ডা. অসিত বর্দ্ধন

Published:
2020-06-27 16:02:30 BdST

আইসিইউ নিয়ে নানা বিশেষ-অজ্ঞ মতামত, গলাকাটা বিল প্রসঙ্গে



ডা. অসিত বর্দ্ধন

____________________

৩৯ মিনিট আইসিইউ আছে , আইসিইউ নেই এরকম আলোচনা হাসপাতলগুলোতে কান পাতলেই শোনা যায়। কোভিড -১৯ ভাইরাসের আক্রমণে আইসিইউ এর প্রয়োজনীয়তা আবারো সামনে এসেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ফেসবুকে লিখেছেন, " যারাই ভেন্টিলেটরে যাচ্ছেন , তারা আর ফিরছেন না" . এতে দুটো জিনিস হতে পারে। এক রোগটি খারাপ , অথবা আইসিইউ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের সুযোগ আছে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতি শয্যা আইসিইউ এর সাথে কি পরিমান মানব সম্পদ জড়িত তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন হওয়া দরকার। যেমন ধরুন প্রতি শিফটে ডিউটি ডাক্তারের সংখ্যা, ভেন্টিলেটেড ও নন -ভেন্টিলেটেড বেড প্রতি নার্সের সংখ্যা, সুপারভাইজার, অক্সিজেন ও জরুরি ঔষধ সরবরাহ লাইন, আইসোলেশান রুম ইত্যাদি।
একটি আধুনিক আইসিইউ রুম স্থাপন করা খুব সহজ কাজ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করুন, ও তা রুমে সেট করুন। কিন্তু "ম্যান/ওম্যান বিহাইন্ড দা মেশিন " এর কি হবে? এই আইসিঊ চালাতে যে জনবল লাগবে সেটা এক অর্ডারে পাওয়া যাবে কি?
ধরুন দেশের ৬৪ টি জেলায় ১০ বেডের আইসিঊ হবে। তাহলে মোট বেডের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৪০ টি। চমৎকার ! প্রতি শিফটে নার্স প্রয়োজন ১০ জন। দিনে ৩০ জন প্রতি হাসপাতালে । ৬৪ x ৩০ = ১৯২০ জন। আইসিঊ চিকিৎসক লাগবে প্রতি শিফটে কমপক্ষে ১ জন, দিনে ৩ জন, ১৯২ জন সারা দেশে। বিশেষগ চিকিৎসক লাগবে ২ জন , দিনে ও রাতে। ১২৮ জন। এই হিসাব ছুটি, অসুস্থতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে হিসাব ছাড়াই। মূলত সঠিক জনবল হবে উপরে উল্লেখ করা সংখ্যার ১.৩ গুণ।
ফেসবুকে আমি কোভি ড -১৯ এ আক্রান্ত দের মৃত্যু হার নিয়ে জানতে চেয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। অনেকেই বলেছেন বিদেশের সাথে তুলনা করা ঠিক হবে না, কারণ জনবল যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনি রোগী চয়ন , তার ব্যবস্থাপনা ও আইসিইউতে ভর্তির সময় নিয়ে অনেকেই সংশয় পোষণ করেছেন।
এই আশংকা গুলো ভিত্তিহীন নয়। আমাদের দেশে আইসিঊ চালানোর বিশেষজ্ঞের সংখ্যা খুব কম। ট্রেইন্ড নার্স ও মেডিকেল অফিসারের সংখ্যা আরো কম। সত্যি যদি সরকার সমস্ত জেলায় আইসিইউ খোলার মতো চমৎকার এবং জনগণের জন্য যুগোপোযগী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন , তাহলে এই জনবল কিভাবে তৈরী হবে , সেটা নিয়ে এখনই পরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে। যারা এই সব আইসিইউতে কাজ করবেন তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করা হোক।
আরেকটি গুরুতর বিষয় মনে রাখা দরকার। আইসিইউ সেবা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। জেলাওয়ারি চালু হলে এর পেছনে সরকারকে প্রতিমাসে কি পরিমান ভর্র্তুকি দিতে হবে তার ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গলাকাটা দাম। দিনে লক্ষ টাকা বিল ও হয়। সরকার হাসপাতালে সব রোগীকে এর ভগ্নাংশ চিকিৎসা খরচ দিলেও , এসব আইসিইউ এর বাজেট কত হবে ? প্রতিদিন যদি ৫০০০ টাকার সরবরাহ ও লাগে তা, তাহলে ৬৪০ বেডে প্রতিদিন ৬৪০ x ৫০০০ = ৩২,০০,০০০ টাকা। বছরে ৩২ x ৩৬৫ লক্ষ = ১১৬ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। কোবিদ রোগীর চিকিৎসায় আরো বেশি লাগবে। জনবলের খরচ, ইলেকট্রিসিটি, এডমিনিস্ট্যারেটিভ খরচ এরকম আরো অসংখ্য খরচ আছে। আশা করি যারা এই পরিকল্পনা করছেন তারা আনুসাঙ্গিক সমস্ত খরচ মাথায় রেখেছেন।
আমাদের দেশে অনেক হাসপাতালেই যন্ত্র আছে, চিকিৎসক নেই এবং , চিকিৎসক আছে যন্ত্র নেই ধরণের অবস্থা। আইসিইউ যেন এই তামাশা মুক্ত থাকে এই কামনা করি।

