ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-05-24 16:58:48 BdST

২ মাসে ১১ লক্ষাধিক মানুষের আতঙ্কিত দ্বিধাগ্রস্ত ও সন্দেহ বশত ফোন


 

ফাইল ছবি


ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম সুজন

__________________________

গোলক ধাঁধা
মাত্র ২ মাসে IEDCR এ ১১ লক্ষাধিক জন আতঙ্কিত দ্বিধাগ্রস্ত ও সন্দেহ বশত ফোন করে নিজের অবস্থা জানতে চেয়েছেন, তারা করোনা আক্রান্ত কি না পরীক্ষার জন্য। এই পরিসংখ্যান কতজন ফোন করে তাদের নাগাল পাবার চেষ্টা করেছেন তাদের সংখ্যা, না কি কতগুলো ফোন তারা রিসিভ করেছেন তার statistic অবশ্য জানা যায় নি (২৮শে জানুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সম্ভাব্য)

WHO এর উপদেশ, সন্দেহভাজন সকলকে পরীক্ষা করুন, কিন্তু সাধ আর সাধ্যের সমন্বয়ে IEDCR নিজস্ব কিছু criteria জানিয়েছেন, কাদের পরীক্ষা করবেন, কাদের করবেন না (কোন আন্তর্জাতিক গাইডলাইন ছাড়াই সম্ভবত)

ফলশ্রুতিতে ১১ লক্ষ সন্দেহভাজন (ব্যক্তিগতভাবে) ব্যক্তির বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত তারা ১৬ শত ৩৬ জনের পরীক্ষা করে ৬১ জন রোগী সনাক্ত করেন (৩.৫% +)

বাকিরা করোনা আক্রান্ত কি না সে প্রশ্ন সন্দেহাতীতভাবে থেকে যায়, কেননা, তারা বলছেন, কিছু community transfer হয়ে থাকতে পারে, যদিও বাস্তবতায় "কিছু" শব্দটা সন্দেহজনক। কেননা slightly pregnant বলে কোন শব্দ নেই, হয় প্রেগন্যান্ট নয়তো নয়, হলে হতে পারে, যদি / ফদি / নদী অর্থহীন শব্দচয়ন

শুধু পরীক্ষা করলেই আমরা সন্দেহমুক্ত নাও হতে পারি, কেননা এর sensitivity ও specificity কতটুকু সেটিও জানা দরকার। আবার কতটুকু মান সম্মত kit তাও দেখা প্রয়োজন। কেননা মান সম্মত কীট না হবার জন্য নেদারল্যান্ড, স্পেন ও ইটালী কীট ফেরত পাঠিয়েছে।

তদুপরি, কবর দেবার ক্ষেত্রে তারা বলছেন, মৃত ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাস বাঁচতে পারে না, তাহলে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে sample নিয়ে positive হবার সম্ভবনা কতটুকু এবং কতক্ষন পর্যন্ত সম্ভব তাও প্রশ্নবিদ্ধ

তাহলে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেটেব্যথা হলে লোকে কি করবে বা কোথায় যাবে। প্রথমত ৮০ % রোগীর মৃদু সমস্যা "বাতায়ন" স্বাস্থসেবার টেলিমেডিসিনে সম্ভব - 333 / 16263 নম্বরে। আলহামদুলিল'লা। বাকী ২০% হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন হতে পারে। যখনই এই প্রয়োজনীয়তা দেখা যাচ্ছে, তখনই বিপত্তি তৈরি হচ্ছে

যেগুলো করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতাল, তারা টেষ্ট positive কনফার্মেশন রিপোর্ট চাচ্ছেন, কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি, কোন one stop service নেই, যারা লগে লগে একই হাসপাতালে পরীক্ষা করে বলবেন, হ্যাঁ positive, এখানে ভর্তি হন, অথবা আস্বস্ত করবে, negative অন্য যে কোন হাসপাতালে যেতে পারেন

