Dr. Aminul Islam

Published:
2020-06-21 18:53:46 BdST

শরীর যে ভাবে নতুন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি করে এন্টিবডি


 

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
___________________________

মানুষের শরীর যখন লড়াই করতে থাকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে তখন তৈরি করে এন্টিবডি । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে সেই সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হয় । যেমন নতুন করোনা ভাইরাস যা ঘটায় কো ভি ড ১৯।
এন্টিবডি টেস্ট করে রক্তে এন্টিবডির উপস্থিতি সন্ধান করা হয় যার উপস্থিতি জানান দেয় যে সেই ব্যক্তির সেই সঙ্ক্রমন ঘটেছিল ।
এন্টিবডি হল এক ধরনের প্রোটিন Y আকৃতি । এদের কাজ হল বিদেশি আগন্তুক কনা বা এন্টিজেন শনাক্ত করা ,যেমন এই এন্টিজেন থাকে অণুজীব যেমন ভাইরাসে ্‌।
নি দৃষট অণুজীবের সাথে যুক্ত বিশেষ এন্টিজেন কে কেবল প্রতি এন্টিবডি নিদৃষট ভাবে চিহ্নিত করতে পারে , ঠিক তালা চাবির মত , যে এন্টিজেনের যে এন্টিবডি ।
এন্টিজেনের প্রতি সাড়া দেয় আর এদের চিহ্নিত করে যে দেহের ইম্মুন কোষ এদের বলে লিম্ফ সাইট ।
এক ধরনের লিম্ফ সাইট হল "বি লিম্ফ সাইট " এরা উৎপন্ন করে এন্টিবডি আর এরা যুক্ত হয় এন্টিজেনের সাথে ।এই বন্ধন এন্টিজেন কে চিহ্নিত করে ধ্বংসের জন্য ।
তবে এন্টিবডি লক্ষ্য কোষকে ভেদ করতে পারেনা তাই এর জন্য দরকার হয় আরেক ধরনের লিম্ফ সাইট "টি কোষ " । ভাইরাস ধ্বংসের জন্য এদের প্রয়োজন হয় ।
প্রথম সংক্রমণের পর বি লিম্ফ সাইট চিহ্নিত করে এন্টিজেন আর চিনেও রাখে । এর পর আবার সেkiই সংক্রমণ হলে বি লিম্ফ সাইট দ্রুত তৈরি করতে থাকে এন্টিবডি আর পুন সংক্রমণ রোধ হয় ।তবে এন্টিবডি টার্গেট কোষ ভেদ করতে পারেনা সেজন্য আরেক ধরণের এন্টিবডি টি লিম্ফ সাইট ধ্বংস করে ভাইরাস বা অন্য অণুজীব ।
এন্টিবডির আবির্ভাব আর স শনাক্ত হওয়া
প্রথম সংক্রমণের পর বি লিম্ফসাইট চিহ্নিত করে এন্টিজেন আরীরে যদির চিনেও রাখে । তাই শরীরে যদি এই অণুজীবের পুনঃ সংক্রমণ ঘটে তাহলে বি লিম্ফসাইট দ্রুত তৈরি করতে থাকে এন্টিবডি সেই শত্রু বিনাশের জন্য । পুন সংক্রমণ রোধ হয় ।
কো ভি ড ১৯ এন্টিবডি টেস্ট প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করে ঃ
আই জি এম এন্টিবডি ঃ যে কোনও সঙ্ক্রমণের পর সব আগে এদের আবির্ভাব হয় রক্তে । সংক্রমণের পর দেহে ইম্মুনিটি প্রতিষ্ঠায় রয়েছে এদের ভুমিকা ।
আই জি এ এন্টিবডিলেবরেতর‍্য ঃ এদের কাজ হল সারা দেহে শ্লেষ ঝিল্লীর প্রাচীর সুরক্ষা করা ।
করোনা ভাইরাস এন্টিবডি টেস্ট ঃ
এই টেস্ট করে সারস কো ভি ২ র বিরুদ্ধে উৎপন্ন এন্টিবডির উপস্থিতি নিদৃষট ভাবে চিহ্নিত করা হয়
