Ameen Qudir

Published:
2019-11-14 01:14:04 BdST

ইরা বড় ধরণের বিপদে পড়েছে


 

 

প্রতিকী মডেল ছবি

 

ডা. রাজীব হোসাইন সরকার
বাংলাদেশের নবীন
জনপ্রিয়ততম কথাসাহিত্যিক
_______________________________

____ ইরা বড় ধরণের বিপদে পড়েছে।
ব্যাপারটি বেশ জটিল। বাসায় ফেরার পথে রিক্সায় বসে অতি দূর্বোধ্য ব্যাপারটি নিয়ে সে আদ্যোপান্ত ভেবেছে। অস্থির মস্তিষ্ক কোনো ধরণের কূলকিনারা করতে পারে নি। বাসায় দরজা লাগিয়ে দীর্ঘ ছয় ঘন্টা কান্নাকাটির পর সে তার ডাক্তার বন্ধু আয়েশাকে টেলিফোন করল।
আয়েশা টেলিফোন ধরে চাপা গলায় বলল,
‘ইরাবতী, কী চাও?’
‘একটা ড্রাগের নাম বল। লিথাল ডোজসহ।’
আয়েশার গলা থেকে চাপা ভাবটা উধাও হল। খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘অসম্ভব। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসীর কেউ সিডাটিভ দিবে না।’
‘একটা প্রেসক্রিপশন বানিয়ে দাও।’
‘এটাও অসম্ভব। আন-ইথিক্যাল ব্যাপারে আমার সাহায্য পাবে না। মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স বলছে......
ইরা রিসিভারটা নামিয়ে রাখল। পৃথিবীর বিবিধ ব্যাপারে সে অতি দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এলার্মিং ব্যাপার। অপরিণামদর্শী ব্যাপারটি তাকে আগাগোড়া পেঁচিয়ে ফেলছে। দ্বার রুদ্ধ। বের হবার পথ নেই।
ইরা ফোলা চোখে জানালার পর্দা সরিয়ে শহরের উঁচু দালানের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। দিনের সূর্য ডুবছে।
পৃথিবীর আলো ক্রমশ কমে আসছে। অপস্রিয়মাণ সূর্যালোকে ইরা দীর্ঘস্বাস ফেলল। তার যাপিত জীবনের শেষ সূর্য ডুবে যাচ্ছে। দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ী; বেলা দ্বিপ্রহর!


প্রফেসর নাজিব নয়শ ডলার খরচ করে ‘ওরিয়ন স্টারব্লাস্ট সিক্স অ্যাস্ট্রো’ নামের একটি পোর্টেবল টেলিস্কোপ জোগাড় করেছেন। কেনার আগে টেলিস্কোপ নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছেন। ইন্টারনেটে বেশকিছু জার্নাল ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। অ্যাস্ট্রোনোমিতে ভাল দখল আছে এমন এক ছাত্রের সাথে তার যোগাযোগ হল। প্রফেসর অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাকে বললেন,
‘বাবা, খুব জরুরী ভিত্তিতে একটি টেলিস্কোপ কিনব। তুমি কী আমাকে সাহয্য করতে পারবে?’
ছাত্রের নাম মাহবুব ইসলাম।
সে যে শুধু মহাজাগতিক ব্যাপারেই সিদ্ধহস্ত এমন নয়। সেফটিপিন থেকে এস্ট্রোফিজিক্স পর্যন্ত তার পাণ্ডিত্যপূর্ন জানাশোনা।
মাহবুব নিজ দায়িত্বে অ্যামাজন নামক একটি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে টেলিস্কোপ কিনে আনল। এরপর আধাঘন্টা তুখোড় লেকচার দিয়ে বুঝিয়ে দিল, কীভাবে যন্ত্রাংশের সেটিংস দিতে হবে, ভিজুয়াল ফিল্ড কাভার করতে হবে, মাইক্রো ফাইবার ক্লথে লেন্সের যত্ন নিতে হবে। প্রফেসর নাজিব সমস্ত ব্যাপারটাতে একটি সূক্ষ্ম ছেলেমানুষী আনন্দ পেলেন। মাথা নেড়ে কয়েকবার হা-হু করলেন। তিনি সব বুঝেছেন।
মাহবুব যাবার পর ঝামেলা বাঁধল।
তিনি ত্রিবেদী স্ট্যাণ্ডে টেলিস্কোপ বসালেন। ঠিকটাক সেট করলেন। ফ্রণ্ট ও রিয়ার ভিউ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলেন। তার ধারণা ছিল, দূরবীনের মত চোঙটা চোখে ধরলেই আকাশ দেখতে পাবেন। এখন দেখছেন ব্যাপারটি মোটেই তেমন নয়। চোখ রাখলে সবকিছু গাঢ় অন্ধকার মনে হচ্ছে। অথচ আকাশে কালপুরুষ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
প্রফেসর অস্থির হয়ে কয়েকবার ম্যানুয়াল পড়লেন। ম্যানুয়ালে তেমন কিছু নেই। ইংরেজিতে বলা হয়েছে, প্লানেটেরিয়া ও ডীপ স্কাই স্টারব্লাস্টে চমৎকার দেখা যায়। চোঙ্গের অন্ধকার দেখে প্রফেসর অসহায় বোধ করলেন।
তিনি মাহবুবকে টেলিফোন করলেন।
‘হ্যালো মাহবুব।’
মাহবুব রাত দেড়টায় টেলিফোন ধরে মৃদ্যু হাসিমুখে বলল,
‘জ্বি স্যার। বলুন।’
‘টেলিস্কোপ কাজ করছে না।’
‘আশ্চর্য! কেন কাজ করছে না। করার তো কথা। ফাইন আর কোর্স স্ক্রু ভালো করে ঘুরিয়েছেন?’
‘হ্যা। তুমি কী কেনার সময় যাচাই করেছ?’
‘করেছি স্যার। ওরিয়ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।’
প্রফেসর নাজিব বিস্মিত হয়ে বললেন,
‘দিনের বেলা ওরিয়ন কীভাবে দেখলে?’
মাহবুব সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করছে। প্রফেসর নাজিব খানিকটা বিরক্ত হয়ে টেলিফোন রেখে দিলেন।

