ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-04-18 16:35:33 BdST

করোনা সচেতন রোগীর বাসায় যত্ন : জরুরি পরামর্শ


ডা. অসিত মজুমদার
লোকসেবী চিকিৎসক
_______________________

আমার হয় নাই এই ভেবে খুশী হওয়ার কিছু নাই। যাতে কখনোই না হয় সেজন্য সব সময় নিজেকেই সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে।

যাঁদের করোনা হয়েছে নিশ্চিত বা যাঁদের হয়েছে বলে সন্দেহ, ঘরে কীভাবে তাঁদের খেয়াল রাখবেন পরিচর্যাকারীগণ সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে।

বাসায় চিকিৎসা তখনই নেয়া যেতে পারে যখন মনে হবে হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ কম বা অনিরাপদ বা যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসা জনবল সংকট। মাইল্ড ধরণ যেমনঃ জটিলতাহীন শ্বাসতন্ত্রের উপরাংশের সমস্যা, জ্বর, দুর্বলতা, কফ, খাবারে অরুচি, অস্বাভাবিকতা, মাংসপেশীতে ব্যথা, সোর থ্রোটসহ বয়স ষাটের উপরে এবং কোমরবিডিটি যেমন ক্রনিক হৃদরোগ ও রক্তনালীর সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ ইমিউনোকমপ্রমাইজড এরকম বিভিন্ন রোগ নাই এমন ক্ষেত্রে মাইল্ড অবস্থায় হাসপাতালে যথেষ্ট জায়গার সংকুলান না হলে হোটেল, স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম , লঞ্চ ইত্যাদিকে সাময়িক চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরী করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এছাড়াও এসব সমস্যার ক্ষেত্রে যেমনঃ ফুসফুসে অন্য কোন সমস্যা এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনী রোগ বা ইমিউনোকম্প্রমাইজ অথবা ক্রনিক ও অন্যান্য জটিলতা হবার আশংকা রয়েছে এমন কোন অসুখের ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়াটাই উত্তম। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথ চিকিৎসকের সঙ্গে পূর্বেই আলোচনা করে নেবেন এবং যাতে জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

যদি রোগী নিজে বা পরিসেবাদানকারীগণ মনে করেন সরকার নির্দেশিত আইসোলেশন, হাত, শ্বাসযন্ত্র বা পরিবেশ পরিচ্ছন্নতাসহ উদ্ভূত যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করার মত যথেষ্ট দক্ষতা বা যোগ্যতা আছে বলে মনে করেন তবেই বাসায় থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবেঃ
নিম্নলিখিত জরুরী উপসর্গ দেখা গেলেই চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যাবেন।
১) জ্বর, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ বা মাথা ব্যথা
২)শ্বাসকষ্ট
৩) বুকে ব্যথা
৪) বুকে চাপ অনুভাব করা
৫) কনফিউশন
৬)খুব দুর্বল বা উঠতে কষ্ট হওয়া
৭)মুখ মন্ডল বা ঠোঁট নীলাভ হওয়া
৮) ডায়রিয়া, বমি ভাব বা বমি হওয়া
৯) পায়ে অবশ অবশ ভাব

যখন কেউ কোভিড১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ঘরে থাকে তাদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন সম্পূর্ণ আলাদা ঘরে থাকে এবং পরিবারের সব লোক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকতে হবে। তাদের জন্য আলাদাভাবে বাথরুম, থালা বাসন, গ্লাস, টাওয়াল, বিছানাপত্র, নাক মুখ ঢেকে রাখার কাপড় সবই আলাদা রাখতে হবে।