 


করোনা টেস্ট রেজাল্টের মানে কি ?
ফেসবুকে অনেকেই তাদের করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন অথবা দুশ্চিন্তায়  ।

আপনি যদি RT -PCR টেস্ট করিয়ে পজিটিভ হোন , এর অর্থ আপনার শরীরে এই ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আপনার যদি উপসর্গ থাকে তাহলে আপনি করোনায় আক্রান্ত। আর যদি উপসর্গ না থাকে কিন্তু পজিটিভ তাহলে আপনার শরীরে রোগ টি আছে, কিন্তু তা এখনো উপসর্গ তৈরী করার মত যথেষ্ট নয়, অথবা আপনি একজন উপসর্গহীন বাহক। যখন কোনো এলাকার সব মানুষের টেস্ট করা হয়েছিল ( আইসল্যান্ড তাদের জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০ শতাংশ লোকের টেস্ট করিয়ে দেখেছে টেস্টে পজিটিভ হওয়া শতকরা ৫০ভাগ লোক উপসর্গহীন বাহক সেই এলাকায় অনেক মানুষ ছিলেন পজিটিভ কিন্তু উপসর্গবিহীন। (সংশোধনঃ সরাসরি আর্টিকেলটি দেখেছি একটু আগে, মনে হয় সংখ্যাগত ভুল আছে ( ৫০ হবে না ) . যে স্টাডি থেকে উল্লেখ কর হয়েছে, সেখানে টার্গেটেড গরূপে পজিটিভ ১৩.৩ % এবং কন্ট্রোল গ্রূপে ০.৮ বা ০.৬ % অর্থাৎ গড় ০.৭% ) ধন্যবাদ ভিক্টকে , প্রশ্ন করার জন্য। )

করোনা টেস্টে নিগেটিভ মানে কি ?
নিগেটিভ মানে আপনার শরীর থেকে যে স্যাম্পল নেয়া হয়েছে সেটা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের RNA পাওয়া যায়নি। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে আপনার শরীরে করোনা ভাইরাস নেই, অথবা যে স্যাম্পল নেয়া হয়েছে সেটি যথেষ্ট নয়, কিংবা যথোপযুক্ত ভাবে নেয়া হয়নি। শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে আপনার শরীরে করোনা ভাইরাস থাকলে ও পরীক্ষায় রেজাল্ট নিগেটিভ আসতে পারে।
নিগেটিভ রেজাল্ট আসলে করণীয় :
মনকে ৭০ ভাগ স্বস্তি দিন, ৩০ ভাগ অস্বস্তিতে রাখুন।
যদি কোনো উপসর্গ না থাকে ,তাহলে নজর রাখুন নতুন উপসর্গের দিকে।
যদি উপসর্গ থাকে তাহলে চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। সামান্য অবনতি হলেও সম্ভব হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। আপনার চিকিৎসক যেন আপনার করোনা হওয়া সম্পর্কে ভীষণ রকম খুঁতখুঁতে ,সন্দেহপ্রবন থাকেন। প্রয়োজনে চেস্টের সিটি স্ক্যান করিয়ে যেন দেখেন ফুসফুসে সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে কি না। এই গ্রূপটি সবচাইতে বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হবে কেননা টেস্ট রেজাল্ট নিগেটিভ হওয়ার পরে অনেকেই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে পরেন। সন্দেহের মাত্রা কমে যায়।

আপনি যদি এন্টিবডি টেস্ট করে থাকেন
পজিটিভ অর্থ আপনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং আপনার শরীরে এন্টিবডি তৈরী হয়েছে।
নিগেটিভ অর্থ আপনার শরীরে করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি নেই। এর মানে দুই রকম; হয় আপনি আক্রান্ত হননি, কিংবা আপনি আক্রান্ত হওয়ার পরেও শরীর এন্টিবডি তৈরী করার যথেষ্ট সময় পায়নি। শরীরে এন্টিবডি তৈরী হতে ৩-১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি ২ দিনের মাথায় পরীক্ষা করে তার অবশ্যই নিগেটিভ আসবে, এমনকি ১৩ দিনের মাথায় টেস্ট করলেও নিগেটিভ আসতে পারে।

তাহলে সব চাইতে গুরুত্তপুর্ন কি?
আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উপসর্গ। কোনো উপসর্গ নাই মানে আপনি এখনো নিরাপদ ( তবে অন্যেরা আপনার কাছে নিরাপদ নয় যদি আপনি পজিটিভ হয়ে থাকেন )
টেস্ট নিগেটিভ কিন্তু উপসর্গ আছে , আপনি মোটেও নিরাপদ নন। চিকিৎসকের সাথে ঘন ঘন যোগাযোগ রাখুন।উপসর্গ সম্পূর্ণ দূর না হওয়া পর্যন্ত বিন্দুমাত্র ঢিলেমি নয় !
সুস্থ থাকুন , সচেতন থাকুন, সঠিক তথ্য সংগ্রহ করুন।

ডা. অসিত বর্দ্ধন

রা মে ক ২৫

_______________INFORMATION_________________

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়