প্রতিকী মডেল ছবি

টেলিস্কোপ বসানো হয়েছে বাসার ছাদে।
বেশ আয়োজন করে তিনি আজ কালপুরুষ দেখবেন। নীচতলা থেকে ইজি চেয়ার আনা হয়েছে। চেয়ারের পাশে টুল। টুলের উপর চায়ের ফ্লাস্ক।
এখন মধ্য জানুয়ারি চলছে। সুবিশাল আকাশের পূর্ব-দক্ষিন কোনে ‘কালপুরুষ’ নামক রহস্যময় নক্ষত্ররাজি ঝুলে আছে। (কালপুরুষ নক্ষত্রপুঞ্জের গ্রীক নাম- ওরিয়ন। ওরিয়ন গ্রীক মিথলজির এক বীর যোদ্ধা। তার একহাতে ঢাল, আরেক হাতে মুগুর। আকাশে ওরিয়ন নক্ষত্ররাজিকে দেখতে এমনই লাগে। কালপুরুষ নামটি ভারতীয় জ্যোতির্বিদদের দেওয়া)
প্রফেসর নাজিবের দীর্ঘদিনের অদম্য ইচ্ছা কালপুরুষকে খুব কাছ থেকে দেখবেন। প্রকৃতির দূর্বোধ্য পরিকল্পনার অংশ হিসাবে অধিকাংশ ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। তার ধারণা টেলিস্কোপে কালপুরুষ দর্শন ব্যাপারটিও অপূর্ণ থাকবে। তিনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে ইজি চেয়ারে জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। চোখবন্ধ করে কয়েকবার ধীরকণ্ঠে বললেন,
‘টেলিস্কোপ সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে টেলিস্কোপ কেনা ঠিক হয় নি। চুড়ান্ত গাধামি হয়েছে।’
এখন রাত দেড়টার মত বাজে।
জানুয়ারীর হালকা কুয়াশা ঝেঁপে পড়ছে। ছাদে ওঠার আগে তার কাজের ছেলেটাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, এক ফ্লাস্ক চা রাখতে। তার কিছু বাজে স্বভাব আছে। একটার পর একটা চা গিলতে থাকেন। তিনি একটান সর্বোচ্চ তেইশ কাপ চা খেয়েছিলেন। ব্যাপারটা যে খুব ভাল করেছিলেন তেমন না। তেইশ কাপ শেষ না করতেই তিনি ক্রমাগত ভুড়ি উল্টানো বমি করতে শুরু করেছিলেন।
আজ তেইশ কাপ খাবার সম্ভাবনা নেই। পাচ থেকে দশ কাপেই শেষ হবে। চায়ের সাথে চলবে সিগারেট। ফাইফ ফিফটি ফাইফ। ভদ্রলোকের সিগারেট।
ফ্লাস্কে যথেষ্ট পরিমানে চা রাখা হয়েছে। চায়ের পাশে একটা গোছানো শাল। রাজশাহী থেকে আনা। তার বিয়ের সময় এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় উপহার দিয়েছিল। পশমী শাল। দীর্ঘ বিশটা শীত তিনি এক শালে পার করে দিলেন।
প্রফেসর কাপে চা ঢাললেন। চায়ে চুমুক দেবার পর তার মনে হল, সিগারেট দেওয়া হয় নি। সিগারেট ছাড়া চা, লবন ছাড়া পান্তার মত। তিনি বিরক্ত হয়ে কাপ রেখে দিলেন।
প্রফেসর ছাদের চারদিকে তাকালেন।
ছাদের রেলিঙ বরাবর অর্কিডের সারি। অন্ধকারে অর্কিডের রঙ আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে না। সবই সাদাকালো লাগছে। কালোর গাঢ়ত্বের তারতম্য দেখে তিনি আন্দাজ করলেন, টবে সাদা, হলুদ ও লাল অর্কিডের চমৎকার মিশ্রণ।
