Ameen Qudir

Published:
2020-01-09 23:26:04 BdST

ধর্ষক মজনুর চেহারা সুরত নিয়ে ধুম্রজাল: ডাক্তারসহ বিশ্লেষকরা যা বলছেন



ডেস্ক
__________________

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণকারী মজনুর চেহারা সুরত নিয়ে নানা মুখী আলোচনা ও ধুম্রজাল চলছে অনলাইনে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, আইনজীবি, সাংবাদিকসহ অনেকেই এ বিষয়ে আলোকপাত করছেন। সে সবের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়ে এই প্রতিবেদন।


বাংলাদেশ কথা সাহিত্যের তরুণ জনপ্রিয়তম মুখ ডা. রাজীব হোসাইন সরকার লিখেছেন,

ধর্ষকের চেহারার সাথে যারা ভিকটিমের কথা মিলাতে পারছেন না, এই স্ট্যাটাসটি তাদের জন্য-

১. ধর্ষক অহংকারী ছিল (অথচ চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই লোক এমন হতেই পারে না)

-ধর্ষকের ছবিটা যারা দেখেছেন তাদের ফরেনসিক স্পেশালিস্ট হতে হয়নি। ফার্স্ট সাইটেই বুঝেছেন- এই লোক এডিক্ট। নেশাখোর। এই চেহারা নেশাখোরদের টিপিক্যাল চেহারা। সাথে তার সোসিও-ইকোনোমিক কন্ডিশন। দরিদ্র কিন্তু শ্রমজীবী।
এই ধরণের মানুষের একমাত্র কাজ হলঃ পেটপুরে ভাত খাওয়া। সাথে একমাত্র বিনোদন হল- সেক্স। সেটা টাকা দিয়ে হোক আর জোর করেই হোক। সবকিছুই ছাপিয়ে সবচেয়ে আনন্দের কাজ হল- ড্রাগ (গাঁজাজাতীয় বেশি)

একজন নেশাগ্রস্থ মানুষের সাথে যাদের জীবনে একবার পরিচয় হয়েছে তার অভিজ্ঞতা থাকার কথা। এরা অনর্গল কথা বলে। ননসেন্স প্যাটার্নে। কথাবার্তা শুনলে আপনার মনে হবে- এই লোকটি একজন ভয়ানক ক্ষমতাবান। দেশের রাষ্ট্রপতিও তার কাছে নস্যি। কেন সে অহংকারির মত আচরণ করেছে আশাকরি আন্দাজ করতে পারছেন।
যদি এখনো লজিকটা না বোঝেন, একজন এডিক্টের কাছাকাছি যান। পর্যবেক্ষণ করুন। যারা পর্যবেক্ষণ করে, তাদের লজিক দ্রুত শানিত হয়। ইডিয়ট লেভেলের লজিক তাদের মাথা থেকে বিদায় নেয়।

২. এই নড়বড়ে লোক মেয়েটিকে অজ্ঞান করে কীভাবে? এত শক্তি কোথায় পায়? কীভাবে ধরে নিয়ে যায়?

-আপনার মাথায় অন্তত এই চিন্তাটা আসেনি যে মেয়েটি আগ্রহ নিয়ে ধর্ষকের পেছনে পেছনে হেঁটে গেছে, রাইট? যদি এমন চিন্তা আসে তবে পরের অংশ পড়বেন না। লজ্জা পাবেন।

