Ameen Qudir

Published:
2020-02-14 22:15:09 BdST

ভ্যালেন্টাইন্স ডে ;অতঃপর, আর পেছনে ফিরে তাকাইনি




ডা. নাসিমুন নাহার মিম্ মি
কথাসাহিত্যিক
ঢাকা বইমেলার জনপ্রিয় লেখক
____________________________

আমার একজন এক্স ছিল।
যদিও এ বছর সে অন্য একজনের ভ্যালেন্টাইন।কিন্তু আমি আজও সিঙ্গেল। তবে মজার কথা হলো--সিঙ্গেল বলে যতখানি মন খারাপ আমার হবার কথা ঠিক ততখানি মন খারাপ কেন যেন আমার হচ্ছে না একদমই। বরং বেশ রিলাক্স ফিলিংস হচ্ছে।

বছর চারেক আগে ঢাকার একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হই আমি। তখন এক ক্লাসমেটের মাধ্যমে ওর সাথে পরিচয়। মাসখানেকের মধ্যেই ও প্রপোজ করে আমাকে। এভাবেই শুরু আমাদের সম্পর্কটা।

দুজনে দু ভার্সিটির হওয়ায় আমাদের দেখা হতো মূলত শুক্রবার।ওর জন্য যে কতবার বাসায় না যেয়ে হোস্টেলে থেকে গেছি, দেখা করব বলে।রাত বারোটার পর থেকে চলত আমাদের বিরতিহীন কথা, চ্যাটিং।বাসা থেকে এটা ওটা কত মিথ্যে অজুহাতে প্রতিমাসে এক্সট্রা হাত খরচ আনা।অন্য বান্ধবীদের শপিং বাজার যেখানে তাদের bfরা করে দিত(!) সেখানে আমার সাথে ঘটতো উল্টো।মাসের বিশ/একুশ তারিখের পরে ওর মোবাইলের ফ্লেক্সিলোডটাও আমাকেই করতে হতো।ও বলত - দেখ আমি তো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ি।বাসা থেকে এক্সট্রা খরচ আনার কোন এক্সকিউজ নেই। তোমার জন্য তো এটা ব্যাপার না।

আমি বুঝতাম এটা ঠিক হচ্ছে না, এভাবে বাসায় মিথ্যে বলে বারবার টাকা আনাটা খুব অন্যায় হয়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে ফেরাতে পারতাম না।ওর সাথে কথা না বলে, দেখা না করে থাকতে পারতাম না।

এই পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল।কিন্তু সমস্যার শুরু হলো ও যখন আমাকে রুম ডেটিং এর কথা বলল।আমরা সাধারণত বসুন্ধরা সিটি/রাইফেল স্কয়ার/টিএসসি বা কোন ফার্স্ট ফুড শপের মতো পাবলিক প্লেসে দেখা করতাম।

ও বলল আমাকে ওর সাথে ওর এক বন্ধুর বাসায় যেতে হবে।সারাদিন আমরা ওখানে থাকব, ঐ বন্ধুর বাসার সবাই গ্রামের বাড়ি গিয়েছে তাই বাসা ফাঁকা।বন্ধু একা থাকছে বাসায়।ও রাতে যেয়ে থাকে বন্ধুর সাথে।তাই এই সুযোগটা ও কাজে লাগাতে চায় !

আমি সরাসরি ই বললাম-না এটা সম্ভব না। বিয়ের আগে তোমার সাথে নির্জনে দেখা করব না এটা তো সম্পর্কের শুরুতেই বলে ছিলাম।

ও তখন প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে বলল--- 'ছোট শহরের মেয়েগুলার সাথে এইজন্যই প্রেম করতে হয় না।যতসব খ্যাত, আনস্মার্ট।দুনিয়ার সবাই রুমডেট করতেছে আর উনি আসছেন খুব সাধু।প্রেম করছিলা ক্যান তাইলে? তুমি কি ভাবছিলা মূর্তির মতো তোমারে সামনে বসাইয়া রাখার জন্য আমি প্রেম করছি? আট মাস চলতেছে আশি নব্বই দশকের গল্প উপন্যাসের প্রেম পর্ব চলতেছে আমাদের।এক হাত ধরা ছাড়া কিছু করতে দিছ তুমি আমারে ? কি জন্য আমি তোমার সাথে থাকব? '

ফোনে বেশ চিৎকার করেই ও বলছিল।এপাশে দাঁতে ঠোঁট চেপে কান্না লুকাচ্ছিলাম আমি।এসব কথা ও বলছে !!!........নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার।মানুষ তাহলে শুধু রুমডেট করার জন্য প্রেম করে !!!! রুমডেট করব না বলে আজকে আমি ওর কাছে আনস্মার্ট খ্যাত !!

এরপরে আরো মাস দুই টেনে হিচড়ে সম্পর্কটা টিকে ছিল আমাদের।এরই মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস চলে এল।দশ তারিখের দিকে ও আমাকে একটা টেক্সট করল---'ভ্যালেন্টাইনস ডে'তে যদি তুমি আমার কথা না শোন তাহলে ব্রেকাপ।'

আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।ওকে আমি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম।বাসায় কত মিথ্যে বলেছি ওর জন্য।তবুও ওকে হারাতে চাইনি।কিন্তু রুম ডেটিং এর উছিলাতে যে ঘটনাটা ঘটবে ঐ নির্জনে.........তা মেনে নিতে আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না।

দুই দিন দুই রাত নিজের রুমে বসে কাটালাম।ভার্সিটি গেলাম না।বাসায় নিজে ফোন দিয়ে কথা বলে মোবাইল সুইচ অফ করে রাখলাম।নামাজ পড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহস চাইলাম।

তেরো তারিখ ভোরের ট্রেন ধরে বাসায় আব্বু আম্মুর কাছে চলে এলাম।বাসার সবাই অবাক। হঠাৎ করে কাউকে না জানিয়ে এভাবে চলে আসাতে।ঐদিন রাতে আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে পড়ার পরে তাদের বিছানার পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললাম-- গত এক বছর আমি তোমাদের সাথে অনেক মিথ্যে বলেছি।একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছি। তোমাদের মিথ্যে বলে টাকা নিয়েছি।ভার্সিটি বন্ধ থাকলেও ঢাকায় থেকে গিয়েছি।কিন্তু দেরীতে হলেও আমি বুঝতে পেরেছি আমি ভুল করতে যাচ্ছি.........তাই তোমাদের কাছে মাফ চাইতে এসেছি।ফিরে যেয়ে নতুন করে সবকিছু শুরু করব বলে।
চোখের পানি মুছতে মুছতে বাবা মায়ের মাঝের অল্প ফাঁকা জায়গাটাতে শুয়ে পড়লাম ঠিক ছোট্ট বেলার মতো.......আহ কি শান্তি......

চৌদ্দ তারিখ সকাল আটটার দিকে আমি ওকে টেক্সট করলাম --- ok let's break up.

তারপরে........ আর পেছনে ফিরে তাকাইনি।

###

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়