ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-05-07 18:48:26 BdST

লকডাউনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও আর কতদিন লকডাউন?


লকডাউনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও আর কতদিন লকডাউন?
---------------------------------------

অনন্তকাল কি লকডাউন চলতে পারে?
-------------------------------------

কোনও একটি অঞ্চলে গুটিকয় করোনা রোগীর খোঁজ মিললেই নতুন করে শুরু হচ্ছে বজ্রআঁটুনির।লাল ,কমলা,ও সবুজের ফাঁসে আমরা আটকে চলেছি,

লকডাউনের উদ্দেশ্য ছিল শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে উদাসীন জনগণের অবাধ মেলামেশায় দাড়ি টানা,কারণ শারীরিক দূরত্বের মাধ্যমেই কেবল নভেল করোনার ‘বেসিক রিপ্রোডাকশন নাম্বার’ (আর ও) বা আর ও-কে ১-এর নীচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

আর ও ১-এর নীচে নামলেই রাশ টানা সম্ভব সংক্রমণে। কিন্তু আর ও ১-এর নীচে নামল কি না, তা বোঝার উপায় কি???

বুঝতে গেলে পথে প্রান্তরে করোনার টিকিটিও যেখানে দেখা যাচ্ছে না সেই সব জায়গায় বিরামহীন টেস্ট জরুরি।

কিন্তু বর্তমানে যে ধরনের টেস্ট-কিটে বাজার ছেয়ে গেছে, তাতে বিড়ম্বনা আরও বাড়তে পারে। আরটি-পিসিআর অথবা rapid অ্যান্টিবডি টেস্ট সুস্থ মানুষকেও বানিয়ে দিতে পারে করোনা আক্রান্ত।

কারণ সর্বোৎকৃষ্ট টেস্ট-কিটের নিরূপিত ফলেও পাঁচ শতাংশ ‘ফল্‌স পজিটিভ’ অথবা ‘ফল্‌স নেগেটিভ’ অবশ্যম্ভাবী। পাঁচ শতাংশ ভুল ফলাফল গোটা এলাকার সংক্রমণ চিত্রকে পাল্টে দিতে পারে।

ধরা যাক, কলকাতার কোনও একটি অংশের জনসংখ্যা ১০ লক্ষ। ১০ লক্ষের পাঁচ শতাংশ সার্স সিওভি-২-তে সংক্রমিত হয়ে থাকলে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার জনের সংক্রমণ থাকার কথা। সর্বোৎকৃষ্ট টেস্ট-কিট ৯৫ শতাংশ ‘সেনসিটিভ’, সেই কিটও পাঁচ শতাংশ true ‘পজিটিভ’-কে ধরতেই পারবে না। ।

ওই টেস্ট কিটেরই আছে ৯৫ শতাংশ ‘স্পেসিফিসিটি’, তবু তা পাঁচ শতাংশ true ‘নেগেটিভ’-কেও বানিয়ে দেবে false ‘পজিটিভ’।

লকডাউনের সবথেকে জোরালো সমর্থক জার্মানির ‘দি ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি’-র অধিকর্তা, সার্স ভাইরাসের আবিষ্কারক, কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ান ড্রস্টেন বলছেন করোনা সুনামির একটা ঢেউ হয়তো বা অপসৃয়মাণ, আরও বড় ঢেউ রয়েছে আড়ালে।।

যেমন ইবোলা ১৯৭৬-এ প্রথম চুপিসারে ঢুকলেও আবার ৩৮ বছর পরে ২০১৪-এর ফেব্রুয়ারিতে তার আগমন হল দোর্দণ্ডপ্রতাপে।

জার্মানিতে লকডাউনের জন্মদাতা ড্রস্টেনকে পুলিশ নিয়ে ঘুরতে হত। অভুক্ত তিন ছেলেমেয়ের বাবা, এক জার্মান শ্রমিক ড্রস্টেনকে অভিযুক্ত করেছিলেন তাঁর কেরামতিতেই নাকি খেতে পাচ্ছে না তিনটি দুধের শিশু।

লকডাউনের অপরাধবোধের গ্লানিতে বহুরাত বিনিদ্র কেটেছে ড্রস্টেনের। অবশেষে তিনিই সোচ্চার হলেন লকডাউন শৈথিল্যে। বললেন,

"মানুষের খেতে না পাওয়ার থেকে কখনওই বড় হতে পারে না লকডাউন।"

তাই লকডাউন নয়, জরুরি ,ভিন্ন পথের অনুসন্ধান। অসংখ্য ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া ভবিষ্যতে আরও বেশি ভীম-প্রলয় বাধাবে, সারাজীবন তা হলে পেটে গামছা বেঁধে লকডাউনেই কাটাতে হবে,

নভেল করোনা যে পরিবারের সদস্য তাদের আরও চার ভাইবোন রয়েছে। সেই ভাইবোনদের কেউ না কেউ মানুষকে হরবখত আক্রান্ত করে,দু দিনের জ্বর-সর্দি-কাশি-গলা-ব্যথার মাধ্যমেই তাতে নিষ্কৃতি মেলে।
আইসিইউ বা ভেন্টিলেটর দরকার পড়ে না।

