DR> SAYEED ENAM

Published:
2020-09-06 01:21:48 BdST

ভালোবাসা প্রতিবন্ধী


 

ডা. সাঈদ এনাম
 _________________

মোহন (ছদ্মনাম) এসেছিলোনানীর সাথে। সে আনমনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কখনওবা এদিক ওদিক যেতে চাইছে, এটা ওটা ধরে টানাটানি করছে। অস্থির। নানী বললেন, ছোট বেলা থেকেই ওরকম। নিজের ভালো মন্দ বিপদ আপদ কিছুই বুঝেনা। চিকিৎসা করানো হয়। কিছুদিন সামান্য ভালো, তো কদিন গেলেই আবার যেই সেই।
তার মাবাবা কোথায়, জিগ্যেস করতেই নানী যা বললেন তার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
: আমার নাতী মোহন এতীম।
: তার বাবা নেই?
:না স্যার আছে তবে এ দুনিয়ায় থেকেও নাই। তার বাবা তাকে ও তার মাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগে সেই ১৬ বছর আগে। তারপর থেকেই মোহন আর তার মা আমার কাছে। আমিই কষ্ট করে দুজন কে লালন পালন করি। তার মা টাও তার মতো এক রকমের প্রতিবন্ধী।
: মানে?
: তার মা অন্ধ, জন্মান্ধ। জন্মান্ধ দেখেও মোহনের বাবা বিয়ে করেছে। কারন অন্ধ হলেও মোহনের মা ছিলো দেখতে পরীর মতো। কিন্তু পরীর মতো দেখতে হলেও কি হবে। শয়তান টা বিয়ের দেড় বছরের মাথায় পালিয়ে যায়। অন্ধ মেয়ে সংসারের কাজ কাম করতে পারেনা। চলতে ফিরতেও পারেনা। বদমাশ এই ছুতোয় কোথায় যে পালায়, তার আর কোন খবর পাইনি।
শুনেছি হারামিটা তার দেশে চলে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করে সংসার পেতেছে। একবার ভেবেছিলাম মামলামোকদ্দমা করে মেয়েটার ক্ষতিপূরন এর কিছু একটা করবো। কিন্তু আমার অন্ধ মেয়েটা প্রচন্ড অভিমানী। সে নিষেধ করে। 'যে চলে যায় সে নাকের কখনো কারো আপন কেউ নয়'।
আহা, এমনিতেই মেয়েটা জন্মান্ধ তার উপর কাঁদতে কাঁদতে ডাগর ডাগর চোখ দুটো কয়লার মতো কালো হয়েছে।
: মেয়ের আর বিয়ে দেন নি?
: না স্যার আর দেইনি। দেখতে সুন্দর, বিয়ের আলাপ প্রায়ই আসতো। কিন্তু অন্ধ আর প্রতিবন্ধী একটা বাচ্চা আছে এটা শুনে কেউ আর রাজী হতোনা। সব গুলা ফটকা। যে দু'একজন রাজী হতো তাদের থাকতো রাজ্যের শর্ত। মেয়েও কেঁদেকুটে বলতো, মা, না খেয়ে থাকবো তবুও মোহন ছাড়া থাকতে পারবোনা।
_____________________
ডা. সাঈদ এনাম
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়