Ameen Qudir

Published:
2020-04-01 05:24:06 BdST

"ডাক্তারকে আনুষ্ঠানিক / রাষ্ট্রীয় কৃতজ্ঞতা দেয়া হলে মেথরের প্রতি নয় কেন ! "


 

একাত্তর জার্নালের ফাইল ছবি

ডেস্ক
____________________

ঢাকার জনপ্রিয়   একাত্তর  টিভির একাত্তর জার্নাল অনুষ্ঠানে প্রেজেন্টারের কথিত বক্তব্য :ডাক্তারকে আনুষ্ঠানিক / রাষ্ট্রীয় কৃতজ্ঞতা দেয়া হলে পরিচ্ছন্ন্তাকর্মী , সুইপার বা মেথরের প্রতি নয় কেন ! ' কে নিয়ে চিকিৎসক সমাজে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসা একটি পেশা। তা কেউ সম্মান দিক বা না দিক। একইভাবে সুইপার বৃত্তি বা পরিচ্ছন্নতাকর্ম অত্যন্ত সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা। কিন্তু করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশাকে অন্য একটি সম্মানীয় পেশার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে অসংলগ্ন মন্তব্য সত্যিই দু:খ জনক।

অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার এক লেখায় বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চিকিৎসকদের ভগবান তুল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন ।
করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে কোনো চিকিৎসক যদি সংক্রমিত হয়ে পড়েন তাহলে তার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বীমা ঘোষণা করেছেন । চিকিৎসকদের যাতায়াতের সমস্যার কথা চিন্তা করে প্রয়োজনে হাসপাতালের কাছাকাছি হোটেলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। (সূত্র : সময় টিভি)
এখন নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। আমাদের দেশে জীবনের তোয়াক্কা না করে যারা যুদ্ধ করছেন সেই চিকিৎসকদের যথেষ্ট প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন; সেই সাথে সর্বোচ্চ সুরক্ষা।

  ডাক্তারদের বক্তব্য, এমত অবস্থায় ডাক্তারদের সম্মান না দেয়া হোক। তাচ্ছিল্য করবেন না।

সুলেখক ডা. আহমেদ জোবায়ের বলেন ,
মিথিলা ফারজানা একাত্তর জার্নাল নামক টকশো তে গত বছর রুগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন চিকিৎসক মারা যাওয়ায় কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান বা স্বীকৃতি পাননি একজন চিকিৎসক এর এমন দাবীর প্রেক্ষিতে বলেন কিনা তাইলে তো ঢাকার মেথরদেরও সম্মান দেওয়া উচিত।।

মৃত ডাক্তারদেরকে এমন বিচিত্র তুলনার বিষয়ে তিনি বলেন,
সেই চিকিৎসক এর পরিবার কতটা কষ্ট ও অপমানিত
হয়েছে ভেবে মনটা বিষিয়ে উঠেছিলো।।

এরমধ্যে একজন মানুষ এই টেক্সট দিলেন।
মনটা কিছুটা হাল্কা হলো।।
এই সহজ সরল মানুষগুলোর ভালবাসা ই আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায় কাজ করে যেতে নীরবে।।

 

ডা. বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন,

সুইপার, পরিচ্ছন্ন কর্মী দের একাত্তর টিভি চাইলেই সংবর্ধনা দিতে পারে,
আমরা তো নিষেধ করি নাই।
মিথিলার উপস্হাপনায় সুইপার, পরিচ্ছন্ন কর্মী এই সব আনসাং হিরো দের আনার কথা ওনার নিজের কখনো মনে পরে নাই। বেটার লেট দেন নেভার।

ওনারা বিতর্ক সৃষ্টি করতে ভালবাসেন।
দিন শেষে ব্যবসাটাই গুরুত্বপূর্ণ, গঠনমূলক আলোচনা, যুক্তিপূর্ণ তর্ক ব্যবসা সেই পরিমাণ বাড়ায় না।
প্রতিক্রিয়ায় ডা. কামরুল হাসান সোহেল লিখেছেন,

ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়,চিকিৎসা দিতে হয়। ডেংগু, করোনা সহ যেকোন দুর্যোগে তাদের থাকতে হয় ফ্রন্টলাইনে। রোগীদের সেবা দিতে হয়।কিন্তু তাদের দেয়া হয় না ঝুঁকি ভাতা।কেন এ অবিচার?

