Ameen Qudir

Published:
2020-03-10 19:24:28 BdST

মেডিকাল সায়েন্স মস্করার বিষয় নয়: না বুঝে এক্সপার্ট ওপিনিয়নে নাক গলালে সর্বনাশ নিশ্চিত


 

ডেস্ক
___________________

চোখের ডাক্তার ওয়েনলিয়াং-র মর্মান্তিক মৃত্যু , অনন্য অবদানসহ সব বিষয় বিশ্লেষণ করে সায়ন্তন ভট্টাচার্য নির্মোহ চিত্তে কিছু বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও সত্য তুলে ধরেছেন। তা পাঠকদের জন্য প্রকাশ হল।
সায়ন্তন ভট্টাচার্য লিখেছেন,
ড. লি ওয়েনলিয়াং। বয়স চৌত্রিশ, পেশায় চোখের ডাক্তার। আজ থেকে তিনমাস আগেও যাকে পৃথিবীর কেউ চিনত না। আজ চেনে কারণ ড. লি ছিলেন প্রথম ডাক্তার যিনি করোনাভাইরাস আউটব্রেকের সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর- ডিসেম্বর থেকেই উহান শহরের হাসপাতালগুলোতে অজস্র রেসপিরেটরি ডিজিজের কেস আসতে থাকে। চীন ঘরপোড়া গোরু, ২০০৩ সালে আসা সার্সের ভুত (আরেক ধরনের করোনাভাইরাল ইনফেকশন) তখনও সবার মাথায় ঘুরছে। ড. লি প্রথম তার বন্ধুদের বানানো উইচ্যাট গ্রুপে বলেন সার্স লাইক ইনফেকশন আউটব্রেকের কথা, তখনও কোভিড- ১৯ আইডেন্টিফাই করা যায়নি। তিনি আরও জানান বন্ধুদের প্রত্যেকে যেন উহানের সি ফুড এবং অ্যানিম্যাল মার্কেট থেকে দূরত্ব বজায় রাখে কারণ রোগের সংক্রমণ সম্ভবত হচ্ছে বাদুড় এবং তার পরবর্তী রোগের বাহক বা ভেক্টর প্যাঙ্গোলিনদের মাধ্যমে। ঘটনা এই অবধি ঠিকই ছিল, গোলমাল বাঁধল তার পরেরদিন যখন লোকাল গভর্ণমেন্ট থেকে ড. লি দের উইচ্যাট গ্রুপটাকে ব্যান করা হল। ড. লি দমে না গিয়ে চাইনিজ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ওয়াইবোতে আসেন এবং মানুষকে রোগটার ব্যাপারে সতর্ক করার চেষ্টা করেন। তারপর? ড. লি ওয়েনলিয়াং কে তার নিজের হাসপাতালেই কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়, তাকে লোকাল থানায় ডেকে এনে জোর করে মুচলেকা লেখানো হয় এই মর্মে- "আমি আজকের পর থেকে আর কোথাও মিথ্যে খবর রটাবো না, যদি রটাই আমার বিরূদ্ধে পুলিশ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"

গল্পটা খুব সিম্পল! চাইনিজ গভর্ণমেন্ট গোটা পৃথিবী থেকে ইনফর্মেশন চেপে রেখে করোনাভাইরাসকে মূলেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। মুশকিল হল ভাইরাস গ্লোবাল পলিটিক্স বোঝেনা, সেটা আবার চাইনিজ লুনার নিউ ইয়ার আসার সময়। উহান সহ গোটা চীনদেশে দুনিয়াসুদ্ধ মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে। করোনার প্রকোপ আলোর গতিতে ছড়ানো শুরু করলে, আসল ঘটনার প্রায় এক মাস পরে চাইনিজ গভর্ণমেন্ট ডাব্লু.এইচ.ও কে এই ভাইরাসের সম্পর্কে জানায়। ড. লি ততদিনে নিজে করোনা ইনফেকশনে আক্রান্ত কারণ তার পেশেন্টদের মধ্যে এক বৃদ্ধা ডায়গনোসিস ছাড়া উহান হাসপাতালে ভর্তি ছিল। চায়নার বিভিন্ন জায়গায় এখন ড. লি ওয়েনলিয়াঙের স্মৃতিতে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে কারণ মানুষটা শেষ অবধি সেই করোনাতেই মারা গিয়েছেন। আর মারা যাওয়ার আগে আমাদের সবাইকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখিয়ে গিয়েছেন- মেডিকাল সায়েন্স মস্করার বিষয় নয়, সেখানে না বুঝে এক্সপার্ট ওপিনিয়নে নাক গলালে সর্বনাশ নিশ্চিত। ভালো কথা, এই করোনাভাইরাসের মত রোগদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় জুনটিক ডিজিজ বলে। অর্থাৎ যে- সমস্ত রোগ পশুপাখিদের থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়।

তথ্যসূত্র- দ্য ল্যান্সেট, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়