SAHA ANTAR

Published:
2020-10-08 16:14:57 BdST

ধর্ষণ নিয়ে আশ্চর্য তথ্য: উন্নত দেশগুলো ধর্ষণ প্রতিরোধে যা করছে


 

ডা. তারিক অনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে
_________________________

ধর্ষণ নিয়ে মাতামাতি। আমার বন্ধুদের বিশাল অংশের প্রোফাইল কালো হয়ে গেছে। সবাই “স্টপ রেপ” । এই সামাজিক সচেতনতা দেখে ভালো লাগছে।
তথ্য ঘাটাঘাটি করে একটা আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ্য করলাম।
২০২০ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১লক্ষ নাগরিকে প্রায় ৩০ জন ধর্ষিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়, নিউজিল্যান্ডে ২৮, যুক্তরাষ্ট্রে ২৭, ইংল্যান্ডে ২৭, অনেক ইউরোপীয় দেশেই সংখ্যাটা সমরূপ। বাংলাদেশে মাত্র ৮ জন।
আমাদের চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি ধর্ষণ পরিসংখ্যান নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সহ উপরেল্লিখিত দেশগুলো সামাজিক সুরক্ষায় বিশ্বের প্রথম সারিতে, আমরা হয়ে গেলাম ধর্ষণ নগরী! অদ্ভুত না ?
তাহলে শুভঙ্করের ফাঁকি টা কোথায়?
উত্তর: বিচারহীনতায়।
পরিসংখ্যান বলছে স্বাধীনতার পর থেকে এপর্যন্ত একটিও ধর্ষণ মামলার শাস্তি বাংলাদেশ সরকার কার্যকর করতে পারেনি। ধর্ষিতার মৃত্যুর ক্ষেত্রে কিছু রায় হয়েছে।
প্রচুর সাজেশন দেখছি, মেয়েদের পর্দা থেকে শুরু করে ছেলেদের নৈতিক শিক্ষা, পর্নোগ্রাফি বন্ধ, মাদক বন্ধ, বেকারত্ব দূরীকরণ, খোলা মাঠে ফাসি, মেয়ের সাথে মা থাকা, পরিবারের ভূমিকা ব্লা ব্লা, নারী কে ঘরে রাখার পর্যন্ত সাজেশন পর্যন্ত আছে। অনেকে আবার নারীকেই দায়ী করছেন! যে যেই বলুক, সবার হয়তো নিজস্ব যুক্তি আছে। তবে আমার মনে হয় এগুলা একটা করেও ধর্ষণ বন্ধ হবেনা, কমবেও না।
বরং শুধু বিচার টুকু করুন। দেখবেন ধর্ষণ বন্ধ হয়ে গেছে। দেখবেন ধর্ষক প্যান্টের চেইন খোলার সাহস ই পাচ্ছে না। যেরকম আমার সামনে দিয়ে বিকিনি পরা প্রচুর বেপর্দা বিদেশী তেতুল প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায়, তারপরও আমি তাদের উপর ঝাপিয়ে পরার কথা চিন্তা ও করিনা। কারণ .... নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। কে চায় বাকি জীবনটা জেলে পচে মরতে! এটা জানি, অকাজ করলে এই দেশের পুলিশ সাত হাত মাটির নীচ থেকে হলেও আমাকে খুজে বের করবে, আর আমার বাবার নাম স্কট মরিসন( এদেশের প্রধানমন্ত্রী) হলেও একই শাস্তি হবে। বরং বাপকেও পস্তাতে হবে।
আমার মনে হয়না, ধর্মের বাণী আর পর্দা দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে। হলে সৌদী আরব আর মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ লক্ষ ধর্ষণ-ইনসেস্ট-পশুধর্ষণ স্টোরি তৈরি হত না। সেখানে তো আর ইসলাম কম নেই, বরং বেশি ই আছে। একইভাবে সনাতন অধ্যুষিত ভারতে ধর্ষণ ক্যাপিটাল ও তৈরী হত না, সেখানেও ভগবান কম নেই বরং বেশি ই আছেন। বুদ্ধের তীর্থস্থান নেপাল অথবা চায়না ও স্বর্গনগরী হতো!
বরং অস্ট্রোলিয়ায় বিশাল গোষ্ঠী ধর্মহীন। এদের ধর্মের ঠিক নেই। কিন্তু ন্যায়বিচার আছে। আমাদের পাঁচ ওয়াক্তের নামাজে “ আন্তাস সামিউল আলীম, তাওয়াবুর রাহীম আছে” কিন্তু মসজিদের বাইরে গেলেই রাস্তায়ই আর সেই রহমত নেই, ন্যয়বিচার ও নেই। মুনাজাত শেষ করে “আমীন! সুম্মা আমীন!” বলে হাতের আঙ্গুলে চুমু খাওয়ার সাথে সাথে আমরা রাহমানুর রাহীম কে গিলে ফেলি। জুম্মার নামাজ শেষে ভিক্ষুককে কচকচে দশ টাকার নোট ভিক্ষা দেওয়ার মধ্যে মনের প্রশান্তি আর বেহেশতের লটারি টিকেট ঢুকে গেছে। জীবনের কর্মক্ষেত্র কোন প্রয়োগ নেই ।
একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। লক্ষ্য করে দেখুন বাঙালী ফার্মগেটের সামনে ইচ্ছামত রং সাইডে গাড়ি চালায়, বাসগুলো ইচ্ছামত থামে - চলে, পথচারী যার যেমন ইচ্ছা চলে, কেউ রাস্তায় থুতু ফেলে, তো কেউ ফেলে কলার খোসা। অথচ এক কিলোমিটার সামনে জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর ঢুকলেই সেই একই বাঙালী লেন ধরে গাড়ি চালায়, পথচারী রাস্তায় কলার খোসা টা ফেলে না।
“লেন মেনে গাড়ি চালান” এই সাইনবোর্ড কিন্তু ফার্মগেটেও আছে, ক্যান্টনমেন্টের ভিতরেও আছে। কি বুঝলেন ?

_____________________

ADD.

নিচের জনসচেতনতা কর্মসূচির ছবি সৌজন্য ডা. সুলতানা আলগিন

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়