Ameen Qudir

Published:
2020-02-23 07:06:43 BdST

কৃষ্ণপক্ষ:ঘোর অন্ধকার:আলোআঁধারিতে ষোলো বছরের কিশোরী দাঁড়িয়ে


 ডা. রাজীব হোসাইন সরকার
ঢাকা বইমেলার জনপ্রিয়তম তরুণ লেখক
________________________

মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক রাত দশটায় আমাকে ফোন করলেন। চাপা উত্তেজনায় ফিসফিস করে বললেন,
‘নাজিব, চলে আসো। Hurry.’
কিছু মানুষের ফিসফিস করে বলা কথায় পাত্তা না দিয়ে উপায় নেই। আমি ডিউটি রুম থেকে ভেজা রেইনকোট পরে হুপহাপ ধুপধাপ করে নিচে চলে আসলাম। নিচে অধ্যক্ষের গাড়ি। দরজা খোলা হল। রেইনকোট খুলে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হল না। বড়শির হুক ধরে শিকারিরা যেভাবে টান দেয় খানিকটা সেভাবেই আমাকে টেনে তোলা হল।
গাড়ি হাইওয়েতে। কৃষ্ণপক্ষ। ঘোর অন্ধকার। অন্ধকারে গাড়ির হেডলাইটের আলোয় বৃষ্টির দানা জমে যাচ্ছে। ড্রাইভার মৃদ্যু স্বরে গান ছাড়ার চেষ্টা করল। অধ্যক্ষ সাহেব ধমক দিয়ে গান বন্ধ করে দিলেন। সাধু সন্ন্যাসীদের গভীর ভাবনায় শুকনো পাতাদেরও খসখস করে নড়াচড়া করা নিষেধ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি শুকনো পাতা বৈ কিছু নই। অধ্যক্ষ সাহেব নিশ্চয় কিছু ভাবছেন। গভীর ভাবনা। তার বামহাত ঠোঁট আর থুঁতনির উপর নড়াচড়া করছে।
গাড়ির ভেতরে আলো নেই। অন্ধকারে চুপচাপ বসে থাকার ব্যাপারে আমার ঘর আপত্তি আছে। কথা বলাও যাচ্ছে না। সহযাত্রীর আগ্রহ না থাকলে অগ্রাহ্য করা যায়। ঘুমিয়ে পড়া যায়। মেডিকেলের অধ্যক্ষ পর্যায়ের রাশভারী মানুষের পাশে বসে আমি কিছুই করতে পারছি না। সিনা টানটান করে ভেজা রাস্তায় বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
‘নাজিব?’
‘জ্বি স্যার?’
‘কী বিড়বিড় করছ?’
‘আন্দাজ করার চেষ্টা করছি, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?’
‘কিছু পেলে?’
‘পাইনি।’
‘লজিক্যালি প্রসিড করো। একটা একটা করে সুতো আলাদা করার মতো করে চিন্তা করো।’
‘লজিক কাজ করছে না।’
‘কেন?’
‘ড্রাইভার বজ্রবেগে গাড়ি টানছে। বৃষ্টিতে রাস্তা পিছল। ভয় পাচ্ছি।’
অধ্যক্ষ ড্রাইভারকে বললেন,
‘আনোয়ার, কতক্ষণ লাগবে?’
ড্রাইভার মাথা ঘুরিয়ে বলল,
‘ত্রিশ মিনিট লাগবে স্যার।’
আমি অধ্যক্ষকে বললাম,
‘আমরা কী পীরগঞ্জ যাচ্ছি?’
‘কীভাবে বুঝে ফেললে?’
‘মিটার দেখা যাচ্ছে। গাড়ির স্পীড সত্তুর। ত্রিশ মিনিটে যাব পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। রংপুর থেকে পীরগঞ্জ এর দূরত্ব চৌত্রিশ কিলোমিটারের কাছাকাছি।’
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক আর কথা বললেন না। বৃষ্টির বেগ আরো বেড়েছে। আমি সিটবেল্ট বেঁধে সিটের সাথে লেপ্টে বসে রইলাম।
.
পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডর্মিটরির দোতলায় থাকেন আবাসিক সার্জন ডাক্তার আলি জাফর। আলি জাফর ডর্মিটরির কলাপসিবল গেটের সামনে বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গাড়ির আলো দেখে এগিয়ে আসলেন।
মধ্যবিত্ত ধরণের পোশাক। লুঙ্গি পরা। কাদার জন্য লুঙ্গি হাঁটু পর্যন্ত তুলে রাখা। পায়ে লাল রঙ্গের বার্মিজ স্যান্ডেল। স্যান্ডেল কাঁদার ভেতর ডুবে যাচ্ছে। কাদায় স্যান্ডেল ধরে কিছুক্ষণ টানাটানি করে ব্যর্থ হয়ে হাতে নিলেন।
আলি জাফর অধ্যক্ষকে সালাম দিলেন। সালামের জবাবের অপেক্ষা না করেই বগলের তলা থেকে একটা ছাতা এগিয়ে দিলেন।
পুরো ব্যাপারটা অতিরিক্ত রকমের স্বাভাবিক। তবে একবারো আমার দিকে খেয়াল করলেন না। কয়েকবার আশেপাশে তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। অধ্যক্ষ স্যারের মাথায় ছাতা। তিনি খানিকটা অনুসারীদের মত আলি জাফরের পিছু হাঁটা শুরু করলেন।
ডর্মিটরির আশপাশে বেশ ঝোপঝাড়। ল্যাম্পপোস্টগুলো আলো ঝোপের কাছে গিয়ে ঘন হয়ে আছে।
সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলার ঘরে আসলাম। আলি জাফর বদনায় করে পানি এনে রেখেছেন দরজার কাছে। অধ্যক্ষ এবং আমি পা ধুয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলাম।
‘স্যার এখানে বসুন। জানালার পাশে বসার দরকার নাই।’
মোজাম্মেল হক কী যেন মনে করে জানালার পাশেই বসলেন। তখনই কারেন্ট চলে গেল। আইপিএস খট করে শব্দ হল। আলো জ্বলে আবার নিভে গেল।
কারেন্টের আলোয় যে পরিবেশ আমার কাছে স্বাভাবিক লেগেছে সেটা এখন অস্বাভাবিক লাগতে শুরু করল। আলি জাফরের চলাফেরাও বেশ রহস্যময় লাগছে। আমি চুপচাপ কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম।
১। মধ্যরাতে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পর্যায়ের কাউকে আকস্মিক ডেকে আনবার কারণ নিশ্চয় ছোটখাটো কিছু নয়। বড়সড় কিছু হবার সম্ভাবনা আছে। বড়সড় ব্যাপারটা কী?
২। অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের গলার স্বরে উত্তেজনা কেন?
৩। আলি জাফর কেন সালাম ছাড়া আর কোনো ভদ্রতাসূচক কথা বললেন না? তারা দু’জন পূর্বপরিচিত? পূর্ব পরিচিতরাই আলগা ভদ্রতার ভেতর যাবে না।
৪। জানালার কাছে বসতে কেন নিষেধ করলেন?

আলি জাফর ফিরলেন দশ মিনিট পর। হাতে হারিকেন। চিমনি কয়েকদিন পরিষ্কার করা হয়নি। ছাই লেগে আছে। সলতে উসকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু আলো হচ্ছে না। বর্ষার প্রবল বর্ষণের রাত্রি আর হারিকেনের আলো একসাথে রহস্যময় পরিবেশটাকে আরো গাঢ় করে তুলছে।
আলোআঁধারি ঘরে যে ব্যাপারটা আমাকে মুগ্ধ করল সেটা হল ঘরভর্তি বেলুন। লাল নীল হরেক রকমের বেলুন ঝুলিয়ে রাখা।

অধ্যক্ষ নড়েচড়ে বসলেন। কিন্তু কথা বললেন না।
আলি জাফর দুই কাপ চা রাখলেন। অধ্যক্ষ চা নিলেন না। আমি হাত বাড়িয়ে চা নিলাম। কাপে চুমুক দিয়ে অবাক হলাম। অসাধারণ চা। মশলা দেওয়া হয়েছে। এলাচের ঘ্রাণ আসছে কিন্তু চায়ে এলাচ নেই।
‘জাফর সাহেব, বলুন।’
আলি জাফর নির্লিপ্ত গলায় বললেন,
‘ঘটনা ঘটেছে ষোল বছর হবে। পুরো ষোল নয়। আগামীকাল ষোল হবে। কাকতালিয়ভাবে সেদিনও এমন বৃষ্টি হচ্ছিল।
নাইট শিফট শেষ করে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে ফিরেছি। দরজা বন্ধ করে ক্লান্ত হয়ে সোফায় শুয়ে সিগারেট খাচ্ছি।
দরজায় কেউ একজন নক করল।
রাত দশটায় কেউ সাধারণত আমার দরজায় নক করে না। কাজের লোক আমি অপছন্দ করি। একাকীত্ব ব্যাপারটায় আমি মোটামুটি মাতালের মত আসক্ত।
দরজায় নক করার পর কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম।
হসপিটালে দু’জন জুনিয়র ডাক্তার ওভারনাইট ডিউটি করছে। খুব বেশি জটিল কিছু হলে নিয়ম হল স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের নতুন অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিকেলে রেফার করা হবে। এখানে বড়সড় ক্যাজুয়ালটি সামাল দেবার মত জনবল কিংবা যন্ত্রপাতি নেই। আমি মোটামুটি নিশ্চিত- এমন কিছুই ঘটেনি। কিন্তু এমন সময় কেউ নক করবে কেন? আমি যৌক্তিক কারণ খুঁজছি।
দরজায় আবার নক করা হল।
আমি দ্বিতীয়বার অপেক্ষা করছি। দরজার ওপাশে যে আছে, একসময় বিরক্ত হয়ে যাবে। অপেক্ষা ফলপ্রসু হল না। দীর্ঘ বিশমিনিটেও গেল না। আমি ক্লান্ত পায়ে দরজা খুললাম।
.