কলকাতা-ক্যালিফোর্নিয়া-ডেনমার্ক-জার্মানি-উহান-নিউ জার্সি কোথাওই শতাংশের হিসাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ কোভিডে ধরাশায়ী হননি (সর্বাধিক আট শতাংশ), যাতে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ কখনোই তৈরি হবে না।

ওদিকে কোভিড নিরাময়ে ২০ হাজার যৌগ আর ১৩৩ রকম চিকিৎসা পদ্ধতি এফডিএ-এর দরজায় মাথা খুঁড়ছে।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রেমডিসিভির’ বা ‘ইআইডিডি-২৮০১’। দু’টিরই নিশানা নভেলকরোনার প্রাণভোমরা এনএসপিএ-১২। লাভের পরিবর্তে দু’টিরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগী আরও সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ছেন।

অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা ‘এইচসিকিউ’ কোনও আশার আলো জ্বালাতে পারেনি। ভেন্টিলেটরও বহু ক্ষেত্রে ‘এআরডিএস’ বা ‘সারিতে’ প্রাণসংশয়ী হয়ে উঠছে।

হঠাৎই হার্ট অ্যাটাক/রেনাল ফেলিওর/এনসেফেলাইটিসের ধাক্কাকেও কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না। আর ভ্যাকসিনের আগমন ও প্রাপ্তি এই গরীব দেশে এক মহাজাগতিক ঘটনা।।।

যখন সত্যিই কোনও আশার আলো নেই, তখন লকডাউন বাড়িয়ে সত্যিই কি কোনো লাভ সম্ভব?

বরং স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হোক। কচিকাঁচারা আক্রান্ত হলেও অল্পেই সেরে উঠছে ও উঠবে।

এসিই-টু ‘মেটাবলিক সিনড্রোম্‌স’-এর পুরোটারই নিয়ন্ত্রক। যথা, হাইপারটেনশন, ডিসফাইব্রিনোলাইসিস, ডিসলিপিডিমিয়া, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, কার্ডিয়োভ্যাস্কুলার ডিজিজ, অ্যাবডোমিনাল ওবেসিটি, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, কোলেস্টেরল গলস্টোন্‌স, স্লিপ ডিজঅর্ডারস ও কয়েকটি ক্যানসার। এইগুলি সবই রক্তে উচ্চ ইনসুলিনের মাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সুতরাং মেটাবলিক সিনড্রোমসের শিকার রোগী ও বয়স্করা সব থেকে অসুরক্ষিত;

প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা তাঁদের সর্বাধিক, লকডাউন তাঁদের ক্ষেত্রেই সত্যিই বাধ্যতামূলক।।

এ ছাড়া বাকি ৮০ শতাংশ সংক্রমিত মানুষ বুঝতেই পারবেন না করোনার স্নেহ-চুম্বন।তারা তা তা-থৈ থৈ করে ‘হার্ড ইমিউনিটির’ জয়গান গাইবে।

লকডাউন তুলে নেওয়ার পর চিকিৎসক/স্বাস্থ্যকর্মীদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হোক।

প্রথম শ্রেণি নিয়োজিত থাকবেন কেবল কোভিড-১৯ ও এধরনের আরো সংক্রামক রোগের চিকিৎসায়,

দ্বিতীয় শ্রেণি থাকবে অসংক্রামক নানা ব্যাধির চিকিৎসায়,

আর তৃতীয় শ্রেণিকে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত রাখা হোক।

কোভিড হাসপাতালকে আলাদা করে, বাকি হাসপাতালকে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য খুলে দেওয়া জরুরি।

কারণ কোভিডের থেকে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার বহুগুণ বেশি।
কোভিড চিকিৎসকদের হাতে পোর্টেবল ‘আলট্রাসাউন্ড’ মেশিন তুলে দিলে খুব সহজে তাঁরা ফুসফুসের ‘এ’ আর ‘বি’ লাইনের চলন দেখে রোগীর অবস্থা বুঝে চটপট ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
বর্তমানে অস্ট্রিয়া-ইটালি-জার্মানি-সহ বহু দেশ ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নিচ্ছে।

তাই আমাদের দরকার জোর করে নয় আগামী ২ বছর নিয়ন্ত্রিত লকডাউন ,তাতে লোকের সচেতনতা বাড়বে,এবং লোক physicsl distance maintain করবে,সামাজিক বয়কট নয়,

আর দরকার লোকের আতঙ্ক কমানো,যাতে লোকে করোনা নিয়ে ঘর করা শিখতে পারে,

♥♥♥লেখক জিন-বিজ্ঞানী, লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন ও ‘হু’র ‘কোভিড-১৯: অপারেশনাল প্ল্যানিং গাইডলাইনস’-এ বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত!

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়