Dr. Aminul Islam

Published:
2020-07-08 18:28:10 BdST

মার্শাল আর্ট ম্যুভিপ্রেমিকদের ১০ চয়েস



ডেস্ক
________________

করোনার অবসরে দেখুন দেশ বিদেশের বিখ্যাত ও উপভোগ্য ছবি গুলো। এই সময়ে ছবি দেখা হতে পারে মনের সেরা প্রশান্তি। ফেসবুক ও ইউটিউবের নানা অবৈজ্ঞানিক অশিক্ষা কুশিক্ষাপূর্ণ জঞ্জালের মাঝে বিনোদনেই মিলতে পারে আনন্দ । বাংলাদেশ বরেণ্য লেখক অমি রহমান পিয়াল জানিয়েছেন তার প্রিয় ১০ চয়েস ও লিঙ্কগুলো।  
অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন ,

পিকিং অপেরার এক্রোবেটিকস, আর তলোয়ার বর্শা নিয়া আকাশে উড়াউড়িতেই একসময় আটকা ছিলো চায়নিজ মার্শাল আর্টের সিনেমা। ব্রুস লি আইসা তারে উদ্ধার করলো। আন্তর্জাতিক খ্যাতি আইনা দিলো। তার রাস্তায় হাইটা হলিউডে খ্যাতি পাইলেন জ্যাকি চ্যান, জেট লি, ডনি ইয়েনরা। শরীরে তার বাইন্ধা আকাশে উইড়াও যে দশ-দশটা অস্কার নমিনেশন পাওয়া যায় তা দেখাইছিলো ২০০১ সালে ক্রাউচিং টাইগার হিডেন ড্রাগন। ক্লাস ফাইভে আমার দেখা প্রথম মার্শাল আর্ট ছবিটার নাম 'কুং ফু!'। মেট্রিক পরীক্ষার সময় ব্রুস লির 'এন্টার দ্য ড্রাগন' দেখে নান চাকু শিখা শুরু করলাম। যদিও তার ভক্ত আমি আরও আগে থেকে। টিভি সিরিজ গ্রিন হরনেটে অপেক্ষা করতাম শোফার কিটোর অ্যাকশনের জন্য!

সে সময়টা এক টিকেটে দুই ছবির যুগ! একটা কুংফু সিনেমার সঙ্গে একটা এডাল্ট কিংবা বিগ্রেড ছবি জুড়ে দিয়ে হলে চালাতো। কপাল ভালো থাকলে জোড়া কুংফুও জুটতো। ঢাকায় এজন্য বিখ্যাত ছিলো পুরান ঢাকার শাবিস্তান, শ্যামলীর শ্যামলী আর ফার্মগেটের ছন্দ। চিটাগাংয়ে আলমাস-দিনার আর কর্নফুলী। হলে আমার সবচেয়ে বেশীবার দেখা হইছে 'বক্সার ফ্রম শানটুং' আর স্নেক ইন দ্য মাংকিজ শ্যাডো। তবে মার্শাল আর্ট নিয়া যে শুধু চীনারাই ছবি বানায় এমন না। দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশেরই নিজস্ব স্টাইল আছে। থাইল্যান্ডের আছে, কোরিয়ার আছে, জাপানের আছে- কিন্তু চায়নিজ ফর্মটার কাছে পাত্তা পায় না কোনোটাই। অংবাক, সামুরাই ম্যুভিগুলা ঠিক অতোটা পাত পায় না যতটা আগ্রহ নিয়া মানুষ চায়নিজ কুংফু দেখে।

সত্যি বলতে চীনা ছাড়া কুংফু ভাল্লাগে না। ব্রুস লি তার ম্যুভিগুলায় প্রচুর সাদা কালো ফাইটার আনছেন। পছন্দ হয় নাই আমার একটারেও। তার সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি এন্টার দ্য ড্রাগনে জিম ক্যালি, জন স্যাক্সনদের মার্শাল আর্টিস্ট হিসেবে মানতে কষ্ট হইছে আমার। যেমন বাস্কেটবল খেলোয়াড় করিম আবদুল জাব্বাররেও গেম অব ডেথে নিয়া আসছেন তিনি। চাক নরিসও তার ছাত্র। ব্রুস লির লিগেসি তার মৃত্যুতেও শেষ হয় নাই। ইদানিং তিনি পরোক্ষ আলোচনায় তার গুরুর কারণে। ইপ মান। উইং চুন স্টাইলের ধারাটারে তিনি আবারো জনপ্রিয় করছেন। যদিও এইটা মহিলাদের সেল্ফ ডিফেন্সের জন্য খ্যাতিমান ছিলো আগে থেকেই। কিন্তু ক্লোজ কমব্যাটে এইটার ইফেকটিভনেস দেখাইছেন ইপ মান।

