Dr. Aminul Islam

Published:
2020-11-19 18:30:56 BdST

এএসপি আনিসুলের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ডা. মামুনের মুক্তি দাবি এফডিএসআরের


 

বিজ্ঞপ্তি
__________________

সম্প্রতি মাইন্ড এইড নামের অনুমোদনবিহীন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত ডিসি তেজগাঁও এর এর সত্য উপেক্ষিত বক্তব্যে দেশ জুড়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পুলিশ কর্মকর্তার সত্যবিবর্জিত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং নিন্দা জ্ঞাপন করছি। দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে এধরনের পক্ষপাতমূলক বক্তব্য পুলিশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুন্ন করে।

যেহেতু নিহত আনিসুল করিম পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, সেহেতু আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, স্বার্থের দ্বন্দ্বজনিত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এমতাবস্থায়, ন্যায় বিচারের স্বার্থে এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি, এই ঘটনায় অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।

হাসপাতালে ঘটনার দিন কেবল একজন কর্তব্যরত ছিলেন না। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন ভোরে আনিসুল করিমকে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তার স্বজনরা মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে আসার সময়কালই প্রমাণ করে রোগির অবস্থা কতটা মারাত্মক ছিল, নইলে অত ভোরে তাকে হাসপাতালে নেবার প্রয়োজন হতো না। সেখানে রোগিকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করে ডা. মামুন তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করতে বললে সাথে অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে আসা রোগির বোন ও বোনজামাই ওয়ার্ডে থাকবেন না জানিয়ে কেবিনের ব্যবস্থা করবার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে কেবিন খালি না থাকায় রোগির জন্য কোন কেবিনের ব্যবস্থা করা যায় নি। উল্লেখ্য যে, মৃত এএসপি আনিসের বোন ও বোনের স্বামী, দুজনেই ডাক্তার। কেবিন না পেয়ে রোগির বোন রোগিকে বেসরকারী কোন ক্লিনিকে নিতে চান এবং সে ব্যাপারে ডা. মামুনের কাছে জানতে চান। ডা. মামুন তখন সুনির্দিষ্ট কোন ক্লিনিকের নাম না বলে আশেপাশের একাধিক ক্লিনিকের নাম বলেন। কিছুক্ষণ পর আবার রোগীপক্ষ রোগিকে পাশের মাইন্ড এইড নামক ক্লিনিকে ভর্তি করাবে জানিয়ে ডা. মামুনকে ক্লিনিকে বলে দিতে অনুরোধ করেন। যেহেতু রোগির আত্মীয় নিজে একজন ডাক্তার হিসেবে অনুরোধ করেছেন, তাই ডা. মামুন ফোন করে রোগিকে মাইন্ড এইডে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে মাইন্ড এইড প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে কয়েকজন মিলে এএসপি আনিসুল করিমকে মেঝেতে চেপে ধরা থেকে আমরা পরবর্তি ঘটনাসমূহ দেখতে পাই।

এমতাবস্থায়, আমরা জানতে চাই ঢাকা শহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাইন্ড এইডের মত ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমোদনে কিভাবে, কিসের বিনিময়ে, কাদের অনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছে? মানসিক কোন সমস্যায় আনিসুল করিমকে অত ভোরে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল? কি কারনে কোন পারিবারিক ও চাকুরিগত জটিলতায় তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন? সামান্য রেফারালের জন্য যদি ডা. মামুনকে হত্যার দায়ে গ্রেফতার করা হয় তবে যাদের ব্যবহারে তিনি এভাবে অসুস্থ হলেন, যারা মাইন্ড এইডের মতো অবৈধ প্রতিষ্ঠানকে চালু রাখতে দিয়েছেন তারা কেন হত্যার দায়ে আগে গ্রেফতার হবেন না? ন্যায় বিচারের স্বার্থে আনিসুল করিমের অসুস্থতার বিষয়ে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। কেন মৃত্যুর পরে আনিসুল করিমের ডাক্তার বোন ও বোনজামাই হঠাৎ করেই নীরব হয়ে গেলেন? মৃতের স্ত্রী ও সন্তান কোথায়?

যে কোন মৃত্যুই বেদনার। অনাকাঙ্খিত মৃত্যু আরো কষ্টের। আমরা পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং সঠিক বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের বিচার করা হোক, সেই দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মত, এই ঘটনায় নিরাপরাধ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তা ছাড়া, সরকারী চাকুরি আইন ২০১৮ এর ৪১ (১) ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত ডা. মামুনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ প্রচলিত আইন ভঙ্গ করেছে। আমরা আইনের প্রতি পুলিশের এহেন বেআইনী আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করছি। আমরা চাই, পুলিশের এই বেআইনী আচরণও আইনের আওতায় আসুক। এমনকি মেডিকেল নেগলিজেন্স সংক্রান্ত আইনেও কর্মরত ডাক্তারকে রেফারাল এর জন্য দায়ী করা যায় না। রেফার করার পরে রোগীর দায়িত্ব রেফার যেখানে করা হয়েছে তার বা সেই প্রতিষ্ঠানের। তারা যদি ভুয়া হয়ে থাকেন সেটা দেখার দায়িত্ব রেফার যিনি করেছেন তার নয় বরং সেটা আইনশৃংখলা রক্ষাকারীদের।

আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই, অনতিবিলম্বে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের মুক্তি দেওয়া হোক, অন্যথায় দেশের সকল চিকিৎসকরা মিলে আইনসংগত তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ডা. মামুনকে মুক্ত করে আনবে।

বিবৃতি প্রদানে-

অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন
চেয়ারম্যান
ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন
মহাসচিব

ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)

১৮ নভেম্বর ২০২০

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়