Ameen Qudir

Published:
2020-02-11 23:44:39 BdST

''পুরোনো ক্যানভাস": জীবনের স্বরূপকে দেখার আয়না


 

ডেস্ক
___________________

বইমেলার পাঠকপ্রিয় লেখক দেবব্রত তরফদার। তার লেখা "পুরোনো ক্যানভাস" পাঠক মনকে যেমন মধুরতায় ভরিয়ে দিয়েছে। তেমনি দিয়েছে লেখকের জীবনাভিজ্ঞতার আয়নায় পাঠকদের নিজ জীবন দেখার অনন্য সুযোগ। সেই বই নিয়ে দেবব্রত তরফদার নিজেই দুটো কথা লিখেছেন। সেই লেখা পাঠকদের জন্য প্রকাশ হল।
"পুরোনো ক্যানভাস" সম্পর্কে দু একটি কথা:দেবব্রত তরফদার

আমার দিদা আশালতা বিশ্বাস আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন প্রায় আটত্রিশ বছর আগে । তিনি ছিলেন ছড়ার ভান্ডার । এই ছড়া যাকে প্রচলিত বাংলায় শোলোক বলে । এর একটি অংশ অবশ্য আদি রসাত্মক বলে মনে হলেও অর্থ কিন্তু আলাদা । এই সব সম্পদ ভান্ডার শেষ হয়ে আসছে দ্রুত কেননা এর চর্চা নেই। এর মধ্যে একটি ছিল " আদেখলের ঘটি মাজতে মাজতে ক্ষয় হয় ।" আমারও বোধহয় একই অবস্থা। একটি ক্ষীণ শীর্ণকায় বই "পুরোনো ক্যানভাস" যা প্রকাশিত হয়েছে নদীয়া বইমেলায় এবং তাই নিয়ে মাজামাজি তো কম হলোনা । লোকে কিছু বলার আগে নিজেই বলে ফেললাম কেননা এরপর আর অন্যের কিছু বলার থাকবে না ।
যাইহোক বইটি নিয়ে আমার ঘনিষ্ট পাঠককুল , ছাত্রছাত্রী এবং সর্বোপরি আমার স্কুল এবং কলেজের বন্ধুদের উৎসাহের অন্ত ছিলনা । বইটির প্রকাশক কলেজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈকত সরকার , প্রচ্ছদ আর ইলাস্ট্রেশন স্কুলের বন্ধু শেখর দে । বইটির উদ্বোধন স্কুলের মাঠে কলেজের বড়ভাই বিদ্যুৎ হালদারের হাত দিয়ে । পুরো ব্যাপারটির মধ্যে পারিবারিক গন্ধ ছিল । বইটি আগ্রহভরে সংগ্রহ করতে এসেছে আমার গ্রামের মানুষ আর আমার একেবারে শিশুকালের বন্ধু আব্দার । পরবর্তীতে কলেজের বন্ধু নিমেশ চাকির মেয়ে তিতলির বিয়েতে রানাঘাটে জড়ো হয়েছিলাম সেই সময়ের বন্ধুদের মধ্যে প্রায় কুড়িজন । সেখানে বিয়েবাড়ির ব্যস্ততার মধ্যেও বইটি নিয়ে বন্ধুমহলের উৎসাহ কম ছিলনা । এই কি কম পাওয়া আমার মত একজন অর্বাচিনের কাছে । যদিও সব লেখায় অনেকের পড়া তবুও বইটি সংগ্রহ করে আবার অনেকেই পড়ে ফেলেছে গোগ্রাসে । তাদের মতামত পেয়েছি। অনেকের বাড়ির বড়রা বইটি পড়ে মূল্যবান মতামত দিয়েছেন । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছকে বাঁধা জীবনের ব্যস্ততায় অনেকেই পড়া থেকে এখন অনেক দূরে । তাদের অনেকের বক্তব্য, ফেসবুকে তোমার লেখা আমাদের মত মৃতপ্রায় পাঠককে উজ্জীবিত করেছে।