 


সুলেখক , চিকিৎসক ও রোগী অধিকার সংগ্রামী ডা. জাহিদুর রহমান এক ফেসবুক লেখায় বলেন ,

এখন বিভক্তির সময় না ভাই। একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে সাংবাদিক তকমা দিয়ে সত্যিকারের সাংবাদিকদের গণহারে শত্রু বানায়েন না। আমরা কিন্তু সাংবাদিকদের মাধ্যমেই মিডিয়ায় নিজেদের মতামত দিই। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন সবচে ভালো হেলথ রিপোর্টিং হয়। তারচে বরং ঐ অনুষ্ঠানে যে অধ্যাপক দৃঢ় কণ্ঠে ডাক্তারদের ন্যায্যতার কথা বলেছেন, তাঁর প্রশংসা করুন।

একজন জুনিয়র আমলার বাড়াবাড়ি আচরণের জন্য দেশের সব আমলাদের শত্রু বানায়েন না। তারচে বরং আমলাদের সাথে বিশেষায়িত জ্ঞানগুলো শেয়ার করুন। প্রশাসক হিসেবে আমরাও কিন্তু সফল না।

একজন ব্যাংকার পিপিই পড়ে অফিস করছে বলে সব ব্যাংকারদের টিটকারি দেয়া বন্ধ করুন। আমি ডাক্তার হয়েও যদি রোগী না দেখেন, তাহলে আপনার পিপিই লাগবে না। বরং ঐ ব্যাংকার দিনে কয়েকশ মানুষের সংস্পর্শে আসেন, পিপিই তারই লাগবে।

একটা বৈশ্বিক মহামারী চলছে। ৮ লাখ আক্রান্ত, ৪০ হাজার মৃত। প্রতিদিন টেস্ট হচ্ছে মাত্র ১০০টা করে, ফ্লু কর্ণারগুলোর বেশিরভাগ অসম্পূর্ণ, আইসোলেশন ওয়ার্ডের সাথে আইসিইউ সাপোর্ট নাই, দেশে ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ৫০০ টা, আসুন এসব নিয়ে চিন্তা করি, বলি, লিখি, কাজ হবে।

তার বিষয়ে আমাদের পেশার সন্মানার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অবশ্যই উচিৎ: 
অধ্যাপক ডা. এম. এস. কবীর জুয়েল