একজন আপাদমস্তক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন।
পোশাক আশাক দেখলে প্রাথমিক ধারণা হতে পারে- ব্যক্তিজীবনে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেছেন। শীতে কাঁপছেন।
কিছু মানুষকে প্রথম দর্শনেই অবহেলা করা যায়। ভদ্রলোককে আমি অবহেলা করতে পারলাম না। আজন্ম ভীড় এড়িয়ে চলা মানুষ হয়েও আমি তাকে ভেতরে আসতে বললাম। অথচ ভদ্রলোক তখনো কিছুই বলেননি। ভেতরে আসবে নাকি বাইরে থেকেই প্রয়োজনীয় কথা সেরে চলে যাবে এই ব্যাপারটা আমি জিজ্ঞাসা না করেই তাকে সোফায় বসতে দিলাম।
তিনি আমাকে বললেন,
‘সিগারেট দিবেন একটা?’
ভদ্রলোকের সিগারেট চাইবার ধরণ দেখে মনে হল তিনি আগে থেকেই জানতেন আমি সিগারেট খাই। অবশ্য রুমে ঢুকে যেকোন বুঝতে পারবে আমি কিছুক্ষণ আগেই সিগারেট খাচ্ছিলাম।
.
আমি সিগারেট দিলাম। শুকনো তোয়ালে আনলাম। ফ্রিজে খাবার ছিল, গরম করতে দিলাম। ব্যাপারটা অবশ্য অযৌক্তিক। কিন্তু আত্মসম্মোহিতের মতোই আমি তার সাথে প্রাথমিক ভদ্রতা সেরে ফেললাম।
ভদ্রলোক মাথা মুছতে মুছতে বললেন,
‘আমি লজ্জিত।’
‘কেন?’
‘একটা কাজে যাচ্ছিলাম। বৃষ্টির কারণে থামতে হল।’
‘বৃষ্টি তো সকাল থেকেই হচ্ছিল।’
ভদ্রলোক লজ্জা পেলেন।
‘তাও ঠিক।’
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
‘আমার দরজায় কেন নক করেছেন?’
‘বাইরে থেকে আলো জ্বলতে দেখছিলাম। অন্যগুলো তো অন্ধকার। তাই আপনাকেই নক করলাম।’
‘আমি আলো নিভিয়েই সিগারেট টানছিলাম। আপনি মিথ্যা বলছেন কেন?’
‘ভদ্রলোক আরেকবার লজ্জা পেলেন। কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আমি নিজেও খানিকটা অপ্রস্তুত। কী বলা যায় ভাবছি। আমাকে ঘুমুতে হবে। সকালে ডিউটি। শরীরের ক্লান্তি দূর করা দরকার। দেখে মনে হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে।
‘আপনি কিছু বলতে চান?’
‘না। আমি এখুনি চলে যাব।’
ভদ্রলোক ‘এখুনি’ বললেও উঠলেন না। দীর্ঘক্ষণ বসে রইলেন। তার হাত পা মৃদ্যু কাঁপছে। সম্ভবত শীত লাগছে। আমি আলমারি থেকে শাল বের করে দিলাম।
ব্যাপারগুলো এত স্বাভাবিক লাগছে যে আমি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা খাবার বের করলাম। গরম করলাম। এরপর টেবিলে দু’জন বসে খানাপিনা করলাম।
গল্পের এই মুহুর্তে অধ্যক্ষ সাহেব আলি জাফরকে থামালেন।
‘একজন অপরিচিত মানুষকে আপনি রাতে খাবার গরম করে খাওয়ালেন কেন?’