তো এতো বিশাল আলাপ দিলাম, আমার যাচাইয়ে সেরা দশটা চায়নিজ মার্শাল আর্ট ছবির কথা বলতে। একসময় হুইহাই দেখতাম মুগ্ধ হইয়া। গল্পের গরু গাছে উঠলেও সমস্যা ছিলো না। কিন্তু এখন বাছাই করতে হয় নানা বিষয় বিবেচনায়। অনেক জনপ্রিয় ছবি আমি তালিকা থেকে বাদ দিছি এই কারণে। যেমন এন্টার দ্য ড্রাগন, বিগ বস এইগুলা আমি সেরা দশে জায়গা দিই নাই। আবার চমৎকার ফাইট সিকুয়েন্সের জন্য মিডিওকার গল্পরে জায়গা দিছি। ম্যুভিগুলার প্রেক্ষাপট রাখছি চীনরেই, আম্রিকায় গিয়া কোনো চায়নিজের ফাইটরে প্রেফার করি নাই। আবার ওড়াওড়ি একদমই বাদ দিতে পারি নাই, আবার ক্রাউচিং টাইগাররেও তালিকায় জায়গা দিই নাই। যাহোক এসব ম্যুভি বেশীরভাগই টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করতে হবে, কিছু আছে ইউটিউবে। আমি ট্রেলারগুলা এড করে দিছি।

আমার প্রথম প্রেফারেন্স গল্প। তারপর ফাইট সিকুয়েন্স। কয়েকজন বিশেষ তারকার প্রতি পক্ষপাত থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা তালিকাটা একান্তই আমার ভালোলাগা থেকে করা। আপনার পছন্দ নাও হইতে পারে। দ্যাটস নট মাই হেডেক এট অল। চাইলে আপনার তালিকা আপনে করতে পারেন। তারপর মিলায়া দেখতে পারেন আপনার আমার অবস্থান ...

১. ইপ মান (২০০৮)

ব্রুস লির গুরুর জীবনিভিত্তিক এটা আসলে চার ফিল্মের সিরিজ। প্রতিটাই দূর্দান্ত। তবে আমার কাছে প্রথমটাই বেশী ভাল্লাগছে। ডনি ইয়েন তার চরিত্রের মধ্যে যেভাবে ঢুকে গেছিলো তার তুলনা হয় না। এই লোকটা কেমন ফাইটার? একবার ব্যাংককে এক নাইট ক্লাবের বাইরে তার গার্লফ্রেন্ডরে হ্যারাস করছিলো কিছু গুন্ডা। ডনি তাগো লগে ফাইট করছে, ৬ জন হাসপাতালে...

https://www.youtube.com/watch?v=BmkvuHpfrkk

 

২. দ্য গ্র্যান্ডমাস্টার (২০১৩)

এটাও ইপ মানের জীবনের একটা অধ্যায় নিয়া ছবি। তবে ডনি ইয়েন নাই এটায়। টনি লিউং, ঝি ঝানের ফাইটিং কোরিওগ্রাফি, ক্যামেরার কাজ। অওসাম মানে অওসাম। মাস্টার জেড নামে রহস্যময় একটা ক্যারেক্টার আছে, মনযোগ দিয়া না দেখলে তারে বাহুল্য মনে হবে। আলাদা ছবি আছে তারে নিয়া

https://www.youtube.com/watch?v=uC5amKLgnFU

 

৩. ড্রাগন (২০১১)

ডনি ইয়েনের আরেকটা মাস্টারপিস। একটু আন্ডাররেটেড। কিন্তু গল্পটা অসাধারণ। ডিটেকটিভ থ্রিলার, সঙ্গে আছে মানব শরীর নিয়া কিছু ব্যাখ্যা...

https://www.youtube.com/watch?v=fe6xIOCbcR8

 

৪. দ্য প্রডিগাল সান (১৯৮১)

বাপে টাকা দিয়া পোলারে সব ফাইটে জিতাইতো, সে জানতো না, নিজেরে বিশাল ফাইটার মনে করতো। সত্যিকার ফাইটে নামার পর সে বুঝলো তার আসল দশা। ইউয়েন বিয়াও ও স্যামো হংয়ের অসাধারণ ম্যুভি। এই দুইজন জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে তিন টাইগারের অংশ। তবে ম্যুভির সেরা ফাইটার আসলে ল্যাম চিং ইং। ব্রুস লির ফিল্মের অ্যাকশন কোরিওগ্রাফার এবং বন্ধু। এই লোক যদিও জাপানিজ বর্ন কোরিয়ান...