পজিটিভ এন্টিবডি টেস্ট মানে সেই ব্যতির অতীতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছিল । তবে এইটেস্ট করে বর্তমানে তিনি সংক্রমিত কি না তা নির্ধারণ করা যায়না ।
করোনা এন্টিবডি র উপস্থিতি চিহ্নিত কবে করা যায়
সাধারণত উপসর্গ শুরুর ১-২ হপ্তার মধ্যে রক্তে শনাক্ত যোগ্য এন্টিবডি রক্তে হাজির হয় ।
কো ভি ড ১৯ এন্টিবডি কি পুনঃ সংক্রমণ ঠেকাতে পারে ?
সি ডি সি র ভাষ্য এ ধরণের এন্টিবডির উপস্থিতি শরীরকে ইম্মুনিটি দেয় কি না আর পুন সঙ্ক্রমন ঠেকায় কিনা এ বিষয়ে এখনও যথেষ্ট তথ্য প্রমান নাই। প্রানির মডেলে সেরে উঠার এক মাস পর পুন সংক্রমন হয়না এমন ফল আশা ব্যঞ্জক হলেও এর প্রমানের জন্য আর গবেষণা প্রয়োজন । কতদিন ইম্মুনিটি থাকবে এও স্পষ্ট জানা যায়নি । অন্যান্য করোনা সংক্রমণ যেমন সারস আর মারস এর বেলায় ইম্মনুটি থাকে ৩ বছর ।
এন্টিবডির কোন এন্টিজেন গুলো হয় লক্ষ্য বস্তু
১। স্পাইক গ্লাইক প্রোটিন (S) এই প্রোটিন থাকে ভাইরাসের পৃষ্ঠে আর এই প্রোটিন জরুরী কারণ এই প্রোটিন ভাইরাসকে দেহ কোষের সাথে একীভূত হতে আর একে সংক্রমিত করতে সাহায্য করে ।
২।নিউ ক্লিও কাপসিড ফস ফো প্রোটিন (N) এই প্রোটিন S প্রোটিন থেকে বেশি পরিমাণে থাকে ভাইরাসে । এই প্রোটিন সংক্রমিত দেহ কোষে ভাইরাসের পুনঃ জনন করতে আর পরে সারা শরীরে সংখ্যা বৃদ্ধি তে সাহায্য করে ।
বিভিন্ন ধরণের কো ভি ড এন্টিবডি টেস্ট
সি ডি সি বলেন প্রধান দুই ধরণের
১। বাইন্ডিং এন্টিবডি টেস্ট :এতে এন্টিবডি টেস্ট করতে জীবন্ত ভাইরাসের ব্যবহার হয়না , ব্যবহৃত হয় বিশুদ্ধি কৃত SARS CoV2 প্রোটিন ।
টেস্ট করতে সময় নেয় ৩০ মিনিট । বাইন্ডিং এন্টিবডি শনাক্ত করার দু ধরণের টেস্ট
১। পয়েন্ট অব কেয়ার টেস্ট (POC) এর জন্য প্রয়োজন হয় আঙুল ফুটো করে এক ফোটা রক্তের নমুনা ।
২। ল্যাবরেটরি টেস্ট যার জন্য দরকার হয় ল্যাব , দক্ষ স্টাফ আর যন্ত্রপাতি
২। নিউট্রেলাইজিং এন্টিবডি টেস্ট
এই টেস্ট করে পরীক্ষা নলে এন্টিবডির ভাইরাল সংক্রমণ রোধের
ক্ষমতা দেখা হয় । রক্তের নমুনার সাথে জীবন্ত ভাইরাস মিশ্রিত করে পরীক্ষা করেন দক্ষ টেকনিশিয়ান ।
কো ভি ড ১৯ এন্টিবডি টেস্ট পজিটিভ হলে কি করবেন
টেস্ট পজিটিভ হলে বুঝতে হবে একবার তার করোনা সংক্রমণ হয়েছিলো ।
সি ডি সির পরামর্শ যার এন্টিবডি টেস্ট পজিটিভ তিনি উপসর্গ হীন হলে আর সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে না এলে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন তবে তাকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিজ সুরক্ষা আর অন্যেরও সুরক্ষা করে যেতে হবে ।