‘এর পেছনে যৌক্তিক কারণ নেই। সম্ভবত আমি দীর্ঘদিন একা থাকতাম এজন্য আকস্মিক কোন মেহমানকে দেখে সময়জ্ঞান করতে পারিনি।’
‘হতে পারে। এরপর বলুন।’
‘দীর্ঘ দুই ঘন্টা ভদ্রলোকের সাথে আলাপ করলাম। তার একটা মেয়ে আছে। এক বছর বয়স। এখনো হাঁটা শেখেনি। হামা-টামা দেয়। স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে সিলেট যাবেন এই বর্ষায়।
অতি সাধারণ কথা। কিন্তু আলাপ করতেও ভাল লাগছিল। ভদ্রলোকের শীতশীত ভাবটা একটু কমল। আর কাঁপছেন না। সিগারেট শেষদিকে। তিনি বললেন,
‘আজ আমাকে যেতে হবে।’
আমি বললাম, ‘ছাতা নিয়ে যান।’
‘ছাতা ফেরত দেবার জন্য আরেকবার আসতে হবে। সেটা তো সম্ভব নয়।’
‘ফেরত দিতে হবে না। নিয়ে যান।’
ভদ্রলোক ছাতা নিয়ে বৃষ্টিতে নামলেন। অন্ধকারে কাঁদার উপর দিয়ে বেশ কষ্ট করে হাঁটা শুরু করলেন। তার গায়ে আমার একমাত্র শাল।টা জড়ানো।
আমার মন খারাপ হয়ে গেল। অযৌক্তিক কারণে আমার মন খারাপ হয় না। কিন্তু ভদ্রলোকটি চলে যাবার পর আমার সত্যি সত্যিই মন খারাপ হয়ে গেল।
আমি গল্পের মাঝে প্রথমবার জিজ্ঞাসা করলাম,
‘গল্প শেষ?’
আলি জাফর ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘না। ভদ্রলোক চলে যাবার দশমিনিট পর হসপিটালের এক কর্মচারী ছুটে আসল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘স্যার চলেন।’
‘কেন?’
‘অনেক রোগী আসতেছে।’
‘কেন?’
‘রোড এক্সিডেন্ট।’
সাধারণরত এমন পরিস্থিতি কখনোই হয় না। অনেক রোগী আসলে জটিলগুলোকে দ্রুত টার্শিয়ারিতে রেফার করার কথা। নিশ্চয় অ্যাম্বুলেন্সের সংকুলান হচ্ছে না। আশেপাশে ম্যাস ক্যাজুয়ালটি হলে এমন হয়। রয়েসয়ে সবাইকে পাঠানো হয়।
ছাতা মাথায় বার্মিজ স্যান্ডেল পায়েই স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে গেলাম। প্রবল ভীড়। ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকছি।

দীর্ঘদিন এমন ভয়ংকর অ্যাক্সিডেন্ট দেখিনি।
পায়ের কাছে সারিসারি লাশ।
ঘন্টা দুয়েক আগে লালদিঘীতে বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে। পঁচিশজন স্পট ডেড। বাকীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দ্রুত স্কিনিং করা হল। যারা মন্দের ভাল, তাদের জুনিয়ররা ফাস্ট এইড দিয়ে কেবিনে পাঠিয়ে দিল। আমি ধরলাম সিরিয়াসগুলো।
ব্যাপারটা তখনই ধরে ফেললাম।
একটা ছোট্ট বাচ্চা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। মৃত। বাচ্চার পাশেই এক মহিলার মৃতদেহ। তার পাশে আমার ছাতা পড়ে আছে। ছাতা ভেজা। আমি ছাতার পাশে দাঁড়িয়ে চমকে গেলাম। চমকের ব্যাপারটা এভাবে হতে পারে আমি বুঝতে পারিনি। মহিলার পাশে যে ভদ্রলোক মৃত তিনি মিনিট বিশেকে আগেই আমার সাথে বসে চা খেয়েছেন। ডিনার করেছেন। সিগারেট খেতে খেতে গল্প করেছেন। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল তার শরীরে আমার নিজের দেওয়া শালটা জড়ানো।’
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক কী যেন মনে করে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘ব্যাপারটা কী এখানেই শেষ?’
