Ameen Qudir

Published:
2017-01-15 16:30:48 BdST

কীভাবে কানাডার রেসিডেন্সি পাওয়া যায়?


 

 

 ডা. অসিত বর্দ্ধন
______________________________

 

কীভাবে রেসিডেন্সি পাওয়া যায়?
নিয়ম এখানে সবার জন্য সমান, তোয়াজ বা মামা–খালার চিঠি কোনো কাজে আসে না।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটা পরামর্শ দিতে পারি। এলএমসিসি পরীক্ষার উঁচু নম্বর জরুরি। রেফারেন্স এ দেশে খুব প্রয়োজন। কানাডীয় রেফারেন্স ছাড়া বাংলাদেশি রেফারেন্সের তেমন কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এর আগে যারা কোনো রেফারেন্স লিখে এনেছেন, দেখা গেছে দুজন প্রার্থীর রেফারেন্স হুবহু এক। বাইরে থেকে এসে কানাডীয় রেফারেন্স জোগাড়ের একটা ভালো উপায় হচ্ছে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া। এক বছরের একটা মাস্টার্স করলে দুটো লাভ। এক ডিগ্রি পাওয়া, দ্বিতীয়ত ভালো রেফারেন্স তৈরি করা। কানাডার সব প্রদেশে নিয়ম এক নয়। ঠান্ডার জায়গাগুলোতে নিয়ম কিছুটা শিথিল। সেখানে রেসিডেন্সি পাওয়াও যায়। তার জন্য সেখানে অন্তত পাঁচ বছর সার্ভিস দিতে হয়।
রেসিডেন্সির বাইরে যে চাকরি পাওয়া যায় তার একটা হচ্ছে ফিজিশিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্ট। একজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের সহকারী হিসেবে। এটা অন্টারিও ও আলবার্টা প্রদেশে আছে শুনেছি। অন্য প্রদেশেও অল্প বিস্তর থাকতে পারে। নিউ ব্রান্স উইক প্রদেশে এলএমসিসি কমপ্লিট করে হসপিটালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন কেউ কেউ। হসপিটালিস্টের পদটা আমাদের দেশের আরএমও পদের মতো। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোনো রোগীর মেডিসিন সংক্রান্ত অসুবিধা হলে এঁরা প্রথম চিকিৎসা দেন।

কানাডীয় রেফারেন্স পাওয়া বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা____________________
আমাদের এবং ইউরোপীয় ও উত্তর আমেরিকান মানসিকতার পার্থক্য অনেক। এখানে মানুষ নিজের প্রচার নিজেই করে। নিজে কী করল সেই বর্ণনাটা বেশ ঘটা করেই দেয়। এমনকি ছেলের নাক মোছান হলেও। নিজেদের মধ্যে রসিকতা করে, তা যেমন চটুল হতে পারে, তেমনি হতে পারে নির্দোষ। এদের জীবনের প্রাত্যহিক ঘটনা জানলে বন্ধুত্ব তৈরি করা সহজ। যেমন স্পোর্টস এ দেশে খুব জনপ্রিয়। আইস হকি সম্পর্কে একটুও না জানলে এই খেলাচলাকালে আলাপের প্রসঙ্গ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। প্রত্যেক প্রদেশের নিজস্ব হকি দল আছে। তাদের খেলা কবে, কার সঙ্গে জিতল, এসব আলোচনা আমাদের দেশের ক্রিকেট আলোচনার মতোই। যারা মিতভাষী তাদের জন্য এখানে নিজেকে প্রকাশ করা খুব শক্ত। এ দেশে একজনের শুধু কাজ দেখে মূল্যায়ন করে না কেউ। দেখতে চায় সহকর্মী হিসেবে এই ব্যক্তিকে আমি চাই কিনা এভাবে।