এন্টিবডি টেস্ট পজিটিভ হলেও একে কাজে ফেরার জন্য বা জন সমাবেশে বা স্কুলে যোগ দানের জন্য অনুমতি পত্র হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না । তার উপসর্গ , সংক্রমিত কারো সাথে সংস্পর্শ বিবেচনায় আনতে হবে ।
যার এন্টিবডি টেস্ট পজিটিভ কিন্তু উপসর্গ আছে বা সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে আসা হয়েছে তিনি নিজেকে আইসো লেট করবেন
নিজকে আর অন্যদের সুরক্ষার জন্য বিধি ব্যবস্থা নেবেন ,।শারীরিক বিচ্ছিন্নতা ,হাত ধোয়া আর মাস্ক পরার কাজ চালিয়ে যেতে হবে ।
ফলস পজিটিভ ফলাফল মানে কি
কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে ফলস পজিটিভ । এর মানে পজিটিভ ফলাফল থাকলে ও সত্যিকার অর্থে তার রক্তে এন্টিবডি নাই ।
সি ডি সি বলেন এন্টিবডি টেস্ট শত ভাগ নির্ভুল নয় তাই এমন ফলস পজিটিভ ফল আসতে পারে ।
এফ ডি এ বলেন অনেক সময় এ জন্য দ্বিতীয় বার টেস্ট করতে হতে পারে ।
করোনা ভাইরাস এর বিরুধে যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এন্টিবডি
নির্ভুল এন্টিবডি টেস্ট হলে করোনা ভাইরাসের বিস্তার সীমিত করা যাবে ।
নির্ভুল এন্টিবডি টেস্ট রেজালট দেখে বলা যাবে উপসর্গ হয়ত ছিলনা তবু কতজন কো ভি ড ১৯ সংক্রমণ শেষে সেরে উঠেছেন ।নির্ধারণ করা যাবে কারো কিছু মাত্রার ইম্মুনিটি রয়েছে । যাদের ভাইরাস সংক্রমণ আছে এদের সংস্পর্শে যারা এসছেন তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করা যাবে ।
রোগের সার্বিক বিস্তারের ব্যাপকতা জানা যাবে ।
আরেকটি সুবিধা হল যাদের কো ভি ড ১৯ হয়েছিল এরা তাদের রক্ত দান করতে পারবেন কারন সে রক্তে থাকে এন্টিবডি । এই রক্ত বা প্লজমা ভরন সহায়ক হবে কো ভি ড ১৯ সংক্রমিত লোকদের চিকিৎসায় । চিকিৎসার নাম কনভালিসেনট প্লাজমা থেরাপি ।
এন্টিবডি টেস্টিং এর সীমা বদ্ধতা
আমেরিকান সো সাইটি অব মাইক্রো বায় লজি বলেন
১। কোন ব্যক্তির ইম্মুনিটি আছে কি না সঠিক বলা যাবে না
২। কো ভি ড ১৯ এর সাম্প্রতিক বা বর্তমান সংক্রমণ আছে কি না তা বলা যাবে না
৩/। স্বাস্থ্য বিঁধি মানা পিপি ই পরা এসব সম্বন্ধে কোন নির্দেশনা দিতে পারেনা ।
সি ডি সি বলেন এন্টিবডি টেস্ট ফলাফল কাউকে কাজে ফেরার বা অন্যের সঙ্গে মেলা মেশার অনুমতি পত্র দিতে পারেনা বা জন সমাবেশে বা স্কুলে যোগ দেবার অনুমতি পত্র হবেনা।
তবে নির্ভুল টেস্ট পাওয়া গেলে এসব সীমাবদ্ধতা কমবে /
সাম্প্রতিক গবেষণায় বোঝা যায় কারো কো ভি ড ১৯ সংক্রমণ হলে তার রক্তে দেখা দেবে এন্টিবডি । এন্টিবডি থাকলে কি পরিমাণ ইম্মুনি টি হবে কতদিন থাকবে তা জানা যায় নাই স্পষ্ট করে । তাই এন্টিবডি টেস্ট পজিটিভ হলেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সুরক্ষা নিয়ে চলতে হবে ।

