Ameen Qudir

Published:
2020-02-04 03:48:26 BdST

সেইন্ট জেভিয়ার সাহেবের ডেড বডি এবং অন্যান্য রহস্য


ডাঃ মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া

____________


এবারে কোলকাতায় ANCIPS-2020 (Annual National Conference of Indian Psychiatric Society) আয়োজিত ৭২ তম সাইকিয়াট্রি কনফারেন্সে অংশগ্রহন এবং কেইস রিপোর্ট উপস্থাপনার মধ্য দিয়েই ভারতের টূর শুরু হয়েছিল। সারা দুনিয়ার প্রায় চারহাজার সাইকিয়াট্রিস্টের মিলন মেলায় পরিনিত হয়েছিল কোলকাতার পাঁচ তারকা হোটেল আই টি সি সোনার বাংলা। ২১-০১-২০২০ থেকে ২৫-০১-২০২০ এই কয়দিনে কনফারেন্সের ফাঁকে ফাঁকে কোলকাতার স্মরণীয় কিছু জায়গা যেমন ভিক্টোরিয়া মনুমেন্ট এবং মিউজিয়াম, জোঁড়া সাকোর ঠাকুর বাড়ী, সেখানকার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রখ্যাত কলেজ স্ট্রীটের বই পাড়া, কফি হাউজ, নিউমার্কেট, গরিয়া হাট, শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দেখার সুযোগ হয়েছে। সব কিছুতেই যেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোঁয়া লেগে আছে। লক্ষনীয় বিষয় হলো কোলকাতার পুরাতন বাড়ি ঘর, দোকান পাট সব কিছুতেই ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াস রয়েছে। পুরোনো স্টাইল ঠিক রেখেও যে বাড়ি ঘর মেরামত করা যায় এটা আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য একটি শিক্ষনীয় বিষয়।
২৬ /০১/২০২০ তারিখ শুধু ঘোরাঘুরি করার জন্য গোয়ায় আসি। কোলকাতা থেকে প্লেনে ৩ ঘন্টা। দুপুর ৩ টার দিকে এসেই গোয়ার উষ্ণতা অনুভব করি।ব্লেজার
খুলতে বাধ্য হলাম। আগে থেকে ঠিককরা ড্রাইভার গংগাধর আমার নাম সম্বলিত প্লেকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই কিছুক্ষণ হেটে গাড়িতে উঠে একসময় পরতুগীজ শাসিত ভারতের সবচেয়ে পজ'টন অধ্যুসিত গোয়া রাজ্য ভ্রমন শুরু হলো। আমার হোটেল বুকিং ছিলো উত্তর গোয়ার আরামবল বীচের কাছে লুটাস সূত্র রিসোর্টে। এয়ারপোর্ট থেকে ১.৩০ ঘন্টার পথ। হোটেলে পৌছার আগে খুধা পেয়ে যায়। ড্রাইভার হিন্দি এবং ইংরেজিতে আমার থেকে বেশি দক্ষ। সে টের পেয়ে রাস্তার ধারে এক খাবার হোটেলে গোয়ান ফুড টোনা ফিস কারী দিয়ে সাদা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করলো। তারপর ছবির মতো সুন্দর আরাম্বোল বিচের ধারে নিয়ে গেলো। রুমে লাগেজ রেখে নেমে পড়লাম সমুদ্রে। কিছুক্ষণ ঝাপা ঝাপি করলাম। তারপর রুমে এসে রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার পর বের হলাম বীচের ধারে হাটতে। বীচ বরাবর ছোট ছোট রেস্টুরেন্টে মিউজিক বাজছে। ৯০ ভাগ রাশিয়ান ভ্রমণ পিয়াশীদের আনন্দ উতসব চোখে পড়ার মতো। তারা কিছুক্ষন পর পর ক্যাম্প ফায়ার করে নাচ গান করছে।সামনে চেয়ার টেবিল পাতা। কেউ বিভিন্ন খাবার খাচ্ছে এবং পানীয় পান করছে। আমিও রাতের খাবারের জন্য প্রন ফ্রাইড রাইস এবং সহনীয় পানিয় অরডার দিয়ে রাত ১১ টা অব্দি তাদের সাথে আনন্দ করলাম। একাকিত্ব কেটে গেলো নিমিষেই।