যখন লিখতে শুরু করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম আমার আশেপাশের কাছের চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায় কিনা । এব্যাপারে কালকূট আমার প্রথম আইডল । কৃষ্ণনগরের মানুষ শ্রদ্ধেয় সুধীর চক্রবর্তী সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। জীবনের বহু বিষয়ের ক্ষেত্রে যাঁর অনায়াস বিচরণ । তাঁর অনেক লেখা পড়ে মনে হয় আদ্যন্ত ডিসিপ্লিন্ড মানুষটির মধ্যে একজন আউল বাউল বোহেমিয়ান মানুষ লুকিয়ে আছেন । খুব কাছ থেকে দেখা এই মানুষটি আমায় খুব টানেন। যার ফলস্বরূপ আমার লেখার বিষয় নির্বাচন এবং এই বইটির জন্ম। আমার ফেলে আসা জীবন নিয়ে যে সিরিজটি রয়েছে সেটি আমার পাঠকদের বেশি প্রিয় কেননা অনেকেই তার সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন । সেটা থেকে ফোকাস অনেকটা সরে গেছে বলে অনেকে মনে করে, যদিও একদম তা নয়। সেই সময় , সেই মৃতপ্রায় নদী , নদীপাড়ের মানুষ তাদের সুখদুঃখ ,সময়ের সঙ্গে জীবনধারার পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন এসব নিয়ে হয়ত হাত দেব আমার প্ৰথম উপন্যাসে। লিখি তো তারপর দেখা যাবে কিভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। আসলে আমাদের মত ফেসবুক লেখকের দল এলিট পাঠককুলের কাছে এখনো অকুলিন। জানি এলিট লেখককুলের পাশে আমাদের লেখা ছাপার জন্য কেউ বসে নেই। পরীক্ষামূলকভাবে কাগজে কয়েকবার লেখা পাঠিয়ে দেখলাম ছাপানোর কেউ নেই । তা বেঁচে থাক এই পুরোনো প্ল্যাটফর্ম আর আমার পুরনো পাঠকেরা ।
বইটির ফিডব্যাক আসছে । আমার ছাত্রী স্বাগতা আর ছাত্র কৌশিকের লেখা এখানে আগেই পোস্ট করেছি। আর একজন নতুন পরিচিত , দীপিকা যার নাম , সেতো চরিত্র ধরে কাটাছেঁড়া শুরু করেছে । নদীয়া বইমেলায় দু একজন অপরিচিতকে বইটি কেনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। অনুরোধে ঢেকি গেলার মত চক্ষুলজ্জার খাতিরে হয়তো কিনতে হয়েছিল। তাঁদের একজন আজ একটি এরকম মেসেজ পাঠিয়েছেন , আপনার বইটি পড়ে বহুদিন পর নিজেকে খুঁজে পেলাম । আগামীতে বই প্রকাশ করলে এই পাঠিকাকে যেন ভুলবেন না।
আজ রাত্রে ফোন পেলাম নিবেদিতা কাকিমার কাছ থেকে। উনি ডক্টর সুধীর চক্রবর্তীর সহধর্মিণী । মাতৃসমা এই মহিলার স্নেহ ভালবাসা পেয়েছি শিশুকাল থেকেই। কাজেই বইয়ের প্রশংসা করাতে ভাবলাম , " স্নেহ অতি বিষম বস্তু" কিনা । এরপর উনি বললেন , তোর কাকু তোর সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান । ভেবেছিলাম কাকু অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ এখনো দিনের মধ্যে দশ ঘন্টা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন । তাঁর পক্ষে সময় হবেনা হয়ত বইটি পড়ার । উনি বললেন , তোর বইটি শেষ করলাম । যেভাবে তুই মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছিস আমি তা পারিনি। এদের নিয়ে আরো লেখ। লেখা ছাড়িস না । সৎ বাঙালি লেখকের আকাল এখন। আর পরবর্তীতে বই করলে আমার সঙ্গে আলোচনা করে নিস ।
আমার মত অর্বাচিনের এ অনেক বড় পাওয়া ।
সঙ্গে উপরি পাওনা মেয়ের এই ডিজিটাল ইলাস্ট্রেশন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়