২.

কতদিনে আবির্ভূত হতে পারে কো ভি ড ১৯ এর উপসর্গ ?
এ যেন বিশ্ব মারীর মধ্য যামিনী , অসুস্থ অনুভব মনে উদ্বেগ উপসর্গের কি হতে পারে কারণ । SARSCoV2 ভাইরাস এর মুখোমুখি হয়ার ২-১৪ দিনের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে উপসর্গ ।
যারা সংক্রমিত তাদের হাঁচি কাশির মাধ্যমে লালার ড্রপ লেট , নাক ঝরা জলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে । অসুখ বিস্তার রোধের কার্যকর উপায় ভাল করে সাবান জল দিয়ে বার বার হাত ধোয়া আর ক্লথ মাস্ক পরা ।
কতদিন লাগে উপসর্গ প্রকাশে
উপ্তি কাল মানে হল ভাইরাসের মুখোমুখি হওয়া আর উপসর্গ প্রকাশের অন্তর্বর্তী কাল ।
সি ডি সি বলেন ভাইরাসের মুখোমুখি হয়া থেকে উপসর্গ প্রকাশ এর মধ্যে লাগে ২-১৪ দিন ।
তবে কারো কারো ক্ষেত্রে শম্বয় বেশি লাগে ।
সি ডি সি বলেন উপসর্গগুলো হল
কফ
শীত শীত লাগে , জ্বর
শ্বাস কষ্ট
পেশি শূল
শরীর ব্যথা
ক্লান্তি
হটাত গন্ধ আর সবাদ চেতনা লোপ
মাথা ধরা
নাক বন্ধ , নাক দিয়ে জল ঝরা
গলা ব্যথা
ডায় রিয়া
বমি ভাব বমি
কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ হয় গুরুতর যখন হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে
শ্বাস কষ্ট
বুকে অটল চাপ চাপ বা ব্যথা
ঠোঠ আর মুখ নীল হয়ে যাওয়া
হতবুদ্ধি ভাব
অনেকে র মুল সমস্যা পাচক নালির বমি বমি ভাব তরল মল ।
সঙ্ক্রমন মনে হলে ঘরে থাকুন আর স্বাস্থ্য সেবা দান কারীদের সাথে যোগাযোগ করুন
সি ডি সি র পরামর্শ
ঘরে থাকুন । নিজেকে ঘরবন্দি করা , অন্যের সঙ্গ আর সংস্পর্শ থেকে দূরে আর আলাদা । একমাত্র মেডিক্যাল কেয়ার প্রয়োজন হলে ঘরের বাইরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে যাবেন ।
উপসর্গ নজরদারি । কেমন হছে উপসর্গ এর তদারকি
বিশ্রাম আর প্রচুর তরল গ্রহণ
প্রচুর ঘুম । তরল গ্রহন । আর ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথা বেদনা নাক বন্ধের ওষুধ
অন্যদের চেয়ে আলাদা আর দূরে থাকা । অন্য ঘরে পারলে অন্য বাথ রুম ব্যবহার , অন্য বাসন তৈজস পত্র ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিষ আলাদা কেউ কাছে এলে মাস্ক পরা ।
গন পরিবহন ব্যবহার না করা ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়