-হিউম্যান ফিজিওলজি খুবই জটিল বিষয়। এখানে নার্ভ-হরমোন একসাথে কাজ করে। পুরুষ এবং স্ত্রীর শক্তি ও সহ্য ক্ষমতা সমান নয়। যারা আমার সেক্সুয়াল ডাইমর্ফিজম আর্টিকেলটি দেখেছেন তারা জানেন, পুরুষের টেস্টোস্টেরন হিংস্রতার হরমোন। মেয়েদের এই হরমোন অতি অল্প থাকে। এই হরমোনের কারণে ছেলেদের পেশি বেশি। পেশিতে শক্তিও বেশি। ছেলেদের হৃদপিন্ড, কিডনি এমনকি অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের আঁকারও বেশি। একজন এডিক্টের বিজারি মস্তিষ্ক হলেও তার শক্তি ভিকটিমের চেয়েও বেশি। কারণ তার মাথায় তখন- স্বার্থসিদ্ধির চিন্তা চলছে। যদি সে তার কাজ না করতে পারে, ধরে আড়ালে নিয়ে যেতে পারে তবে স্বার্থসিদ্ধিও হবে না। উলটো মানুষের কাছে ধরাও পড়তে পারে। এজন্য সর্বশক্তি দিয়েই সে ভিক্টিমকে টেনে নিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত আকস্মিক ইনসিডেন্টে হিউম্যান ব্রেইন-নার্ভ-হরমোন ভিন্নভাবে কাজ করে। সামান্য তেলাপোকা দেখেও একটি মেয়ে ভয়ে আনকনসাস হয়ে যেতে পারে। এমন অনেক কেইস আমি দেখেছি, জেনেছি, সামান্য গায়ে হাত দেবার কারণে, মৃদ্যু স্পর্শ করার কারণেও একটি মেয়ে ভয়ে আনকনসাস হয়ে যায়। আকস্মিক নিকটাত্মীয় কারো মৃত্যুসংবাদ শুনেও একটি মেয়ে ভ্যাসোভ্যাগাল শকে আনকনসাস হয়ে পড়ে যেতে পারে। মেয়েটার এজমা ছিল, এটা যেকোন সিচুয়েশনে বাড়তে পারে। কলাপ্স করতে পারে। এজমা মানে হাপানী। স্পটে ইনহেলার পাওয়া গেছে, এটা জানেন?

সেখানে নির্জন রাস্তায়, অন্ধকারে, বিরূপ পরিবেশে, নেশাগ্রস্থ ধর্ষকামী পুরুষের সশক্তি আক্রমণে, ধর্ষিত হবার পূর্বমুহুর্তে আমার বোন, আপনার মা, অমুকের চাচী খালা যদি আনকনসাস হয়ে যায়, আপনি কী ভাববেন?

শিশ্নের প্রবল আঘাতেই শুধু কনসাসনেস হারাবে এই চিন্তা করার আগে, আপনার তেলাপোকা দেখে ভয় পাওয়া ছোটবোন, সাপের কথা শুনেই টলে পড়া মায়ের কথা মাথায় আসে না?

যদি না আসে, ইউ নিড সাইকিয়াট্রিক ট্রিটমেন্ট। Just nock me, I'm your Doctor from right now.

প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক সুব্রত নন্দী লিখেছেন, ধর্ষকের কোন গরীব বড়লোক হয় না, ধর্ষক সে নির্ভেজাল ধর্ষকই,তার চেহারা উত্তম কুমারের মতো খুব সুশ্রী হবে এটাও যেমন স্বাভাবিক আবার কদাকার ডিপজলের মতো হবে এটাও মিথ্যা নয়। একমাত্র অধম বাঙালি জাতিই ধর্ষকদের সিনেমা নায়কের সঙ্গে তুলনা করে তার মধ্যে রবিনহুডের বীরত্ব গাঁথার ইমেজ খুঁজে পাবার বাসনা লালন করেন। কেবলমাত্র ধর্ষিতার পক্ষেই সম্ভব তার প্রকৃত ধর্ষককে চিহ্নিত করা। যেটা ধর্ষিত মেয়েটি করেছেন, অথচ তিনি কেন কুৎসিৎ কদাকার একজনকে চিহ্নিত করেছেন এটা আম জনতার পছন্দ হয়নি , তারা এখন পেশিবহুল সিক্স পেক কাউকে খুঁজছেন কে মেয়েটির জন্য যথার্থ ধর্ষক হতে পারেন, যার চেহারা হতে পারে শহীদ আফ্রিদি, ইমরান খান বা হুজুর তাহিরির মতো!! এই না হলো বীরের জাতি , কি বলেন?