কোভিড১৯ রোগী শুশ্রূষায় যারা থাকবেন তারাও নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে চিকিৎসা পরিসেবার কাজটি করতে হবে। অবশ্যই ফেস মাস্ক ব্যবহার করবেন। গ্লাভস পরে খুলে ফেলার পর সঙ্গে সঙ্গে ২০ সেকেন্ড সাবান পানিতে ভালভাবে হাত ধুইবেন। সাবান পানি হাতের কাছে না থাকলে ৬০% এলকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন এবং সাবান পানি সহজলভ্য হলেই সঙ্গে সঙ্গে নিয়মমত হাত ধুইবেন। সাবান পানিতে হাত ধুইবার আগে কোনভাবেই চোখ, মুখ এবং নাকে হাত স্পর্শ করবেন না এবং করোনা রোগীর বাড়ীতে যত্নকালীন সময়ে বাড়ীতে কোনভাবেই কোন ভিজিটর যাতে না আসতে পারে সেদিকে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি দিবেন।

খেয়াল রাখুনঃ
● দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে যথেষ্ট বিশ্রাম পান, পুষ্টিকর খাবার খান, প্রচুর পানি আর তরল পান করেন।

● একই ঘরে যখন সেবা কাজে, তখন মেডিকেল মাস্ক পরবেন দুজনে। হাত দিয়ে মাস্ক ধরবেন না। মুখে হাত দেবেন না। কাজ শেষে মাস্ক ফেলে দেবেন ঢাকনাওয়ালা ময়লার ঝুড়িতে।

● বারবার হাত ধোবেন সাবান পানি দিয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে: অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে বা এর চারপাশের সংস্পর্শে এলে খাবার তৈরির আগে, খাবার খেতে বসার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে বারবার হাত ধোবেন।

● অসুস্থ মানুষের জন্য আলাদা বাসনপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর—এসব জিনিস ৩০ মিনিট সাবানে ভিজিয়ে রেখে তারপর ধুইতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি যা যা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, সেগুলো বারবার জীবাণু শোধন করুন। অবশ্যই নিয়ম মাফিক।

● অসুস্থ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বা শ্বাসকষ্ট হলে বা উপরে উল্লেখিত কোন সমস্যা দেখা দিলে যথাযথ যোগাযোগ করে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

আমাদের প্রায় মানুষেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কারণ আমাদের জীবনযাপনের ধরণ, মানসিক চাপ, অস্বাস্হ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পুষ্টির অভাব, ভেজাল খাবার এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল ও সব্জি খাওয়া ইত্যাদি।এই বিপদের মুহূর্তে সব রকম উপায়েই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।

এই সমায়ের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার কিছু উপায়ঃ
১) পর্যাপ্ত ঘুম - দৈনিক অন্তত আট ঘন্টা৷
২) নিয়মিত ব্যায়াম - দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা৷
৩) টেনশন না করা।
৪) রাত না জাগা৷
৫) প্রচুর পানি খাওয়া - দিনে অন্তত আড়াই লিটার৷
৬) ফাষ্ট ফুড, বেশী তেল চর্বি যুক্ত খাবার না খাওয়া৷ ঘি, মাখন, ডালডা আপাতত না খাওয়া৷
৭) রিফাইন্ড সুগার কম খাওয়া৷
৮) ভিটামিন ডি
৯) Zinc
১০) ভিটামিন সি
১১) ভিটামিন এ
১২) ভিটামিন ই
১৩) ভিটামিন B1+B6+B12
ঔষধ অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

যারা কোভিড ১৯ পজিটিভ নিয়ে ঘরে আইসোলেশনে আছেন তারা তখনই ঘর থেকে বেরুতে পারবেন যখন দেখবেন পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসল এবং বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে কোন রকম জ্বর, সর্দি বা কাশি আর দেখা যায় না।

লক্ষণ ধরাপড়ার পরে খেয়াল রাখতে হবে জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট সম্পূর্ণ কমেছে কিনা এবং তা কমলে দুইবার কোভিড টেস্ট করাতে হবে চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে। যদি চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে পর পর দু'টো টেস্ট নেগেটিভ আসে তখন ধরে নেয়া হয় আপনি সম্পূর্ণ কোভিড ১৯ মুক্ত।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সিডিসি

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়