‘না। আমি বাচ্চাটার শরীরে হাত দিলাম। চমকে গেলাম। বাচ্চা জীবিত। ঘুমিয়ে আছে।
আমি নিজহাতে দুটো ডেথ সার্টিফিকেট লিখলাম। বাচ্চাটাকে তুলে কেবিনে একটা বিছানায় রাখলাম। বাচ্চাটা কাঁদতে শুরু করল। কান্নাকাটি কিছুতেই থামছে না।
পরদিন ভদ্রলোকের পরিবারকে খবর দেওয়া হল। তারা আসল। কান্নাকাটি করে লাশ দুটো গাড়িতে তুলে চলে গেল।’
‘মেয়েটা?’
আলি জাফর থামলেন। চোখ নিচু করলেন। সেখানে স্পষ্ট অপরাধবোধের চিহ্ন।
‘মেয়েটাকে আমি রেখে দিলাম।’
‘ভদ্রলোকের পরিবারের কেউ কিছু বলল না?’
‘তারা জিজ্ঞাসা করল। আমি বললাম- এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।’
‘হসপিটালে তো এন্ট্রি করা আছে। রেকর্ড ঘাটলেই পেয়ে যেত।’
‘পেত না। তার কোন রেকর্ড আমি রাখতে দিইনি।’
‘এর কোন ব্যাখ্যা আপনি দিতে পারবেন?’
‘পারব। নিঃসঙ্গতা কিংবা পিতৃত্ববোধ থেকে আমি মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখে দিই।’
অধ্যক্ষ সাহেব কী বুঝলেন বোঝা গেল না। খানিকটা গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘এরপর?’
‘মেয়েটাকে আমি নিজের মত করে বড় করলাম। স্কুলে পড়ালাম। এখন কলেজে উঠেছে।’
‘এটা বলার জন্য ডেকেছেন?’
আলি জাফর চোখ বড়বড় করে তাকালেন। চোখের গভীর থেকে একটা ভয়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তিনি গলার স্বর নিচু করে বললেন,
‘আজ ওর বাবা এসেছে?’
অধ্যক্ষ হেসে ফেললেন।
‘বাবা মানে?’
আলি জাফর শঙ্কিত চোখে বললেন,
‘ওর মৃত বাবা এসেছে।’
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক আমার দিকে তাকালেন। তাকে দ্বিধান্বিত লাগছে। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘আপনার কথা শুরু থেকেই স্বাভাবিক লাগছিল। এইমাত্র অস্বাভাবিক দিকে মোড় নিচ্ছে।’
‘আমি জানি।’
‘অস্বাভাবিক ব্যাপারটা গল্পের মাঝে না টেনে আনলে কী গল্প পুর্ণতা পেত না?’
‘পেত। কিন্তু বাধ্য হয়েই আনতে হয়েছে। আমার ধারণা আপনি একটা কিছু বলতে পারবেন। আপনি সাইকিয়াট্রিস্ট।’
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক গম্ভীর হয়ে রইলেন। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতাও ভয়ংকর পর্যায়ে পৌছে গেল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,
‘উনি কোথায়?’
‘মেয়ের ঘরে। আমি ডেকে আনব?’
‘না।’
‘একবার দেখুন। এরপর কথা বলুন।’
‘না আমি দেখতে চাই না। আপনার হাস্যকর অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ভেতর জড়াতে চাই না।’
‘কেন স্যার?’
‘আপনাকে আমার অসুস্থ মনে হচ্ছে। আপনার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। কারণ মানুষ হিশেবে আপনি অতিশয় ভালো এবং ভদ্রলোক। আপনার পাঠানো অনেক ধরণের সাইকোলজিক্যাল ডিজর্ডারের রোগীকে আমি চিকিৎসা করেছি। আপনি নিশ্চয় ধরতে পারছেন- আপনার সমস্যাটা কোথায়?’
আলি জাফর কী ভাবলেন বোঝা গেল না। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। অধ্যক্ষ সাহেব সোফা থেকে উঠে আমাকে বললেন,
‘চলো নাজিব।’
আমি উঠলাম না। বিনয়ের সাথে অধ্যক্ষকে বললাম,
‘স্যার একটু বসুন প্লিজ।’
অধ্যক্ষ বিরক্ত হয়ে বসলেন। আমি ডাক্তার আলি জাফরকে বললাম,
‘আপনার রান্নাঘরটা কোনদিকে?’
