Dr. Aminul Islam

Published:
2020-12-03 02:29:30 BdST

"বুদ্ধি" এবং "মেধার" পার্থক্য :বৈশ্বিক সম্পদ মেধাবীদের যত্ন নিন


 

 

ডা. অসিত মজুমদার  
______________________

বৈশ্বিক সম্পদ মেধাবীদের যত্ন নিই
জীবনের শুরুতেই।

মেধা বা প্রতিভা (ইংরেজিঃ Genius বা Talent) হচ্ছে ব্যক্তির অসাধারণ সৃজনীশক্তি, ব্যতিক্রমধর্মী বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট গুণাবলী বিশেষ। মেধাবী ব্যক্তি অন্তঃর্নিহিত ব্যতিক্রমধর্মী বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সক্ষমতা, সৃজনশীলতা অথবা জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে তাঁর মেধাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হন। মেধার সাহায্যে যে কেউ বিভিন্ন বিষয়ে সহজেই পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে, যদি সে মেধাকে সঠিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ পায়। মেধার সঠিক ব্যবহার শুধু যে ব্যক্তি জীবনে প্রভাব ফেলে তা নয়, বরং পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় তথা বৈশ্বিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রেই তার প্রভাব পড়ে। ফলে মেধাবীরা দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে থাকে বহুগুণ।

মেধা বিষয়টা আসলে অনেকটা বংশগত। বংশগতভাবে প্রাপ্ত এই মেধার বিকাশ নির্ভর করে অনেকটাই পরিবেশের উপর । কোনোকিছু বোঝার, শেখার বা স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাই মেধা। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত এই গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তি প্রতিভাবান হিসেবেই সমাজে পরিচিত। জনগণ পৃথক চিন্তা-চেতনায় কোন ব্যক্তির চাতুর্যতা, উপস্থিত ও তীক্ষ্ণবুদ্ধিকে প্রতিভারূপে আখ্যায়িত করে থাকে।মেধাবী ব্যক্তি গণিতে পারঙ্গমতা, বিজ্ঞানে অনন্য, আবিষ্কার বা উদ্ভাবনী শৈলী কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিভিত্তিক খেলাধুলা হিসেবে স্বীকৃত দাবা খেলায় বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শনে জাতি তথা বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করতে পারেন। এছাড়াও লেখালেখি, সঙ্গীত, শিল্পকলা, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি সৃজনশীল সুকুমার বৃত্তিতেও তিনি যথেষ্ট অবদান রাখতে পারেন।

প্রতিভাবান মানুষেরা মতবিনিময় ও সংলাপ করতে পছন্দ করে। তাঁরা ভাল স্মৃতিশক্তির অধিকারী নাও হতে পারেন। তাঁরা জন্ম থেকেই বেশি দার্শনিক চিন্তা করতে সক্ষম হন। তাঁরা জীবন ও মহাবিশ্ব নিয়ে জানতে যথেষ্ট ইচ্ছুক হয়। এঁদের চিন্তা ভবনা খুব দ্রুত ও আলাদা হয় তাই হাতের লেখা খুব খারাপও হতে পারে।

তবে প্রতিভার বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখ্যা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিভা শব্দটিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নির্দিষ্ট অনেকগুলো বিষয়ে দক্ষ অথবা শুধুমাত্র একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যেটাকে প্রাকৃতিকভাবে অর্জিত বলা যেতে পারে।

"বুদ্ধি" এবং "মেধার" পার্থক্য
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মেধা এবং বুদ্ধি শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক মনে হলেও এদের মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য, যদিও অধিকাংশ মানুষ তা গুলিয়ে ফেলেন। এই পৃথিবীতে সবাই মেধাবী হয়ে জন্মায় না, তবে সাধারণ সবার পক্ষেই বুদ্ধিমান হওয়া প্রায় সম্ভব। মেধা হচ্ছে এমন এক বৈশিষ্ট্য যা পাওয়া না পাওয়া সম্পূর্ণই নিজস্ব আওতার বাইরে, কিন্তু বুদ্ধি হচ্ছে এমন এক বৈশিষ্ট্য, যা যে কোন সাধারণ ব্যক্তি একটু যৌক্তিকভাবে চিন্তাশক্তির ব্যবহার এর মাধ্যমে অর্জন করতে পারেন।
আমি, আপনি চাইলেই আইন্সটাইন, নিউটন বা ব্যবেজ, সত্যেন্দ্রনাথ কিংবা সু্ব্রমোনিয়াম এর মত মেধাবী হতে পারবো না, কারণ ব্যাপারটা সম্পূর্ণই "গড গিফটেড"।

মেধার যত্ন
মেধাবীদের যে শ্রম দিতে হয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় কিংবা এই মেধার যত্ন নিতে গিয়ে যে অর্থ খরচ করতে হয় সে সবের প্রতিদানে সবকিছু ভোগ করার সুযোগ হয় কি তাঁদের? কিংবা তাঁদের আপনজনদের? মেধাবীদের এত কষ্টে অর্জিত সুফল কিন্তু পরোক্ষভাবে ভোগ করে পৃথিবীর আপামর জনসাধারণ। সেজন্য মেধাবীদের বেড়ে উঠা, যত্ন, লালন কিংবা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
একজন মেধাবী তাঁর মেধার যত্ন না নিলে প্রকৃতপক্ষে তাঁর ব্যক্তিগত কোন ক্ষতি নাই। কারণ সে জন্মিবে, ঢিলেঢালা জীবন কাটিয়ে প্রকৃতির নিয়মের খাতিরে একদিন ঢুপ করে মরে যাবে। তাতে তার ব্যক্তিগত কি ক্ষতি? জীবন তো চলেই যাবে প্রকৃতির নিয়মে! কিন্তু এতে সমাজের অসামান্য ক্ষতি হয়ে যায় । সমাজের এগিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয় মারাত্মকভাবে। অর্থাভাবে, উপযুক্ত গাইডের অভাবে কিংবা যথাযথ সুযোগের অভাবে বিনাযত্নে একটি মেধার অপমৃত্যু ঘটে যায়। সমাজ বঞ্চিত হয় আলোর মুখ হতে । মেধা হারিয়ে গেলে মেধাবীর ক্ষতি হয় না বরং চরম ক্ষতির স্বীকার হয় সমগ্র বিশ্ব। সমাজের পরবর্তী বংশধরেরা এগিয়ে যাওয়া হতে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকতে বাধ্য হয়। এসব মেধার অপমৃত্যু রোধ এই সমাজেরই কাজ। আসুন আমরা সকলে মিলে বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া কিংবা সুবিধাহীন এসব মেধার উপযুক্ত যত্নের মাধ্যমে প্রকৃত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে যথাযথ বেড়ে উঠার কাজটি সুচারুভাবে করি। কারণ আমাদের স্বার্থেই ভবিষ্যৎ পথ সুগম করার লক্ষ্যে মেধার লালন ও সংরক্ষণ করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।

লক্ষ্য আমাদের মেধাবীরা যাতে হারিয়ে না যায়।

ডা. অসিত মজু্মদার
সংকলিত, সংযোজিত এবং সম্পাদিত

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়