Ameen Qudir

Published:
2020-02-16 01:40:37 BdST

ডায়াবেটিস মানে মজা করে খাওয়া উঠে গেলো! কিন্তু সত্যি কি তাই?


অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সাহিত্যের পথিকৃৎ

____________________________

ডায়াবেটিস রোগীদের সঙ্গে আলাপ করলে মনে হয়, তারা অনেকে মনে করেন ডায়াবেটিস হলে কেবল যে চিনি-মিষ্টি বাদ দেওয়া তাই নয়, খাওয়া-দাওয়া থেকে ‘মজা করে খাওয়া’ শব্দটি উঠে গেলো। কিন্তু সত্যি কি তাই? বস্তুত: আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের পরামর্শ:খাদ্যে শ্বেতসারের পরিমাণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কি ধরণের শর্করা গ্রহণ করা হচ্ছে এর তদারকি করা। সুসংবাদটি হলো, অনেক প্রিয় খাদ্য এমনি খাওয়া যায় বা সামান্য বদল করে খাওয়া যায়, করা যায় একে ডায়াবেটিস বান্ধব এবং উপভোগ্যও বটে। স্বাদও হয় সে সব খাদ্যে। বেশিরভাগ সময় ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে শর্করা আহারের ব্যাপারে পরামর্শ বিজ্ঞান সম্মত হয়না। পুষ্টি বিশেষজ্ঞ নন, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ নন এমন কেউ পরামর্শ দিলে এমনই হতে পারে। ‘ডায়াবেটিস মেইল প্লানিং এন্ড নিউট্রিটিউন ফর ডিউমিস’ বইটি লিখে খ্যাত টবি স্মিথসন, শর্করা নিয়ন্ত্রিত খাদ্য সম্বন্ধে বলেন, এ ব্যাপারে সফল হবার চাবি কাঠি হলো খাদ্য পরিকল্পনা।’ স্মিথসন বলেন, পূর্বে পরিকল্পনা করলে, ইমপোলসিভ ইটিং, বা আবেগ তাড়িত হয়ে আহার
পরিহার সম্ভব। সফল খাদ্য পরিকল্পনা করতে হলে অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শর্করা ভিত্তিক ও আমিষ ভিত্তিক খাদ্যের মিল-মিশ ও মিশ্রণ খাদ্য পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ। এতে ক্ষুধা, বিশেষ খাবারের প্রতি আগ্রহ ও রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। স্মিথসন বলেন, কৃশ আমিষ থেকে প্রিয় খাদ্য বেছে নিলে ভালো যেমন- কচি মোরগ, মাছ, কম চর্বিযুক্ত পনির এবং সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর শর্করা খাবার যেমন- শ্বেতসার সম্মৃদ্ধ সবজি, ফল, দধি এবং শস্যদানা মিশেল দিলে ভালো। আবার ক্যালোরি ও শর্করা চাহিদাও বিবেচনায় আনতে হবে। স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন বাদাম, এডেকেডো ও উদ্ভিজ্জ তৈল যোগ করলে কেবল যে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ হবে তাই নয়, ডায়াবেটিসের প্রদাহজনিত প্রভাবও হ্রাস পাবে। এখানে কিছু খাদ্যের কথা বলা হলো যেগুলো ডায়াবেটিস মোকাবেলায় সহায়ক এবং গোটা স্বাস্থ্যের জন্যও হিতকর হবে। যেমন-

ওটিমল:ওটিমলে রয়েছে দ্রবনীয় আঁশ। সেজন্য এটি ডায়াবেটিস বান্ধব ও হূদবান্ধব খাদ্য। ওটিমলের দ্রবনীয় আঁশ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক, রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। স্মিথসন বলেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীদের হূদরোগের সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন থেকে চারগুন বেশি। তাই এমন খাদ্য বেছে নিলে ভালো যেগুলো হূদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। যেহেতু ওট্ হলো আঁশসম্বৃদ্ধ, এর শর্করা দেহে শোষিত হয় ধীরে ধীরে। এটি হিতকরী প্রভাব ফেলে রক্তশর্করার উপর।
বাদাম জাতীয় খাবার:খাবারে বাদাম যোগ করলে বা নাস্তার সময় বাদাম খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রনে তা সহায়ক হয় এবং পেটও ভরাটভাব থাকে অনেকক্ষণ। বাদামে আছে হূদস্বাস্থ্যকর তৈল, আমিষ ও কিছু আঁশ।

ওয়ালনাট্
স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ মেদ অম্লের স্বাস্থ্যকর উত্স যেমন, তেমনি গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে ওয়ালনাট যোগ করলে দেহের ওজন এবং রক্তের সুগার দুটোরই নিয়ন্ত্রণে সহায়তা হয়।
পিনাট
শর্করা সমৃদ্ধ স্ন্যাকস্ এর বদলে

পি-নাট খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়।

আমন্ডস্:আমন্ডস্ হলো গ্লাইসিমিক অর্থাত্ এ খাবার খেলে রক্তের সুগার বাড়েনা, এতে আছে বেশ আন স্যাচুরেটেড ফ্যাট্ এবং আঁশ। গবেষণায় দেখা গেছে যখন শর্করা খাদ্যের সঙ্গে আমন্ডস বা বাদাম মেশানো হয়, তাহলে রক্তের সুগারে স্মস্থিতি আসে এবং মধ্যাহ্ন ভোজনের পরও এর ইতিবাচক ফল আসে।

পেস্তা বাদাম:পেস্তাবাদাম ভেজে খেলে চমত্কার। খাওয়াও হবে ধীরে ধীরে। ওজন নিয়ন্ত্রণ হবে, খাওয়াও কম হবে। এছাড়াও এতে আছে প্রোটিন এবং পুষ্টি উপকরণ ‘লুটিন’ চোখের জন্য ভালো।

কাঁচা সবজি:ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, মরিচ, স্যালাড-এসব সবজিতে শর্করা খুব কম, অন্যদিকে চর্বি কোলেস্টেরলও নেই, অথচ এসব সবজি খেলে পেটও ভরে। যে পরিমাণ ক্যালোরি ও শর্করা চাহিদা সে পরিমাণ গ্রহণের পর পেট ভরাট বোধ না হলে কাঁচা এসব সবজি খেলে বড় ভরসা। পেটও ভরে, ক্যালোরিও গেলোনা পেটে।বেরি ফল:আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের মতে ডায়াবেটিক খাদ্য পরিকল্পনায় দশটি সুপার ফুডের অন্যতম হলো বেরিফল। এফলে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট, যেগুলো শরীরের

উপর ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষতি করে তা থেকে সুরক্ষা দেয়। বেরি ফলে শর্করা থাকলেও এবং মিষ্টি হলেও অন্যান্য ফলের তুলনায় কম। যেমন এক কাপ স্ট্রবেরিতে মাত্র ৭ গ্রাম শর্করা, এক কাপ আপেলের শর্করা পরিমাণের অর্ধেক।

##

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়