ডাক্তার প্রতিদিন

Published:
2020-04-16 18:45:49 BdST

"মঈন ভাই ,আপনার চেম্বার রুমের পাশেই চেম্বার করবো... "


পরিবার সদস্যদের সঙ্গে ডা. মঈন

ডা. সাঈদ এনাম

__________________________

সহকারী অধ্যাপক ( মেডিসিন ) ডা. মঈন ইন্তেকাল করেছেন। তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ডা. মঈন ভাইকে ১৯৯৪ সাল থেকে চিনি। সে সময় আমরা দু'তিনজন সিলেট থেকে ঢাকা যাই মেডিকেল ভর্তি কোচিং।

কোচিং এ মঈন ভাই আমাদের পড়িয়েছেন। মাঝেমধ্যে অবসর সময়েও উনি আমাদের ডেকে নিয়ে মেডিকেল কোচিং এর পড়া ধরতেন।

আমার মেডিক্যাল এ চান্স পাওয়ায় মঈন ভাই খুব খুশি হন। হোস্টেলে একটা ভালো রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। রুমে উঠে দেখি আমার রুম ঐ ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর রুম, আর মঈন ভাই এর থাকার রুমটা খুব খারাপ, স্যাঁতসেঁতে। তখন থেকেই তার প্রতি আমার আলাদা একটা সম্মানের জায়গা তৈরি হয়।

ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ারে কোন আইটেম না বুঝলে, উনার রুমে গিয়ে বুঝে আসতাম। সুন্দর করে, ধৈর্য সহ কারে বুঝিয়ে দিতেন। পরীক্ষার সময় রুমে রুমে গিয়ে জুনিয়র দের খবর নিতেন। সাহস দিতেন।

এখোনও মনে আছে, ফিজিওলজি বিষয়ের ব্লাড চ্যাপ্টারের মেকানিজম অব হিমোস্টেসিস আর ক্লটিং ফ্যাকটর গুলো মাথায় ঢোক ছিলোনা। মঈন ভাইয়ের রুমে গেলাম। মঈন ভাই সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন।

শীতের সময় ডা. মঈন ভাই সাদা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে থাকতেন। আহা এতো ভালো, সাদাসিধে সিম্পল মানুষ জীবনে দেখিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচিত, অপরিচিত জুনিয়র সবাই'কে তিনি অসম্ভব স্নেহের চোখে দেখতেন। তাঁর সহপাঠী, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র সবার কাছে তিনি অসম্ভব বিশ্বস্ত আর কাছের মানুষ ছিলেন।

ওসমানীতে প্রায়ই দেখা হতো আমাদের সবার প্রিয়, সদা হাস্যজ্বল এই বড় ভাইটির সাথে। কাজকর্ম আর দায়িত্বে খুবই সিনিয়র।

আমি যখন ইউ এইচ এফ পি ও হিসেবে সিলেটের দক্ষিন সুরমায় তখন থেকেই আমাকে সাইকিয়াট্রির একটা চেম্বার সিলেটের একটি স্বনামধন্য সেন্টারে চেম্বার খোলার তাগাদা দেন। সাইকিয়াট্রি খুব ডিমান্ডিং। কিন্তু ইউ এইচ এফ পি ও কাজের ব্যস্ততার জন্যে পারছিলাম না। একটি এস এম এস দিলেন চেম্বারের ব্যাপারে।

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির পর বললেন, এবার আর দেরী নয়। তার পাশে একটা চেম্বার শুরু করার। তিনি সিলেট শহরের অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি সেন্টারে বসতেন। তিনি বললেন, "তোমাকে একটা ফোন নাম্বার এস এম এস দিয়েছি, এই নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করবে আর আমার কথা বলবে"।

তারপর থেকে দেখা হলেই বলতেন, 'যোগাযোগ করেছো?,তাড়াতাড়ি চেম্বারে বসা শুরু করো, সিলেট বিভাগীয় শহরে তোমার একটা চেম্বার থাকা জরুরী। রুগীদের দরকার আছে"

একদিন ফোন দিলাম ঐ নাম্বারে। একজন অবসর প্রাপ্ত কর্নেল ফোন ধরলেন। ধরেই উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন, "আরে মঈন সাহেব আপনার কথা কবেভবলছেন, আমিতো আপনার অপেক্ষা করছি..."।

আজ মঈন ভাই এর সেই এস এম এস গুলো সারাদিন ধরে পড়ছি। কথা দিচ্ছি মঈন ভাই, বিভাগীয় শহরে চেম্বার করবো, আপনার চেম্বার রুমটির সাথেই হবে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়