লিখেছেন, এদেশে কোন ক্লিনার/মেথর/সুইপার এ ধরনের অপ্রতিরোধ্য ছোঁয়াচে অদৃশ্য জীবানুকে জ্ঞাতসারে ঝুঁকি নিয়ে আলিঙ্গন করছেননা,পরিস্থিতির ভয়াবহতা ওরাও বোঝেন; তার প্রমান-- মিরপুরের টোলারবাগ এলাকার সেই 'Isolated Family' যাদের বাবা কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পর তাদের বাসার ময়লা কেউ নেয়নি,পরে টোলারবাগ বাসিন্দাদের সমিতি ও পুলিশের সহায়তায় এর একটা সাময়িক সমাধান করা হয়,অথচ আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের চিকিৎসকগণ প্রথম থেকেই ক্ষীন বিলম্ব না করে ঢাল-তলোয়ার (PPE) হীনভাবে করোনা মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো,আমার জানামতে একাত্তর চিকিৎসকদের এ সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে আদৌ কোন রিপোর্ট করেনি।
যেখানে সারা দেশে অপাত্রে(ব্যংকার,সাংবাদিক,ওয়াসা ও বিদ্যুৎকর্মী ইত্যাদি) PPE বিতরিত হয়ে
সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলোতে PPE Show চলছিলো আর আমাদের ডাক্তারগণ PPE এর জন্য হাহাকার করছিলো তখনও এ ধরনের সাংবাদিকরা আমাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেনি,বরং দেখা গেলো গাজীপুর পৌরসভা মেয়র সাংবাদিকদের PPE প্রদান করছেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য,আর সেটা ওরা গর্বভরে মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিলো, আমি বেশ কয়েক বছর দেশের বাইরে কন্সাল্ট্যন্ট হিসেবে চাকুরী করেছি,ওখানেও Medical Emergency-এর মুখোমুখি হয়েছি,কিন্তু PPE এর এমন উদ্ভট ব্যবহার আর চিকিৎসা পেশার প্রতি গণ মাধ্যমগুলোর বিমাতাসুলভ,অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কেবল আমাদের মতো দেশেই সম্ভব,যারা শক্তের ভক্ত নরমের যম নীতিতে অভ্যস্ত।
BBC,CNN,AL-JAJIRA,GULF NEWS চ্যনেলগুলো দেখুন, ওখানে Health Reporter সম্পূর্ণ আলাদা,যাদের নিত্যদিন সাস্থ্য সম্পর্কিত বিশদ
জ্ঞানার্জন করতে হয় এবং প্রতিমাসে সিনিয়র Medical Personal কতৃক তা মূল্যায়িত হয়,আমাদের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা এখানেই যে,রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এরা বালখিল্য আচরণে বেপরোয়া হয়ে গেছে::
উপরোক্ত অনুষ্ঠানে আমাদের শ্রদ্ধেয় চিকিৎসকগণ তাদের নিজস্ব গাম্ভীর্য বজায় রাখতে তার সাথে আর বদানুবাদে জড়াননি,এ   উপস্থাপিকা  জানেই না, কিসের সাথে কি তুলনা করতে হয়,সে বলতে পারতো "শুধু চিকিৎসক নয়,তাহলে তো নার্স-ওয়ার্ড বয়-ফ্লেবোটমিস্ট-এম্বুল্যান্স চালক ইত্যাদি চিকিৎসা পেশার সকলকেই করতালী দিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে হবে কারন সকলেই কোভিড-১৯ এর সমঝুঁকিতে রয়েছে" তা না বলে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশাজীবিদের সাথে সে সম্পুর্ন অপ্রাসঙ্গিক এক পেশাজীবিদের তুলনা করেছে। সমাজে কুলে,মুটে,মজুর,মেথর সব পেশার প্রতি আমাদের সন্মান রয়েছে;সমাজ বিনির্মানে সবাই ভূমিকা রাখছে,কিন্তু জাতির ক্রান্তিলগ্নে Health Emergency-কালীন সময়ে কারা অধিক প্রশংসার দাবিদার তা বুঝবার ক্ষমতা যে
সাংবাদিকের নেই,তার বিষয়ে আমাদের পেশার সন্মানার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অবশ্যই উচিৎ।
BMA থেকে তার বিরুদ্ধে BFUJ(Bangladesh Federal Union of Journalists) ও PIB(Press Institute of Bangladesh)-বরাবর লিখিত অভিযোগ করে তার সাংবাদিকতা পেশার সাময়িক স্থগিতাদেশ চাওয়া যেতে পারে।

অধ্যাপক ডা. এম. এস. কবীর জুয়েল
অধ্যাপক, আশিয়ান মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল

  • এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল (নিউরো-সাইকিয়াট্রি);
  • ডক্টর অফ মেডিসিন – (এম.ডি) মনোরোগ;
  • জে এস পি এন-ফেলো (JSPN-Fellow) -জাপান;
  • সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি;
  • সৌদি বোর্ড এলিজিবল ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী;
  • ভিজিটিং কনসালটেন্ট, মনোরোগ বিভাগ, আল জউফ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব;
  • সহযোগী অধ্যাপক ও টেলি-সাইকিয়াট্রি কনসালটেন্ট
    এশিয়ান ইন্সিটিউট অফ মেডিসিন সায়েন্স টেকনোলজি (AIMST), কেদাহ,
    মালয়েশিয়া এবং শেখ কামাল সাইকিয়াট্রি হসপিটাল, বাহরাইন
  • ইউনিট প্রধান, সাইকথেরাপী এন্ড কাউন্সিলিং উইং , মনোরোগ বিভাগ,
    স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হসপিটাল, ঢাকা

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়