‘কেন?’
‘একটা চা বানাবো।’
‘আমি বানিয়ে আনছি।’
‘না। আমি নিজেই বানাবো।’
আলি জাফর কী বুঝলেন বোঝা গেল না। তিনি বিরক্ত হয়ে আমাকে তার রান্নাঘরে নিয়ে গেলেন। তার হাতে হারিকেন। হারিকেনের আলোয় রান্নাঘর পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। আমি বললাম,
‘ওয়াটার হিটার নাই?’
‘না।’
তিনি একটা অ্যালুমিনিয়ামের কেটলি বের করে দিলেন।
আমি চুলোয় কেটলি বসালাম। পানি গরম করতে দিলাম। ফ্রিজ খুললাম। ফ্রিজে তেমন কিছু নেই।
আমি কেটলিতে ঢাকনা দিতে দিতে বললাম,
‘অধ্যক্ষ স্যার ব্যস্ত মানুষ। তাই বিরক্ত হয়ে আপনার ডায়াগনোসিস করে ফেলেছেন। আমার ধারণা- আপনি হয়তো সত্য বলছেন।’
‘হয়তো বলছেন কেন?’
‘কারণ সত্যের পক্ষেও অনেকগুলো যুক্তি লাগে। নইলে সত্য দাঁড়াতে পারে না।’
আলি জাফর বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘পাশের রুমের দরজার ওপাশে গেলেই সব পরিষ্কার হবে। চলুন।’
‘অবশ্যই যাব। কিন্তু ঘটনাটা এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, অধ্যক্ষ স্যারের মত সাইকিয়াট্রিস্টও আগ্রহ পাচ্ছে না। কেন বলুন তো?’
ডাক্তার আলি জাফর বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘আপনার কথা পরিষ্কার নয়।’
‘আচ্ছা পরিষ্কার করেই বলি। একটা মানুষ আপনার সাথে দুই ঘন্টা গল্প করল। অথচ মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে সে দশ কিলোমিটার দূর লালদিঘিতে গেল। অ্যাক্সিডেন্ট করল। উদ্ধার হয়ে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় পড়ে রইল। ব্যাপারটা কী যৌক্তিক লাগছে?’
‘যৌক্তিক নয় বলেই আপনাদের ডেকেছি।’
‘আচ্ছা। আমরা লজিক্যালি মুভ করি।'
'আচ্ছা।'
'আপনার ঘরে রঙবেরঙের বেলুন দেখেই প্রথম ধারণাটা আসে, কারো জন্মদিন। আপনার পুত্র কিংবা কন্যার হওয়া স্বাভাবিক। ধরা যাক, আপনার কথামতো আপনার একটা মেয়ে আছে।'
আলি জাফর ঠোঁট কামড়ে কথা শুনছেন।
‘আপনি আসার সময় অধ্যক্ষ স্যারকে একজোড়া জুতা পরতে দিয়েছেন। একটা ছাতা এগিয়ে দিয়েছেন। নিশ্চয় বাথরুমের জুতো দেননি। এই ঘরে আরেকজন আছে বলেই তার জুতো দিতে পেরেছেন। ধরা যাক, কেউ নেই। কিন্তু ছাতা কেন দুটো থাকবে?’
‘দুটো থাকতেই পারে। ছাতা এবং জুতো দুটোই আমার মেয়ের।’
‘ব্যাপারটা এখানেই খটকা লাগছে। মেয়েদের ছাতা আর আপনার দেওয়া ছাতার মধ্যে পার্থক্য নেই। লম্বা লোহার শিকের ছাতা আগের মানুষ ব্যবহার করত। ষোল বছরের একটা মেয়ে ফোল্ড করা যায় এমন ছাতা ব্যবহার করবে। নিশ্চয় বিশ বছর বয়স্ক ছাতা ব্যবহার করে না। আরেকটা ব্যাপার।’
‘কী?’
‘অধ্যক্ষ স্যারকে যে জুতো পরতে দিয়েছেন সেটা স্যারের পায়ের সাথে চমৎকার ফিট হয়েছে। স্যারের পায়ের সাথে আপনার পায়ের সাইজের মিল আছে। জুতোটা নিশ্চয় কোন মেয়ে পরে না। মেয়েদের জুতো হবে আকর্ষনীয়। আঁকারেও হবে ছোট।’
আলি জাফর বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘আর কিছু বলার আছে?’