রোগী করোনা negative হলে করোনার জন্য নিয়োজিত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সঙ্গত কারণেই তিনি ও তার পরিবার ঝুঁকিতে পরবে। তেলে জলে মেশে না, so একই হাসপাতালে একই ছাদের নীচে করোনা আর নন করোনা রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়, এটা সাংঘাতিক ছোঁয়াচে, ছোঁয়াচে মানে এই নয় যে, শুধু ছুঁয়ে চলে যাবে, এটা প্রাণঘাতি ছোঁয়াচে

আবার কনফার্ম negative না (পরীক্ষা করা হয় নি বা result পাওয়া যায় নি) কিন্তু উপসর্গ আছে এমন রোগী অন্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি করলে হাসপাতালের বাকী রোগী, তাদের পরিবার-পরিজন, হাসপাতাল স্টাফ তাদের সুস্থতা-সেফটি-সিকুউরিটি কিভাবে ভরসা পাবে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ

এবার বলি বহি:বিভাগ বা প্রাইভেট চেম্বারের কথা, স্বভাবগতভাবেই আমরা চাপা স্বভাবের মানুষ, নিজের অসুস্থতার গোপনীয়তা কঠোরভাবে চেপে রাখি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে। যদিও রোগী রিসিভ করার সময়ই জ্বর আছে কি না মেপে দেখা হয়, কাশি-গলা ব্যথা আছে কি না বা বিদেশ ফেরত কারো সংস্পর্শের কথা জিজ্ঞেসা করা হয় কিন্তু community transmission হলে contract tracing অবান্তর

আমরা ও আমাদের ক্লিনিক্যাল এ্যাটেন্ডেন্ট PPE পড়ে খোদা চাহে তো মোটামুটি নিরাপদ, কিন্তু আপনি waiting করার সময় পাশের রোগী ও তাদের সহযাত্রীদের যে নিরব ঘাতক উপহার দিয়ে গেলেন, তাদের কৈফিয়ত কে দেবে, যখন চেম্বারে থাকলেন, বসার চেয়ার-টেবিল সহ আনুষংগিক আসবাবপত্রে যে করোনা রেখে বাকীদের ঝুঁকিতে ফেললেন, সে জিম্মাদারি কার

USA, UK, Canada, Germany, Franch, Japan, Australia, NZ প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত দেশে স্বাস্থ্য বাজেট ১০% এর আশে পাশে, তারাই যদি হিম সিম খান, তাহলে যে ৬% করোনা আক্রান্ত রোগী ICU ও Ventilator লাগবে তাদের আমরা কতটুকু logistic support দিতে পারব সেটা ভবিষ্যতই বলবে, আর যেসব দেশ এটুকু সাপোর্ট দিতে পারছেন ICU তে তাদেরও recovery rate কত সেটা তো প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে

আমাদের দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাজেট মোট জাতীয় বাজেটের ৪.৯২% এবং জিডিপির ০.৮৯%। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জনপ্রতি বরাদ্দের পরিমাণ বছরে মাত্র ১৪২৭.৭৭ টাকা

সবাই স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আবহিত, চেষ্টা ও আন্তরিকতার কোন কমতি নেই, তবুও বাস্তবতার নিরিখে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি হতে পারে, যা বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ত্যাগের সমতুল্য ও হয়ত মার্জনীয়

(৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের আলোকে লিখিত, বর্তমানে অবস্থা ও অবস্থানের কিছু উন্নতি অনুস্বীকার্য, প্রতিটি "উপজেলা পর্যায়ে" করোনা টেষ্টের সুব্যবস্থা হলে grass rout level এ diagnosis ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থসেবা নিশ্চিত হত)

বর্তমানে দেশে প্রতি ১০ হাজার জনগনের জন্য ৬ জন ডাঃ, নার্স ও ধাত্রী আছেন, WHO এর মতে সংখ্যাটা ২৭ হওয়া বাঞ্ছনীয়
_____________________

ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম সুজন
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া
৪র্থ ব্যাচ
এম, বি, বি, এস ২০০১
এফ, সি, পি, এস
(নিউরো-সার্জারী)

______________________

AD.....

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়