Ameen Qudir

Published:
2020-04-02 05:38:33 BdST

করোনা কালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার মেরিট/ডিমেরিট


 

লেখকের ছবি

অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার
বাংলাদেশের প্রথিতযশ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রাক্তন চেয়ারপারসন , মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা
________________________

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা প্রসঙ্গে-----

এনিয়ে বেশ কথাবর্তা শোনা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তাদের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। রোগী দেখছেন না। চেম্বার বন্ধ রাখলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররের আর্থিক ক্ষতি কিন্তু সবচেয়ে বেশী। একজন অধ্যাপকের মাসিক বেতন কত? যতদুর জানি আশি হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে। বর্তমান পরিস্হিতিতেও আমার জানা মতে অনেককেই ফ্ল্যাটের লোন, গাড়ীর লোন প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে। ড্রাইভারের, গৃহকর্মের সাহায্যকারীর বেতন, ইলেকট্রিক/গ্যাস বিল, ফ্ল্যাটের সার্ভিস চার্জ, খাওয়া খরচ, ছেলে-মেয়েদের খরচ এগুলো তো আছেই। ঐ টাকায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কতটা বিলাসী জীবন যাপন করতে পারেন? তাহলে কেন চেম্বার বন্ধ রেখেছেন?
এখন বলি চেম্বার খোলা রাখার মেরিট/ডিমেরিট সম্পর্কে। চেম্বার খোলা থাকলে রোগীরা সেবা পাবেন এটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা। সেই সাথে বিশেষজ্ঞের আয়-ইনকামও বাড়বে- সেটাও ডাক্তারের জন্য অনেক বড় সুবিধা বটে। আর ডাক্তাররাও স্বস্তি পাবেন রোগী সেবা করে। রোগীদের সেবা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে কোনো ডাক্তারই চান না।
এবারে কিছু অসুবিধার কথা বলা যেতে পারে। বেশীর ভাগ বিশেষজ্ঞের চেম্বার কিন্তু ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ধরনের একটি কক্ষ। সেখানে PHYSICAL DISTANCE (করোনার পরিপ্রেক্ষিতে) বজায় রাখা কষ্টসাধ্য। আর আমিতো একজন মনোচিকিৎসক। আমার একজন রোগীর সাথে কমপক্ষে তিন চার জন আসেন এটেনডেন্ট হিসেবে। দেশের প্রত্যন্ত অন্চল থেকে রোগীরা আসেন চেম্বারে: আবার কারো কারো কাছে অনেক রোগী আসে একদিনে। এদের মধ্যে কে করোনা পজেটিভ জানা সম্ভব নয়। শেষ যেদিন চেম্বার করলাম সেদিন মদারীপুর থেকে একজন রোগী এসেছিলেন সর্দি-জ্বর নিয়ে। অথচ আমি একজন মনোচিকিৎসক। ভাবুন তো! ডাক্তার যদি আক্রান্ত হয় তবে ইনকিউবেশনে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেক অন্য রোগীদর মধ্যে ভাইরাসটির সংক‍্রমন করবেন। সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যে শত শত রোগী আসেন তাদের মধ্যেও সংক‍্রমিত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। ডাক্তার বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছড়াবেন: রোগীরা কমিউনিটিতে ছড়াবেন। চিত্রটা কিন্তু অনেক ভয়াবহ হতে পারে!
যেসব ডিসিপ্লিনে ডিজিটাল সেবা দেয়া যায় সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাই তা করছেন। রোগীরা ফটো তুলে টেস্টের রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন ভাইবার/হোয়াটস এ্যাপে।
মনে রাখতে হবে আমরা আজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংকটকাল পার করছি। পরিবর্তিত পরিস্হিতিতে পৃথিবীর সব দেশেই করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবাদান অনেক কমিয়ে এনেছে। উল্লেখ্য যুক্তরাজ্য এ পরিস্হিতিতে সব রুটিন ক্যান্সার সার্জারী বন্ধ রেখেছে। আজ এ বৈশ্বিক মহামারি থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে নামতে হবে। একে অপরকে দোষারপ করা থেকে বিরত থাকি…..কদিন কিছুদিন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়