‘আছে। যে ঘরে আপনার মেয়ে বেড়ে উঠছে সেখানে আপনি দ্বিধাহীনভাবে সিগারেট খেয়ে ধোঁয়ায় অন্ধকার করে রাখবেন না। মেয়ের ভালো মন্দ লাগার ব্যাপারটাও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।’
আলি জাফর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
‘আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি স্কিজোফ্রেনিক?’
‘না। এত দ্রুত কাউকে স্কিজোফ্রেনিক বলা ঠিক হবে না। যদিও আপনার রহস্যের ব্যাপারটি ষোল বছরের পুরোনো। দীর্ঘদিনের হিস্ট্রি। একশ দিন পার হয়েছে। স্কিজোফ্রেনিক হবার সম্ভাবনা বেশি। আরো কিছু লজিক আছে।’
‘কী?’
‘আপনি একা থাকেন। একা থাকতে ভালোবাসেন। সোশ্যাল উইথড্রল স্কিজোফ্রেনিয়ার একটা লক্ষণ।’
‘সোশ্যাল উইথড্রল তো মেজর কিছু নয়।’
‘হ্যা। কিন্তু আপনার ঘরে একটি ষোল বছরের মেয়ে ঘুরে বেড়ায় যার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে। হ্যালুসিনেশন ব্যাপারটা আপনার মধ্যে আছে।
প্রথম দেখায় স্যারকে সালাম দিয়েছেন কিন্তু আমার দিকে একবারো খেয়াল করেননি। কারণ আপনার মস্তিষ্ক আপনার চিন্তাকে কেন্দ্রিভূত করেছে একটা মাত্র সমস্যায়। বাকী পৃথিবীতে কিছু ঘটলেও আপনার কিছু যায় আসে না।’
‘আর?’
‘অবশ্য কিছু কর্মাকান্ড স্বাভাবিক। স্যারের সাথে দেখা হবার পর সালাম দিয়েছেন। কাঁদার কথা চিন্তা করে জুতো এনেছেন। বৃষ্টির কথা ভেবে ছাতা এনেছেন। পায়ে কাঁদা লাগতে পারে ভেবে দরজার সামনে বদনাভর্তি পানি রেখেছেন। এগুলো স্বাভাবিক মানুষের কর্মাকান্ড।’
‘এই পয়েন্টটা কিন্তু আপনার ডায়াগনোসিসের বিপক্ষে যাচ্ছে।’
‘হ্যা, যাচ্ছে। কিন্তু আপনার মেয়ের জন্মদিন ব্যাপারটা সব গুলিয়ে ফেলছে।’
‘কেন?’
‘আপনি যদি মেয়েটাকে কুড়িয়ে পান তবে তার জন্মদিন থাকার কথা নয়।’
‘আমি তাকে পাবার দিনটাই জন্মদিন হিশেবে পালন করছি।’
আমি আলি জাফরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আমি কিন্তু অন্যভাবে চিন্তা করছি।’
‘কী চিন্তা?’
‘Do You know, A kitchen says many thing?'
'মানে?'
'একটা রান্না ঘর অনেক কিছুই বলে। ধরা যাক, এই বাসায় একটা মেয়ে আছে। সে নিশ্চয় রান্নাঘরে যাবে। ঠিক?’
‘হ্যা।’
‘রান্নাঘরে আসবে কারণ এখানে রান্না করবে। কিন্তু আপনার হাড়িপাতিলের দিকে তাকান। গত ষোল কিংবা বিশ বছরের কোন আধুনিক হাড়িপাতিল এখানে নেই। ওয়াটার হিটার, রাইস কুকার, কারি কুকার, প্রেশার কুকার, ফ্লাস্ক কিছুই নেই। আপনি চা বানান অথচ পুরোনো কেটলিতেই।
আপনার ফ্রিজে মেয়ের জন্য খাবার থাকার কথা ছিল। সেটাও নেই। ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন?’
আলি জাফর নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। কিছু জবাব দিলেন না।’
‘রান্নাঘর আরেকটা কথা বলছে।’
‘কী?’
