DR> ZUBAYER MIAH

Published:
2021-01-08 00:59:40 BdST

করোনা নিয়ে করুণা নয় :আসুন সচেতন হই,স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি


 

ডাঃ মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া
_______________________

কোয়ারেন্টাইনঃ করোনা আক্রান্ত কোন দেশ ঘুরে আসার পর বা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার পর এই ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। সেই সব লোকদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ একটি ভবনে অথবা নিজ বাড়িতে সকল স্বাস্থ্যবীধি মেনে আবদ্ধ থাকাকে কোয়ারেন্টাইন বলে। সেই সময় সেই ব্যক্তির ব্যবহার করা টয়লেট, পোশাক, বিছানাপত্র, খাবার প্লেট, পান পাত্র যাবতীয় সবকিছু আলাদা থাকবে। সে বাইরে বের হবেনা কেউ তার সাথে দেখাও করবেনা। প্রয়োজনে তার কাছে অন্তত ৩ ফুট দূরত্বে থেকে মাস্ক ব্যবহার করে কথা বলতে হবে। অনেকে মনে করেন জ্বর, সরদি, কাশি নেই তবে কোয়ারেন্টাইনে কেন থাকতে হবে? কোয়ারেন্টাইনে সেই সব লোকদের থাকতে হবে কারন করোনাভাইরাসের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পরপরই তার শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়না। রোগ শরীরে প্রবেশ করার দুই থেকে চৌদ্দ দিনের মধ্যে এই উপসর্গ প্রকাশ পায়। এই সময়কে ইনকিউবিশন পিরিয়ড বলে।তাই কমপক্ষে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
আইসোলেশনঃ কারও শরীরে যদি করোনা ভাইরাস ইনফেকশনের লক্ষন প্রকাশ পায় এবং নমুনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ হয় অর্থাৎ কারও যদি করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে তবে তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই সময় অবশ্যই তাকে নিদি'ষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সেখানে যথেস্ট পরিমান নিরাপত্তা পোশাক (পিপিই) পরিধান করে চিকিৎসক, নাস', অন্যান্য সেবাদানকারীগন রোগীর পরিচর্যা করবেন। লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। এই মেয়াদ কমপক্ষে চৌদ্দ দিন। রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে এই মেয়াদ বাড়ানোও যেতে পারে। মনে রাখতে হবে সেই হাসপাতালে অবশ্যই আই সি ইউ(ভেন্টিলেটর সহ) ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কোয়ারেন্টাইন এ থাকাকালীন কিছু মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন উদ্বিগ্নতা, দুঃশ্চিন্তা, নিদ্রাহীনতা, বিষন্নতা, আচরণগত সমস্যা(খিঁট খিঁটে মেজাজ), মাদকাসক্তি, আত্মহত্যা ইত্যাদি।
এইসব প্রতিরোধে আমরা কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো। যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পুস্টিকর স্বাভাবিক খাবার, বেশি বেশি তরল খাবার, হালকা কুসুম গরম পানি পান করবো, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, চোখে মুখে হাত না লাগানো, সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, ইত্যাদি কাজগুলি করে যাবো।
এই সবের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থের উন্নতির জন্য নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করবো। ঘরে হাটি হাটি করবো।শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করবো ৫ মিনিট ধরে অন্তত দিনে তিন বার। যোগ ব্যায়াম, ইয়োগাও করতে পারি।
পছন্দের গান শুনতে পারি, নাটক দেখতে পারি, মুভি দেখতে পারি, ডকুমেন্টারি দেখতে পারি। এই সময় মনকে শান্ত রাখার জন্য প্রার্থনা, নামাজ একাকী পড়তে পারি।
করোনায় ভেংগে না পড়ে মোকাবেলার জন্য অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
প্রিয়জনদের সাথে মোবাইলে কথা বলতে পারি। ই মেইলে চিঠি লিখতে পারি। ফেসবুক মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে, ইমু, ভাইবারে ভিডিও কলে বন্ধু বান্ধব, প্রিয়জনদের সাথে কথা বলতে পারি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তিত করতে পারে এমন খবর দেখা, পড়া ও শোনা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছেন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে বেশী বেশী খবর পড়লে মানসিকভাবে আতংকিত হওয়ার আশংকা তৈরী হয়। তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাও অসম্ভব হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদিতে হ্যাসট্যাগ বা কি-ওয়ারড মিউট করে রাখা যায় যেন সেগুলি সামনে না আসে। অতিরিক্ত হাত ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। যাদের সূচিবায় (ওসিডি) রোগ রয়েছে তারা এমনিই পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত সতক' থাকেন। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রচারের কারনে তারা আরও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারেন। অনেক সময় সাবান ও স্যানিটাইজার ব্যবহার আসক্তিও হতে পারে। সেই দিকটিও খেয়াল করতে হবে।
পরিশেষে এই মহামারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে সবাই সাহায্য চাই। যেন খুব তাড়াতাড়ি আমরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি।

ডাঃ মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
মোবাইলঃ ০১৭১৬১৯৬৭৩৭

 

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়