়ে দিয়েছে এই যা!
সময়ের সাথে ধারনাও কেমন পাল্টে যায়। এই সুকুমারটাকে তিনি খুবই বিশ্বাস করতেন। এখন ওর বিষয় সম্পত্তি দেখে মনে হচ্ছে হারামজাদা রেটের উপরেও বাড়তি রেট নিয়ে ঠকিয়েছে তাকে।

সরকারী টাকা এধার ওধার করেছেন ঠিকই তবে তা তো কোন ব্যক্তির বিষয় না। ব্যক্তিগত ভাবে কাউকেই তিনি কষ্ট দেননি মোটেই। এসব ভাবনার সময় একটা উপন্যাসের দুটো লাইন তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে যার মর্মার্থ এমন- মানুষ তার কর্মের পেছনে সব সময় যুক্তি খুঁজে নেয়। একজন খুনীও তার খুনের পক্ষে যুক্তি দাড় করায়।

তবে শেষ ভরসা সৃষ্টিকর্তার অসীম মহানুভবতা। বান্দার পাপ আসমান সমান হলেও নেক দেলে তওবা করলে ক্ষমা করার ঘোষনা দিয়েছেন তিনি। তাই সব সময় দোয়া দরুদ নিয়েই পড়ে থাকেন আজকাল। স্ত্রী তিন বছর আগে গত হয়েছেন। সন্তানেরা ভিন দেশে স্থায়ী ঠিকানা করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যও মোটামুটি ভালো। শুধু প্রস্টেট বেড়ে যাওয়ার কারনে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাথেটার দেয়া হয়েছে। উরুর সাথে ব্যাগ বাঁধা আছে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নাই। সুবিধাও আছে বার বার ওজুর ঝামেলা নাই। মনও এদিক ওদিক যায়না। এবাদতে একাগ্র মনোনিবেশ সহজ হয়েছে।

গত বছরে এতিম খানায় বেশ কিছু টাকাও দান করেছেন। এদেশটায় ধনীদের জন্য এটাই একটা বাড়তি সুবিধা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধনীরা পূন্য কেনার সুযোগ পায়। ইউরোপ আমেরিকা থেকেও পূন্যে বিনিয়োগের কোন ঘাটতি নাই। বেসরকারী পর্যায়ে এতিম পালন দীর্ঘস্থায়ী হোক। তবে এটাও যে গ্যারান্টেড তার ভরসা পাচ্ছেন না মফিজ সাহেব। তিনি যেখানে টাকা দিয়েছেন তার সুপারেন্টেন্ডন্ট নাকি শিশু বলাৎকারে গত সপ্তাহে জেল হাজতে। হুজুরের জন্য তার তেমন কোন চিন্তা নেই। তার স্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকীতে যেভাবে চোখের জল নাকের জলে একাকার করে দোয়া করেছেন তাতে এটা নিশ্চিত যে তিনি তার নিজের ক্ষমা আদায় করে নিতে পারবেন। কেন যেনো আজ শিশুটির মানসিক কষ্ট নিয়ে তার ভাবনা হচ্ছে।

আচ্ছা বকুল যে মেয়েটি তার বাসায় কাজ করতো গর্ভপাতের জন্য টাকা ধরিয়ে যাকে বাড়ীতে পাঠিয়েছ্লেন, পরে খবর পেয়েছিলেন মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাতো মহা পাপ। এতো ক্ষমার অযোগ্য। ভাগ্যিস ওর সাথে স্বর্গে দেখা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অন্য মানুষের সামনে তার কর্মের কৈফিয়ৎ চাইতে পারবেনা সেও মন্দর ভালো। তার তওবা পড়ার গতি আরও দ্রুত থেকে দ্রুততর হয় সে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে কান্না করতে থাকে।

ভাইজান ডাকে তিনি সম্বিৎ ফিরে পান। সেজদা থেকে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দেখেন সকালের নাস্তা হাতে লতিফা। লতিফা তার দূরসম্পর্কের এক অসহায় বিধবা আত্মীয়া যিনি পরম যত্নে আজকাল তার দেখাশুনা করেন।
নাস্তার প্লেট টেবিলে রাখতে রাখতে লতিফা বলে ভাইজান আপনার মত পরহেজগার মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। সব মানুষ যদি আপনার মত হইতো- বলতে বলতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে অন্দর মহলে চলে যায়।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়