‘এখানে একটা সংসার ছিল। ষোল কিংবা বিশ বছর আগে। কোন নারী তার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে একটা সংসার সাজিয়েছিল। তার অনুপস্থিতিত্র পর সবটা থেমে আছে। তার প্রস্থানের দিনের মতোই পড়ে আছে রান্নাঘর। ’
আলি জাফর মাথা নিচু করলেন। মুখের ভঙ্গিমায় ভেঙ্গে পড়া মানুষের অভিব্যক্তি। আমি প্রশ্ন করলাম,
‘আমার ধারণা হল- আপনার স্ত্রী বাস অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। তার পেটে সন্তান ছিল। মেয়ে। সেও মারা যায়। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে মেয়ে ও মেয়ের জন্মতারিখ আপনি জানতেন। তাই হয়তো সেই তারিখে না দেখা মেয়ের জন্মদিন পালন করেন।’
আলি জাফর মাথা নিচু করেই আছেন। জানালা দিয়ে আসা ল্যাম্পপোস্টের আলো তার গালে পড়ছে। গালে সুক্ষ্ম জলের ধারা চিকচিক করছে।
‘আলি জাফর সাহেব?’
আলি জাফর ধরা গলায় বললেন,
‘জ্বি।’
‘আপনি সরকারি চাকরি করেন। অথচ ষোল বছর আপনার কোথাও বদলি হয়নি, ধারণা করা যায় আপনি আপনার অতীত স্মৃতি আর আপনার স্ত্রীর পায়ের চিহ্ন রাখা এই ঘর ছাড়তে পারছেন না। স্মৃতিকে ছেড়ে না যাওয়া অপরাধ নয়। আপনি ভয়ংকর লেভেলের একজন ভালোমানুষ। অনাগত অদেখা সন্তানের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আপনার কন্যাকে ফিরিয়ে এনেছে। যদিও সেটা হ্যালুসিনেশন, অদৃশ্য কিন্তু কন্যা তো।’
আলি জাফর দু হাতে মুখ চেপে ধরলেন। তার শরীর কাঁপছে। তীব্রভাবে তার ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে কান্না আসছে। শক্ত মানুষ। কান্না চেপে রাখার সব চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। আমি কথা বললাম না। রান্নাঘর থেকে চা বানিয়ে বাইরে আসলাম। অধ্যক্ষ সাহেব এখনো বিরক্ত হয়ে বসে আছেন। আমি স্যারকে বললাম,
‘স্যার, আমরা এখনই যাব। শেষ চা-টা খান। এরপর বরং ধীরেসুস্থে বের হই।’
অধ্যক্ষ সাহেবের বিরক্তি কমেছে। কোন এক অজানা কারণে তিনি আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে আলি জাফরকে বললেন,
‘জাফর, থাক। আবার দেখা হবে রে।’
আলি জাফর কিছু বলল না। অধ্যক্ষ সাহেবের শব্দচয়ন দেখে আন্দাজ করা যায়, আলি জাফর তার ভাই বা বন্ধুগোত্রীয় কিছু।
.
পরিশিষ্ট
.
আলি জাফর অধ্যক্ষ সাহেবের পাশাপাশি হেঁটে আসলেন। তাকে বেশ দূর্বল লাগছে। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। অধ্যক্ষ সাহেব ড্রাইভারকে বললেন,
‘আনোয়ার, স্টার্ট করো।’
গাড়ি স্টার্ট করা হল। বৃষ্টি বেড়েছে। কাদায় অনেক কসরত করে গাড়ি ঘোরানো হল। অধ্যক্ষ গাড়ির অন্ধকারে আমাকে প্রশ্ন করলেন,
‘কিছু ধরতে পেরেছ?’
‘জ্বি স্যার।’
‘কী ধরলে?’
‘আলি জাফর আপনার বন্ধু। সম্ভবত ব্যাচমেট। একসাথে ডাক্তারি পড়েছেন।’
‘আর কিছু?’
‘না।’
আমি ব্যাকগ্লাসের ভেতর দিয়ে আলি জাফরকে দেখতে পেলাম। তার হাতে ছাতা নেই। বৃষ্টিতে ভিজছেন। ডানহাতে এখনো হারিকেন ধরে রাখা। বৃষ্টির জলে হারিকেন নিভে গেছে।
নির্লিপ্ত চোখে আমাদের প্রস্থানের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছেন। গাঢ় অন্ধকার চিরে গাড়ির ব্যাকলাইটের লাল আলো ছড়িয়ে পড়েছে পুরোটা এলাকাজুড়ে। আমি বিস্মিত চোখে দেখছি, আলোআঁধারির গভীর রহস্যময় খেলায় আলি জাফরের পাশে ষোলো বছরের একটি কিশোরী দাঁড়িয়ে আছে।
##

 
ডা. রাজীব হোসাইন সরকার 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়