Ameen Qudir

Published:
2017-01-21 16:28:38 BdST

সাংবিধানিক স্বাধীন সংস্থা বিএমডিসির উচিত সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা



 

ডা. বাহারুল আলম
_____________________________

কেবল উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রজ্ঞাপন নয়, রোগী ও চিকিৎসক পরস্পরের আস্থা সৃষ্টির জন্য জরুরি সকল প্রজ্ঞাপনই জারি করা প্রয়োজন

প্রজ্ঞাপনে কেবল চিকিৎসককে “বড় অক্ষরে” প্রেসক্রিপশন লেখার নির্দেশের সাথে সাথে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিটের আকার বড় হওয়া প্রয়োজন। কারণ বিজি প্রেস কর্তৃক ছাপান সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিটে “ছোট অক্ষরে”-ই প্রেসক্রিপশন লেখার স্থান সংকুলান হয় না।

প্রেসক্রিপশনে ঔষধের নাম ছাড়াও রোগীর নাম, বয়স, ওজন, রক্তের চাপ, নাড়ীর গতি, অভিযোগ, ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা , সনাক্তকৃত রোগের নাম, পথ্য, নির্দেশ, উপদেশ, নিষেধ প্রভৃতি লেখা থাকে । এ সবকিছু মিলেই প্রেসক্রিপশন। কেবল ঔষধের নাম লেখা - প্রেসক্রিপশন নয়।

 

‘সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন সংস্থা বিএমডিসি'-র আওতাভুক্ত থাকা অবস্থায় হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালতের নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার কতটুকু তার জন্য আপিল বিভাগের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। রিট পিটিশন কারী ব্যক্তি বিএমডিসি-কে পাশ কাটিয়ে সরাসরি উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) যাওয়া কতটা বিধিসম্মত—প্রজ্ঞাপন জারির পূর্বে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

সবকিছু বড় অক্ষরে লিখলে প্রেসক্রিপশন নান্দনিকতা হারাবে। প্রেসক্রিপশন লেখা একটি ‘আর্ট’। এর নান্দনিকতা রক্ষায়ও BMDC-র আপিল বিভাগ অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া প্রয়োজন।

কেবল ‘ছোট অক্ষরে’র পরিবর্তে ‘বড় অক্ষরে’র প্রেসক্রিপশন লেখার নির্দেশ দিয়েই রোগীদের কার্যকর চিকিৎসা পাওয়ার সঠিক দায়িত্ব পালনের আত্মসন্তুষ্টি লাভে বিএমডিসি ও সরকার একেবারেই গদগদ ।

অথচ
* একজন চিকিৎসক প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ২০০ “বড় লাইনের” রোগী দেখার পরিবর্তে “ছোট লাইনে” ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী দেখার প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন ছিল ঢের বেশি।

* সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইনের বিপরীতে কোন ঔষধের বরাদ্দ না থাকার বিরুদ্ধে প্রজ্ঞাপন জারি জরুরি ছিল।

* ইনডোর রোগীদের বরাদ্দকৃত ঔষধ থেকে বহির্বিভাগ বা আউটডোরের রোগীদের নামমাত্র ঔষধ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে- প্রতি রোগীর পরিপূর্ণ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা বিএমডিসি ও সরকারের অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল।

* একই সাথে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীদের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ , ও রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি সহ জনবল নিশ্চিত করার প্রজ্ঞাপন জারিরও প্রয়োজন ছিল।

* বিএমডিসি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভিডিও কনফারেন্স বা স্কাইপি র মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার ভ্রান্তি ও ঝুঁকির বিষয়ে চিকিৎসক ও সরকার উভয়কে সতর্ক করতে পারত।

* সরকারের প্রশাসন ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কেবল চিকিৎসকদের আচরণ বিধি নির্ধারণ করে দেওয়া কেন? চিকিৎসকের আচরণ বিধির সাথে অনেক বেশি প্রয়োজন সরকারের আচরণ বিধি সংশোধন করা। চিকিৎসা করার নিশ্চিত ব্যবস্থাপনা না থাকা সত্ত্বেও সে সকল হাসপাতালে চিকিৎসককে চিকিৎসা দিতে বাধ্য করা।

রোগী, চিকিৎসক ও চিকিৎসার প্রয়োজনে সকল প্রজ্ঞাপন জারি করা- চিকিৎসক সরকার উভয়ের জন্য সমান প্রযোজ্য। কেবল উচ্চ আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকলে বিএমডিসি আস্থা হারাবে।

_______________________

লেখক ডা. বাহারুল আলম প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। পেশাজীবী নেতা। সুবক্তা ও সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়