 

বিশ্লেষক পারমিতা হীম ব্যখ্যা করেছেন অনন্যভাবে। তিনি লিখেছেন, ধর্ষক ধরা পড়েছে। এ সাফল্য কার?

মেয়েটার।

এমন মুমূর্ষূ অবস্থাতেও দুইদিনে অন্তত ৭০ জন লোক তাকে দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছে।

দুপুরে খাবার সময়টুকু দেয় নাই, দেয় নাই ঘুমাতে। কতবার, কতক্ষণ— একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ছি। মেয়েটি থেমে যায় নাই। একবারও ভেঙে পড়ে নাই। সে শক্ত ছিল। সে সবার সব প্রশ্নের উত্তর দিছে। সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করছে। ধর্ষকের হাত থেকে দৌড়ে পালায়ে আসছে ও। কেউ তাকে বাঁচায় নাই।

মেয়েটার এত সাহস, এত মানসিক শক্তির উৎস কি জানেন?

মেয়েটার মা।

সোমবার ভোরবেলা হাসপাতালে তাকে ঘটনা খুলে বলার পর তিনি আমার হাত ধরে শুধু একটা প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করলেন—

ও কি বেঁচে আছে?

আমি হ্যাঁ বলতেই আমার হাত চেপে ধরে বললেন, তাহলেই হবে। আমার মেয়ে বেঁচে থাকলে সব করতে পারবে। ও যা চায়, ওর সব স্বপ্ন ও পূরণ করবে।

মেয়েটিকে দেখে প্রথম মা বলেছিলেন— কিছু হবে না মা। এমন জীবনে হয়। তুই শক্ত থাক। তুই পরীক্ষা দিতে পারবি— একটুও ভাবিস না।

তিনদিন টানা মেয়ের পাশে— মেয়েকে প্রতিনিয়ত সাহস যোগালেন, শক্তি দিলেন, আত্মীয় স্বজনের অজস্র কটুক্তির উত্তর দিলেন। এমনকি নিজের স্বামীর অসংখ্য দোষারোপের স্বীকার হলেন মা। ভুল করে কেন নামলো কুর্মিটোলা? কেউ আবার বাস স্টপেজ ভুল করে নাকি? বান্ধবীর বাসায় যাবার কী দরকার, হলের মেয়ে হলে থাকবে—কত রকম বাজে কথা যে শুনতে হলো আমাদেরকে। আমি অসুস্থ বোধ করতাম। আমি একবারও মন খারাপ করতে দেখি নাই মাকে। উল্টাে বলতেন- আরে বাহ, মানুষের বুঝি ভুল হয় না? তোমরা কখনো রাস্তা ভুল করোনি?

অজ পাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা এই মা। আর আমার সোশ্যাল মিডিয়ার অসংখ্য অশ্লীল কমেন্ট— অসংখ্য অদ্ভুত চাহনি— এর মধ্যে মাকে দেখে মনে হয়— এই মায়েদের জন্যই এখনো আমরা বেঁচে আছি।

যাদের আমাদের নিরাপত্তা দেবার কথা, তারা তা দিতে পারে নি। একথা ভুলে যাবেন না। কক্ষনো না। মেয়েটি আমাকে বলেছে— এদেশের নয়, সব দেশের, ঢাকায় নয়, সবখানে, সন্ধ্যা সাতটায় নয়— সকাল, বিকাল, রাত, দুপুর— সবসময় একটা মেয়ে যেন নির্জন/ ব্যস্ত সব পথ ধরে হেঁটে যেতে পারে সেজন্য আজীবন লড়ে যাবে সে।

গত তিনদিন আমার জীবনের অন্যতম ভয়াবহ দিন। গত তিন দিন আমার জীবনের অন্যতম তাৎপর্যময় দিন।

অনেক অনেক ধন্যবাদ মেয়ে। অনেক কৃতজ্ঞতা মা।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়