Dr. Aminul Islam

Published:
2020-06-15 19:07:21 BdST

আত্মহনন ও একটি জিজ্ঞাসা




দেবব্রত তরফদার
প্রখ্যাত লোককথাশিল্পী , কলকাতা
____________________________

একটি মৃত্যু সারা উপমহাদেশকে ভারাক্রান্ত করেছে । এখন মানুষের শোক প্রকাশ , শোক বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে
। সিনেমা জগতের মানুষ অনেক দূরের হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে নয় । তাদের কাজের জন্য দর্শকের সঙ্গে অভিনেতার এক সূক্ষ্ম সম্পর্কের সৃষ্টি হয় । ব্যাপারটা একমুখী মনে হলেও আসলে তা নয় । যাঁরা অভিনয় করেন তাঁরা অবশ্যই বলতে পারবেন যে দর্শক তাঁদের কাছে কতখানি ।
এমন কিছু অভিনেতা আছেন যাঁদের দেখেই ভাল লেগে যায় । সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন এমনই একজন অভিনেতা । আমি নিজে বরাবর সিনেমা পাগল মানুষ । এই ছেলেটির অভিনীত সব সিনেমা দেখেছি । মেধাবী ছেলেটি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি ত্যাগ করে এক অনিশ্চিত জীবনের চ্যালেঞ্জ বেচে নিয়েছিল । অনিশ্চিত বটে কেননা যারা অভিনেতা হবার নেশায় ছুটে গিয়ে হেরে যায় তাদের কথা তো অজানায় থেকে যায় । এই চ্যালেঞ্জ জিতে গিয়েও কেন যে জীবনের কাছে হেরে গেল এই প্রশ্নের উত্তর কোনোদিনই পাওয়া যাবে না।
মানসিক অবসাদের কথা বলছেন সবাই , মানসিক অবসাদ তো বটেই তা না হলে আত্মহননের পথ কেন বেছে নেবে ।
খুব কাছ থেকে দেখা এরকমই কিছু মানুষ যারা আসলে খুবই পজিটিভ ছিলেন জীবনে তারা কেন এই পথ বেছে নিয়েছিলেন সেই প্রশ্নের জবাব পাইনি। প্রথমজন আমার এক প্রতিবেশী দাদা , ব্যাংক ম্যানেজার ছিলেন । অসম্ভব দরদী এবং সংবেদনশীল মানুষটি বাম চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন । ক্যাজুয়াল কর্মীদের হয়ে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করে তাদের অধিকার আদায়ের পর এরাই কোনো এক সময়ে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে । এতে তাঁর মানসিক অবসাদ এমন জায়গায় পৌঁছায় যে পাঁচ বছরের শিশুপুত্র এবং স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নিজে আত্মহননের পথ বেছে নেয় । প্রায় প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো সময়ে তার প্রিয়জন দ্বারা প্রতারিত হয় তবে তার জন্য মৃত্যু কেন ?
আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু অসম্ভব রসিক যার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত চেটেপুটে খাওয়ার মত অভ্যাস ছিল , ছিল মানুষের প্রতি অত্যন্ত মমত্ববোধ আর ভালবাসা । ছিল হাজারো ছাত্রের আইডল । নিজেই কতজনকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছে । ছিলনা কোনো সংসারিক অশান্তি , ছিল স্ত্রী সন্তানের প্রতি অসম্ভব ভালবাসা , ছিল ভবিষ্যতের কত স্বপ্ন । তবে মৃত্যু কেন ? খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি , জীবন নিয়ে হাজার রকম কথা হয়েছে শেষ দিন পর্যন্ত কিন্তু বুঝতেই পারিনি তার মনের কি ক্ষয় চলছে ।
আর একজন আমার আপনার জন । শিশু বয়স থেকে যাকে কোলে করে ঘুরেছি সারা শহর । তিল তিল করে চোখের সামনে বড় হয়েছে । পড়ার বই বাদ দিয়ে যার সঙ্গে গল্প কবিতার বই নিয়ে বসতাম । যে কোর্সে ভর্তি হয়েছিল সেটা তার ভাল লাগছিল না । সেতো অনেকেরই হয় , নতুন বিষয় মানিয়ে নিতে সময় লাগে । তবে কেন সে তাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বাঁচার কথা , লড়াইয়ের কথা বলে । আর যে পড়া তার ভাল লাগছিল না সেটাই ক্লাসের সেরাদের মধ্যে একজন হয়েও জীবন শুরু করার আগেই শেষ করার কথা ভাবে ।
আসলে আমরা নিজেরাই আমাদের মনের মত উত্তর খুঁজে নিই ।
প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখের কিন্তু এরা খুবই স্বার্থপর । এসময় নিজেকে ছাড়া আর কিছুই ভাবে না। তার যন্ত্রণার অবসান হলেও অতি কাছের মানুষ , অতি প্রিয়জনকে একটি দীর্ঘ চলমান দুঃখের মধ্যে দিয়ে রেখে যায় । হয়তো অনেকে বলবেন সময় দুঃখ কে ফিকে করে । সত্যিই কি তাই ? আমার নিজের উপলব্ধি থেকে বলছি চাপা পড়া নানান ছবি ফিরে আসে বারবার ।
( এই প্রসঙ্গে বলি ফেসবুকে রথী মহারথী মনোবিদগন অবসাদ থেকে মুক্তির জন্য যে দাওয়াই দিয়েছেন যা সময়ে এইসব খাটেনা । কেননা এরা হাজার মানুষের ভিড়েও একা । উপরের ঘটনা গুলো থেকে আমার উপলব্ধি । )

লেখার উপলক্ষ্য যেহেতু সুশান্ত সিং রাজপুত তাই ওর ছবিটিই দিলাম ।

______________________________________

INFORMATION

INFORMATION

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়