Ameen Qudir

Published:
2020-03-15 14:23:52 BdST

"আমার মা একটা ডাইনি":সেভেনের পড়ুয়া বলল তার স্কুলের শিক্ষকদের কাছে: কিন্তু কেন ?


ফাইল ছবি। এই হাসিখুশি সন্তান প্রযুক্তির অপব্যবহারে বদলে যেতে পারে। এই কাহিনির চরিত্র নাম প্রতিকী ।

ডা. নাসিমুন নাহার মিমমি
জনপ্রিয় লেখক ও লোকসেবী চিকিৎসক

___________________________

"আমার মা একটা ডাইনি" বলেছে গ্রেড সেভেনে পড়ুয়া এক বাচ্চা তার স্কুলের শিক্ষকদের কাছে।
ভাবা যায় বলুন ? কিন্তু ঘটনা সত্য।

বাচ্চাটা আমার ছেলের ক্লাশমেট। আম্মুকে স্কুলের এক্সাম শীট, রেজাল্টের নম্বর, এক্সাম ডেট ভুল বলেছে। মায়ের সন্দেহ হওয়াতে উনি আজকে এসেছিলেন আমাদের বাসায়। আহ্ নাফের সাথে কথা বলতে। আহু ওনার ছেলের নম্বরগুলো জানে কিনা জানতে চাইলেন। স্কুলে কেমন করছে লেখাপড়াতে ওনার ছেলে, দুষ্টামি করছে কিনা সেসবও জিজ্ঞেস করলেন।

আমার সাথেও কথা হলো ভাবীর। জানতে চাইলেন আহুদের সব লেখাপড়া কি ইন্টারনেটে দিয়ে দেয় স্কুল থেকে ? আহু কোন কোম্পানির স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ব্যবহার করছে ?

আমি বললাম আহুর কোন ফোন নেই। বাসাতে একটা বাটন আলা নরমাল ফোন আছে। আমি হাসপাতালে গেলে ঐটা থাকে বাসাতে। এটার নম্বর আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। ওর কারো সাথে কথা বলতে হলে আমার মোবাইল ব্যবহার করে। আর একটা ট্যাব আছে। স্কুলের টিচারদের সাথে গুগলে একটা হোমরুম আছে। ঐ গ্রুপে লেখাপড়া সংক্রান্ত ডিসকাস হয়। কিন্তু তাও লিমিটেড সময়ে।

ভাবী তখন বললেন ট্যাব আর ল্যাপটপেই নাকি থাকে ওনার ছেলে সারাদিন। দুইটা আইফোনও আছে ওর। কি করছে প্রশ্ন করলে নাকি বলে লেখাপড়া করছে স্কুলের।

কথার এ পর্যায়ে আমি চমকালাম। বলেই ফেললাম গ্রেড সেভেনের ছেলের আইফোন !! তাও দুটো ! কেন ?

ভাবী জানালেন ছেলের বাবা বিদেশে থাকে। দেশে আসার সময়ে নিয়ে আসে গেজেটস। তাছাড়া সন্তান চাইলে না করবেন কিভাবে ? ওনাদের তো আর টাকা পয়সার অভাব নেই।

এই পর্যায়ে একটু থমকালাম আমি।
আহু এর আগে আমাকে কয়েকবার বলেছে এদের কথা। মা বাবার একাডেমিক এডুকেশন একটু কম। ছেলেটাই এটা বলেছে। কিন্তু প্রচুর টাকা ওদের। ছেলেটার বাবা বিদেশে থাকে। ওরাও চলে যাবে। তাই লেখাপড়ায় বেশি আগ্রহ নেই ছেলেটার। বিদেশে যেয়ে নাকি বাবার মোবাইলের বিজনেস সেই দেখবে।

ভাবী আবার বললেন--ছেলে আজকাল মিথ্যে বলছে তাকে। বিকেলে খেলতে বের হয়ে বাসায় ফিরে আটটা নয়টাতে। বেশ দুঃখের সাথেই বললেন কথাগুলো।

কষ্ট লাগলো আমার। কি বলব আসলে !

ভাবী চলে গেলে আহু বলল -- মা ***রান যে আন্টির উপরে রাগ এর পেছনে একটা কারন আছে। ওকে টিচার সকাল সাতটাতে পড়াতে আসে। এরপরে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে সাড়ে তিনটার সময় আরেক টিচার আসে পড়াতে। এরপর রাতেও আরেকজন টিচার পড়ায়। শুধু তাই না। আন্টি ওকে দিয়ে পিএসসি পরীক্ষাও দিয়েছে। ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র কেন দিবে এই পরীক্ষা? সারাদিন আন্টি খালি পড় পড় বলে। বিকেলে খেলতে যেতে দিত না আগে। এজন্য এখন ও নাকি একাই বের হয়ে যায় বাসা থেকে মা'কে না বলেই। ও বলেছে আরেকটু বড় হলে মা বাবার সাথে থাকবে না। এরা বিরক্তিকর, মূর্খ। আলাদা একটা ফ্ল্যাট কিনবে। সেখানে থাকবে।

আমি পুরোই হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম ড্রইংরুমে। গ্রেড সেভেনের একটা বাচ্চা এসব ভাবছে !!! অথচ এই সন্তানের জন্যই তো বাবাটা বিদেশে পরে আছেন। কত পরিশ্রম করে রোজগার করছেন। মা স্বামীহীন একাই দেশে সন্তান নিয়ে পরে আছেন। কি লাভ তাহলে এই স্যাক্রিফাইসের ?

আসলে এজন্যই আমি সব সময়ই বলি প্যারেন্টিং একটা শিক্ষার বিষয়। শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দিলেই মা বাবা হওয়া সম্ভব না। শুধু টাকা পয়সা খরচ করলেই ভালো মা বাবা হওয়া হয় না। শেয়ারিং, কেয়ারিং, মোরালিটি, ভ্যালুজ এসব হাতে কলমে নিজে পালন করে শেখাতে হয় সন্তানকে। এত সহজ নয় সন্তান লালন পালন করা। খালি শাসন কিংবা খালি আদর কোনটাই অতিরিক্ত ঠিক না প্যারেন্টিং এ। এত সহজ নয় ভবিষ্যতে বড় হবার পরে সন্তানের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান পাওয়া।

এই পৃথিবীতে একমাত্র সন্তানের কাছেই অযৌক্তিক আবেগে আটকে যায় মা বাবা। তাই সন্তানকে জজ ব্যারিস্টার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ক্রিকেটার রাজনীতিবিদ ধনকুবের বানানোর আগে মানুষ বানান। না বলতে শিখুন সন্তানকেও তার অকারনে চাহিদাতে। অঢেল টাকা আছে বলেই সেটাকে যোগ্যতা হিসেবে না দেখুন।
নিজে সৎ পথে চলুন। সন্তান জানুক তার মা বাবা তাকে একটা সুন্দর জীবন দেবার জন্য কত কোটি কোটি ঘামের ফোঁটা ঝড়াচ্ছে শরীরের মনের ....... পুরোটা জীবনের।

______________

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়