Ameen Qudir

Published:
2020-02-08 00:57:37 BdST

চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর আবেগঘন যে স্টাটাস এখন সবাইকে কাদাঁচ্ছে


বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে চীন থেকে ফেরা একটি মুখ



ডেস্ক
____________________
চীনে আটকে পড়া মুরাদ নামের বাংলাদেশী এক শিক্ষার্থীর আবেগঘন স্ট্যাটাস। যেটি এখন ভাইরাল হয়েছে, সেটি পাঠকদের জন্য প্রকাশ হল।

Yichang হুবেই প্রদেশের একটা শহর।উহানের প্রতিবেশি শহর বলা যায়। উহান যেদিন থেকে লকডাউন, Yichang-ও সেদিন থেকে লকডাউন। এখন এখানে থাকা আমরা দুদিক থেকেই সমস্যাই আছি। লকডাউনের জন্য নিজে টিকেট কেটে দেশে যেতে পারছি না, একদম সরাসরি এপিসেন্টার না হওয়ায় সরকার আমাদেরকে গুরুত্বই দিচ্ছেনা।

আমাদের শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তেছে। ৩ দিন আগেও যেটা ছিলো ২০০ এর ঘরে,সেটা এখন ৫৬৩! ৪ জন সম্ভবত মারাও গেছে।
এম্ব্যাসিতে আমরা যোগাযোগ করেছি।তারা আমাদের কিছুদিন আশ্বাস দিয়েছেন,লিস্ট নিয়েছেন।এরপরে সুর পাল্টেছেন।তাদের নাকি ফান্ড নেই। (কথা বলার রেকর্ড পর্যন্ত আছে।লাগলে আমি অবশ্যই দিবো)

আমাদের সমস্যা শুধু ভাইরাস না। ভাইরাসের থেকে বড় সমস্যা খাবার। আগে অনুমতি নিয়ে বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারলেও ১ সপ্তাহ আগে থেকে ডর্মেটরি সিলড অফ! কোনভাবেই বাইরে যাওয়া সম্ভব না।

এক্ষেত্রে ভার্সিটি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।ক্যান্টিন থেকে খাবার অর্ডার করা যায়, একটা গ্রুপকে Cooking ingredients অর্ডার করলে তারা ডেলিভারি দিবে। এই খবরটা শুনেই এম্ব্যাসি বলে দিয়েছে খাবার নিয়ে আমাদের সব অভিযোগ মিথ্যা।
আসলে জিনিসটা লিখিত ভাবে যত সহজ শোনাচ্ছে বাস্তবে এতটাও সহজ না। ক্যান্টিন থেকে যেসব খাবার দেয় সেখানে দাম অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় সমস্যা চাইনিজ খাবার,অনেকে মুখেই নিতে পারিনা।খাবারের গন্ধ কেউ সহ্য করতে পারেনা।
দ্বিতীয়ত Cooking ingredients অর্ডারের ব্যাপারটা।আমি আলু,ডিম,চাউল অর্ডার করি ২ তারিখ। তারা আমাকে গতকাল ডেলিভারি দিছে! ৬ টা ডিম, ৪ টা আলু!!
২-৫ তারিখ পর্যন্ত আমি কি খেয়ে সারভাইভ করলাম এইটা এম্ব্যাসির কেউ জানবে কিভাবে? রুমে থাকা কয়েকটা শুকনো খাবার দিয়ে বেঁচে থাকা যায়?
গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া ৬ টা ডিম আর ৪ টা আলু দিয়ে আমি কতদিন বেঁচে থাকব বলেন!
(খাবার পানির একটা বিশাল সমস্যা ছিলো কয়েকদিন ট্যাপের পানি ফুটিয়ে খেয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ ভার্সিটি জিনিসটা সলভ করেছে।)

একদিক থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তেছে।সকালে উঠে আপডেট চেক করার পর আমাদের কেমন লাগে তা বলে বুঝানোর মত না।সাথে খাবারের সমস্যা। এতসব মানসিক প্রেসারের পর আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন এখানে চায়নাতে আমাদের চিকিৎসা ভালো হবে।দেশে না যেতে।মাননীয় স্বাস্থমন্ত্রী, আমরা কেউ এখনো আক্রান্ত হই নি।এখনই চিকিৎসার ব্যাপার কেন আসতেছে?
এইটা কোন ধরনের গোঁজামিল! সুস্থ থাকা অবস্থায় দেশে নেবার ব্যবস্থা না করে অসুস্থ হবার পর ভালো চিকিৎসা দেখানো হচ্ছে!!

ভারত, মরোক্কো, Australia,শ্রীলঙ্কান বন্ধুদেরকে দেশে ফিরে যেতে দেখলাম।আফ্রিকার কয়েকটি দেশও তাদের স্টুডেন্ট ফিরিয়ে নিয়েছে।আগামীকাল আরও ২ টা দেশ তাদের স্টুডেন্টদের ফিরিয়ে নিবে।আমরা বাংলাদেশীরাই কয়েকজন আফ্রিকানের সাথে এখনো আছি।

বারবার এম্ব্যাসি থেকে ফান্ডের কথা শোনানো হয়। সত্যিই এই দেশ বিপদের সময়ে ১৭১ স্কলারদের দেশে ফেরাতে পারছেনা ফান্ডের অভাবে! দ্যাটস আ শেইম!!

সবকিছু ভুলেই আমরা তাকিয়ে আছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারাও যদি আমাদের সুস্থ অবস্থায় না ফিরিয়ে অসুস্থ হওয়ার পর চীনের উন্নত চিকিৎসার কথা শুনায়, তাহলে মারা যাবার পর যেন আমাদের এপিটাফে লেখা হয় "বাংলাদেশে জন্ম নেয়াটাই ছিলো আমাদের আজন্ম পাপ"

________________

চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশানের প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন,

''চীন থেকে দেশে ফিরতে চাই। আমরা এখনও ১৭২ জন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী চীনের হুবেই প্রভিন্সের ইচ্যাং সিটিতে আটকে আছি৷ এটা উহান থেকে খুব কাছে হওয়ায় আমরা রেড জোনে আটকা পড়ে আছি। এখানকার অবস্থা খুব ভয়াবহ। ইণ্ডিয়া, মরক্কো, ইথিওপিয়া সহ অনেকগুলো দেশের ছাত্রছাত্রীদের ওদের সরকার নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে একটা নিউজ করুন দয়া করে। আজ ১১ দিন হল আমাদের ডরমেটরি সিল করা। খাবার পানি নেই । পর্যাপ্ত খাবার নেই৷ এই দিকে পরিস্থিতি প্রতিদিন ভয়াবহ হচ্ছে ৷ মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার একটা ভরসা দিয়েছেন।''

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়