এটা মনে রাখা দরকার, ইউএসএমএলই পরীক্ষা কানাডা গ্রাহ্য করে। কেউ ইউএসএমএলই সম্পূর্ণ করে এলে এলএমসিসি দিতে হয় না। যারা এখন কানাডায় অভিবাসনের জন্য আবেদন করছেন, তার ইউএসএমএলই পরীক্ষা দিলে কানাডা ও আমেরিকা দুই জায়গাতেই রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ডাক্তার হিসেবে কেরিয়ারটা টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আমেরিকার তুলনায় কানাডা জনসংখ্যায় কম, সুযোগের ক্ষেত্রেও স্বল্প। এভাবে দেখা যেতে পারে, আমেরিকা ৫০টি দেশের সমষ্টি আর কানাডা ১০টি। সুতরাং চিকিৎসক হিসেবে আমেরিকাতে সুযোগ পাওয়া কানাডার চাইতে সহজ।
কানাডায় চিকিৎসকদের গড়পড়তা বার্ষিক আয় প্রায় তিন লাখ ডলারের কাছাকাছি (প্লাস্টিক সার্জন ও আই সার্জনদের উপার্জন আরও বেশি)। বর্তমানে এই উপার্জনে ট্যাক্স প্রায় ৪০ শতাংশ সব মিলিয়ে। তার মানে মাসে ১৫ হাজার ডলারের মতো আয়। এ থেকে বাদ যাবে আরও পাঁচ হাজার ডলার অফিসের খরচের জন্য। সব মিলিয়ে হয়তো ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার মাসে নিজের খরচের জন্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে হিসাব করলে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত। জিনিসপত্রের দাম, বাড়ির দাম মিলিয়ে দেখলে এ দেশে তেমন কোনো উপার্জন নয়। উপরন্তু এ দেশে ডাক্তারদের কোনো পেনশন নেই। তাই চাকরি শেষের দিনগুলির জন্য টাকা জমিয়ে রাখতে হয়। বাংলাদেশে যিনি মাসে ট্যাক্স বাদে তিন লাখ টাকা উপার্জন করেন, তিনি কানাডার চিকিৎসকের চাইতে অনেক বেশি খরচ করার সামর্থ্য রাখেন তুল্য মূল্য বিচারে।
তাহলে শুধু শুধু এ দেশে আসা কেন?
বাংলাদেশ থেকে এসে এখানে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যে সময় দিতে হয় তা অনেক। তারপরও যারা পাসের পরে দ্রুততম সময়ে এখানে এসে চেষ্টা করবেন তাদের চিকিৎসক হওয়ার সম্ভাবনা কম নয়। তবে এখানে দলাদলি ও বর্ণবাদী আচরণ নেই। যারা মিশতে পারেন কানাডীয়দের মতো করে তারা দ্রুত খাপ খাইয়ে নেন। নির্দিষ্ট সময়ের পরে প্র্যাকটিসের ঝামেলা নেই। পরিবারের জন্য সময় দেওয়া যায়। অন্য সমস্ত অপরাধমূলক কার্যক্রম বাংলাদেশের চাইতে অনেক কম। নিজের পোস্টিং রাখার জন্য ঘুষ দিতে হয় না। ধাক্কা খাবার ভয় নেই। এই স্বস্তির দাম হচ্ছে সেই পরিশ্রমটুকু যা করলে এখানে চিকিৎসক হিসেবে টিকে থাকা যাবে।
কানাডাতে এখনো অনেক ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান প্রয়োজন। যারা এটাকে গ্রহণ করতে চান, তাদের বেশ কিছু সুযোগ আছে। কিন্তু যারা এখানে এসে স্পেশালাইজেশন করতে চান তাদের জন্য কাজটা অসম্ভব না হলেও দুরূহ।
যারা এসে পড়েছেন তাদের জন্য অভিনন্দন, যারা আসতে চান তাদের জন্য শুভেচ্ছা!
_______________________________

লেখক ডা. অসিত বর্দ্ধন: কানাডা প্রবাসী অ্যানেসথেটিস্ট ও বিডিইএমআর ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়