পরের দিন সকাল বেলা নাস্তা সেরে একজন ড্রাইভার সহ মোটর বাইক ভাড়া করলাম। ৩ টি বীচ ৩ ঘন্টার মধ্যে দেখে ফেললাম। ছোট ছোট রাস্তার ধারে গাছ, উচুনীচু পাহাড়, জংগল পার করে আলাদা আলাদা বীচে যেতে হয়। মোটর বাইকের পিছনে উঠে হালকা বাতাস এবং দুই ধারের সুন্দর বাড়ি ঘর, টুরিস্ট দের আনন্দ দেখতে দেখতে শরীর, মনের ক্লান্তি দূর হলো। প্রথমে আমরা গেলাম মজরিম বীচে, তারপর অস্বিম বীচে, তারপর মানদ্রেম, কেরী বীচে। এক এক টা বীচের একেক রকম বৈশিষ্ট, কোনটা সাদা বালুর, কোনটা কালো পাথরের, কোনটা পাহাড় ঘেরা, পানি মোটামুটি পরিস্কার। কাদা একেবারেই নেই। আমাদের কক্সবাজার বীচের মতো এতো লম্বা বীচ কোথাও নেই। কক্সবাজার খুবই সুন্দর একটি বীচ নিঃসন্দেহে। কিন্ত কোথাও কোথাও কাদাঁমাটি। সবচেয়ে যেটির অভাব নিরাপত্তার। সেই দিক দিয়ে ভারতের অন্য রাজ্যগুলির থেকে গোয়া অন্যতম টূরিস্ট বান্ধব রাজ্য। লোকজন বেশীরভাগই অতিথি পরায়ন। পরের দিন গেলাম দুধসাগর ঝর্ণা দেখতে। অসাধারণ একটি ভ্রমন ছিলো সেটি। সকাল ৬ টায় টুরিস্ট বাসে করে প্রথমে গেলাম একটি গীর্জা দেখতে পুরাতন গোয়ায়, যেটির নাম বেসিলিকা অব বম জেসাস।
সেইন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার সাহেবের ডেড বডি রাখা হয়েছে।
প্রতি ১০ বছর পর পর গীর্জার বাইরে আনা হয় ভক্তদের জন্য। তারপর গেলাম জীপে করে একঘন্টার অভয়ারণ্য পার হয়ে সেই কাক্ষিত ঝর্ণার পাড়ে। সফর সংগী হিসেবে হায়দ্রাবাদ এবং উত্তর প্রদেশের দুইজন ইয়াং কাপলকে পেয়ে গেলাম। ওরা কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ওদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিলাম। ছবি তোলার লোকও পেয়ে গেলাম। আমি ওদের ছবি তুলে দেই, ওরা আমার ছবি তুলে দেয়। লাইফ জ্যাকেট পরে ঝর্ণায় নেমে গেলাম। এ এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ঠান্ডায় গা জুড়িয়ে গেলো। কারন এখন গোয়ার তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অত্যন্ত গভীর মাঝখানে। পানি উপর থেকে দ্রুত বেগে পড়ছিলো। অত্যন্ত স্বচ্ছ পানি। সেখানে বড় বড় মাছ সাতার কাটছিলো সেই সাথে আমরাও। চুপ করে ভেসে থাকলে মাছ এসে হাতে পায়ে কোমল ঠুকর দেয়।
পরের দিন চলে আসলাম পালোলেম ইন হোটেলে। এটি দক্ষিন গোয়ায়। ৩ ঘন্টায় টেক্সিতে পালোলেম ইন হোটেলে পৌছলাম। এটি উত্তর গোয়া থেকে কিছুটা শান্ত এলাকা। এখানে রেস্টুরেন্ট গুলিতে মৃদ্যু শব্দে মিউজিক বাজে। পরের দিন এক ট্যাক্সি ভাড়া করলাম দক্ষিনের বীচ গুলি দেখার জন্য। পালোলেম, পাটনেম, আগোন্ডা, রাজ বাঘা এই চারটি বীচে প্রায় তিন ঘন্টা কাটালাম। এর মধ্যে পালোলেম থেকে এক ঘন্টার শেয়ারিং স্পিড বোটে সাগরের গভীরে ডলফিন দেখতে গেলাম। কয়েকটা ডলফিনের ডাইভ দেখলাম। শান্ত সাগরে শরীর মন জুড়িয়ে গেলো। আজ ঘুরতে ঘুরতে কোলকাতার বাসিন্দা স্বপন পান্ডার বাংলা হোটেলে প্লেইন পরাটা, ঘুগনি, ডিম ভাজি খেয়ে লিখতে বসলাম। ১১ টায় এয়ারপোর্টে যাবো প্রথমে কোলকাতায়। সেখান থেকে রাত ৯ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো ইনশাআল্লাহ।
গুড বাই গোয়া....................

ডাঃ মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি)
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরে

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়