https://www.youtube.com/watch?v=QO479a1ByjQ

 

৫. ফিস্ট অব ফিউরি (১৯৭২)

আমার চোখে এটাই ব্রুস লির সেরা ছবি। একই গল্পের উপর একশোর উপর ছবি আছে। কিন্তু ব্রুস লির ধারে কাছে কেউ নাই...

https://www.youtube.com/watch?v=w_4RjSbSIFY

 

৬. হিরো (২০০২)

কেনো এই সিনিমাটা ক্রাউচিং টাইগারের চেয়ে ভালো? দুর্দান্ত গল্প, স্যুরিয়াল ফাইট সিকুয়েন্স। আমার দেখা জেট লির সেরা ম্যুভি...

https://www.youtube.com/watch?v=MgsddFEe9Oc

 

৭. দ্য ইনক্রেডিবল কুংফু মাস্টার (১৯৭৯)

শাওলিন হইলো কুংফুর আতুর ঘর। কিন্তু একজন এর সব স্টাইল শিখতে পারে না, সম্ভব না। তবে সব স্টাইলের ভালোগুলা কম্বাইন করা যায়। এ্‌ই ম্যুভিটা বাছাই করছি কুংফুর ট্রেনিংগুলার জন্য। গল্পটা ভালো, স্টিফেন তুং অসাম। স্যামো হং তো স্যামো হং। ট্রেলার নাই, পুরা ছবিটা আছে। পরপর দুইবার আছে বইলা পৌনে তিন ঘন্টা দেখায়...

https://www.youtube.com/watch?v=kCOr-QZUkbE

 

৮. ড্রাংকেন মাস্টার (১৯৭৮)

জ্যাকি চ্যানরে ছাড়া কুংফু ছবির তালিকা করা অসম্ভব। হংকং ভিত্তিক মার্শাল আর্ট ছবিরে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কমেডি দিয়াও কুংফু অ্যাকশনরে জনপ্রিয় করছেন জ্যাকি। আমার চোখে এটা তার সেরা ম্যুভি, যদিও সিকুয়েলটা মানুষ পছন্দ করছে বেশী। জ্যাকির আরেকটা জনপ্রিয় হিট স্নেক ইন দ্য ইগলস শ্যাডোর সেইম কাস্ট। বেগার সো রূপী ইউয়েন সিও তিনের পারফরম্যান্স সেই এই দারুণ প্লটে। শুরুতে ফুফুর হাতে জ্যাকির মাইর খাওয়াটা বেশী ভাল্লাগছে...

https://www.youtube.com/watch?v=KQMNllz6aE0

 

৯. দ্য ইয়াং মাস্টার (১৯৮০)

জ্যাকির আরেকটা মাস্টার পিস। বন্ধু বিউয়াওর সঙ্গে তার বেঞ্চ ফাইট তো আছেই, হুয়াং ইন শিকের সঙ্গে তার ফাইনাল ফাইট অন্যতম সেরা ফিনালি...

https://www.youtube.com/watch?v=MiYkE_7HV2w

 

১০. দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট বুচার (১৯৭৯)

এইখানে অনায়াসে জেট লির লিজেন্ড (ফং সাই ইউক), থার্টি সিক্স শাওলিন চেম্বার কিংবা ওয়ান্স আপঅন আ টাইম ইন চায়না সিরিজ ঢুকায়া দেয়া যাইতো। তাতে আসলে স্যামো হংরে অবমূল্যায়ন করা হয়। এই লোকই জ্যাকি চ্যানরে সুপার স্টার বানাইছে। নিজেও দারুণ ফাইটার। বিভিন্ন স্টাইলের সঙ্গে পাল্লা দিয়া তার ফাইট, প্লাস বেগার সোর পারফরম্যান্স এই সিনেমাটারে অন্য মাত্রা দিছে...

https://www.youtube.com/watch?v=Ulx6MSaX1Qo

 

১১, ১২, ১৩ দিয়া তালিকা লম্বা করার হাজার হাজার সিনেমা আছে। আমি প্লট, মেকিং আর অ্যাকশন কোরিওগ্রাফ বিচারে এই দশটাই বাছলাম...

_____________________
অমি রহমান পিয়াল , এমবিবিএস শিক্ষাত্যাগী বাংলাদেশ বরেণ্য লেখক

___________________INFORMATION_________________

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়