Ameen Qudir

Published:
2020-02-20 22:43:52 BdST

যানজট নিরসনে দুই নগরপিতার কাছে ডা. অসিত মজুমদারের খোলা চিঠি



ডা. অসিত মজুমদার
___________________

মাননীয় নগরপিতা
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন
বিষয়ঃ যানজট কমিয়ে আনতে খোলা চিঠি

মাননীয় মেয়র মহোদয়,
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন দিনে দিনে ঢাকায় যানজট অসহনীয় এবং তীব্র আকার ধারণ করছে। এমতাবস্থায় দশ মিনিটের পথ পেরুতে কয়েকঘন্টা সময়ও পেরিয়ে যায়। এ থেকে উত্তরণের জন্য বহুবিধ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে জরুরী ভিত্তিতে যানজট কমিয়ে আনতে কোন উপায় বের করা যায় কি?

মাননীয় নগরপিতা
এই যানজটে হাজার হাজার কর্মঘন্টা অপচয়সহ মেধা মনন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটা শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে উভয়ই। সরকারের আর্থিক ক্ষতির কথা নাইবা বললাম।
এছাড়াও অসুস্থ রোগীদের জন্য এ এক মহাদুর্ভোগ যা ভূক্তভোগী মাত্রই জানে। গর্ভবতীদের জন্য এটা কত বড় অভিশাপ তা আপনারা যথেষ্ট অবগত। কে জানে অকালে ঝরে যাওয়া ঐসব শিশুদের কেউ হয়ত মেধামননে ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়তে অকল্পনীয় ভূমিকা রাখতে সমর্থ হত।

মাননীয় মহোদয়,
আমার স্বল্প বুদ্ধিতে আপনাদের বলার মত শক্তি বা মেধা কোনটাই আমার নেই। আপনাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা,মনন ও মেধা বর্তমান যানজট কমিয়ে আনতে সক্ষম বলেই আমি এটুকু বলার ক্ষুদ্র চেষ্টা করছি।

মাননীয় মেয়র মহোদয় ,
আপনাদের ধীশক্তির সমন্বয়ে আমার ছোট্ট ক'টি কথা যদি ভেবে দেখতেন তবে তা আপনারাই ভাল বলতে পারবেন।

সাময়িকভাবে বর্তমান এই জটিল এবং অপ্রতিরোধ্য যানজট কিছুটা কমিয়ে আনতে আমার সবিনয় নিবেদনঃ

১) যাত্রীসচেতনতাঃ সবার আগে যাত্রী সচেতনতা। সম্মানিত যাত্রীগণ হাত উঁচিয়ে যেখান সেখান হতে চলন্ত গাড়ীতে উঠবার চেষ্টা করাটা একটা মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বা যখন তখন চলন্ত গাড়ী থামিয়ে রাস্তা পার হবার প্রবণতাও দেখা যায়। যাত্রীগণ ইচ্ছে করলে এতটুকু সচেতন খুব সহজেই হতে পারেন।

২) ড্রাইভারদের একঘেয়েমীপনা ও প্রশিক্ষণঃ ঢাকা শহরের ড্রাইভারবৃন্দ যথেষ্ট দক্ষতার সাথে কাজ করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমার অনুরোধ অন্য গাড়ীর গতি প্রতিহত করতে যত্রতত্র গাড়ী রাস্তার মাঝখানে তেরছাভাবে যাতে না রাখে বা অনৈতিকভাবে অধিক যাত্রী পাবার আশায় বেপরোয়াভাবে গাড়ী না চালায় বা অন্যায় ওভারটেকের চেষ্টা যাতে না করে। আমি জানি আমাদের ড্রাইভার এবং গাড়ীর স্টাফগণ যথেষ্ট ধৈর্য্য নিয়ে দীর্ঘ যানজটে দীর্ঘ সময় নিয়ে গাড়ীতে অবস্থান করে। এটি যথেষ্ট পীড়াদায়ক এবং মানসিক যন্ত্রণাও বটে। আমি বিশ্বাস করি যানজট কমিয়ে আনতে পারলে তাঁদের জন্য মানসিক যন্ত্রণার বিষয়টিও যথেষ্ট লাঘব হবে।
পাশাপাশি যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহার এবং গাড়ী পরিচালনা সংক্রান্ত কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কি?

৩) ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণঃ রাস্তায় সঠিকভাবে গাড়ী পরিচালনায় সম্মানিত ট্রাফিক সদস্যদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোন গাড়ী রাস্তায় অন্যায়ভাবে অন্যগাড়ীর সঙ্গে অসদাচরণ করে কিনা বা নিজেরাই নিয়ম ভঙ্গ করে কিনা এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখা দরকার অন্যায়ভাবে কোন গাড়ী পথের মাঝখানে যাত্রী উঠানামা করে কিনা বা ওভারটেক করে কিনা। এসব ক্ষেত্রে গাড়ী ছেড়ে দিয়ে সরাসরি মামলা করে দিলেই হয়, নতুবা পিছনে দীর্ঘ জট তৈরী হয়।

৪) রিক্সাঃ আমাদের সমাজে এখনও রিক্সার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে তা কিছুটা সীমিত আকারে করা যায়। তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও জড়িত।

৫) হাঁটাপথঃ হাঁটাপথে কোন মটরযান, সাইকেল যাতে না চলে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। হাঁটাপথ যেন শুধু হাঁটার জন্যই ব্যবহৃত হয় এটাও আমাদের সকলের খেয়াল রাখতে হবে।

আশা করি এতে কমপক্ষে অর্ধেক যানজট এই মুহূর্তেই কমিয়ে আনা সম্ভব।

যানজট নিরসনে আরও অনেক কার্যকর বক্তব্য আছে। আমি সেদিকে না গিয়ে এই মুহূর্তে ভালভাবেই নিরাময়যোগ্য এবং অতি প্রয়োজনীয় অংশটুকু লিখলাম মাত্র।
সদাশয় মেয়র মহোদয়গণ কার্যকর ভূমিকা নিয়ে আমাদের শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে কিছুটা লাঘব করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

ধন্যবাদ সবাইকে।
ডা. অসিত মজুমদার
Diabetes, Foot Care and General Practioner
Social Worker, Philosopher, Writer
Founder Chairman at Tarunnya Development Society
General Secretary at Talent Assistance Scheme Alumni Associate Ltd
Chief Adviser at Adibasi Somaj Unnyaon Sangshha, Sherpur

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়