অর্কিড চাষাবাদ সংক্রান্ত ব্যাপারটিতে জড়িত বাসার মালিকের মেয়ে ইরা। পূর্ণ নাম ইরাবতী। ইরাবতী নামটির সাথে তিনি বেশ পরিচিত। কর্ণফুলিতে একবার নৌকাভ্রমণের সময় একদল এণ্ডেমিক শুশুক দেখেছিলেন। শুশুকের প্রজাতির নাম ইরাবতী।
ইরা রুপবতী ধরণের মেয়ে। বিশেষণযুক্ত রুপবতী। এই রুপকে কাটাকাটা রুপ বলে। প্রাথমিক দর্শনে চলমান রিক্সাওয়ালা একবার ইরার দিকে ঘুরে তাকালে তার রিক্সা নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ড্রেনে পড়বে। ইরার রুপের অতিরিক্ত অংশটুকু হল--- মুখভরা মায়া। প্রফেসর নাজিবের ধারণা একই সাথে রুপবতী ও মায়াবতী কোন মেয়ে দীর্ঘদিন তার চোখ পড়ে নি। তিনি মাঝেমাঝে বিস্ময় নিয়ে ইরার দিকে তাকান। তাকিয়ে অসহায় বোধ করেন। অসহায়ত্বের কারণ, তার দৃঢ় ধারণা এই মেয়েটির জন্মই হয়েছে কণ্টকাকীর্ণ পৃথিবীতে ভুল মানুষে বিশ্বাস করে বিশ্বাসভঙ্গের কষ্ট পাবার জন্য।
ইরার সাথে প্রফেসরের তেমন দেখা হয় না। পাকেচক্রে সন্ধাকালীন ছাদভ্রমনে দেখা হয়। প্রফেসরকে দেখলে ইরা বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার মত দ্রুত দর্শনস্থল ত্যাগ করে সিড়ি ভেঙ্গে নেমে যায়।
আজ বিশেষ রাত্রি।
তিনি বছরের এই দিনে একাকী ছাদে দীর্ঘসময় বসে থাকেন। চোখ নিবন্ধ থাকে কালপুরুষ তারকারাজিতে।
প্রফেসর সযত্নে রাত্রিকালীন ছাদভ্রমনের সময় নির্ধারন করেছেন। রাত্রি দেড়টা। এত রাতে ইরার ছাদে থাকার কথা নয়। তিনি চান না বাসার মালিকের মেয়ে তাকে দেখে ছাদ থেকে নেমে যাক। তিনি মোটামুটি গবেষনা করে বের করেছেন, ইরার রাত জাগার কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে। সে রাতের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ছাদে থাকে। রাত দশটা। এই সীমা অতিক্রান্ত হবার পর সে নেমে যায়।
প্রফেসর নাজিব আধভেজা চেয়ারে গুটিসুটি শুয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। আকাশময় জ্যোৎস্না।
অল্প বাতাস দিচ্ছে। ছাড়াছাড়া ভাবে। বাতাসে কুয়াশার দানা কাঁপছে। কুয়াশার দানায় বিক্ষিপ্ত চাঁদের আলোও কাঁপছে। বিচিত্র পরিবেশ। যেন চাঁদের আলোর ঢেউ উঠেছে জগতময়।
এই বিশেষ মুহুর্তে প্রফেসর খানিকটা বিস্মিত হয়ে খেয়াল করলেন, ছাদে তিনি ছাড়াও অন্য কারো উপস্থিতি। যে নিঃশব্দে হাঁটে। তিনি চোখ বন্ধ করলেন। মস্তিষ্ককে উত্তেজিত হবার সুযোগ দেওয়া যাবে না। উত্তেজিত মস্তিষ্ক অধিভৌতিক চরিত্র তৈরি করে ফেলবে।
প্রফেসরের শীতল মস্তিষ্ক ভাবতে শুরু করল।
‘অন্য কেউ’ ছাদের কোন অংশে থাকতে পারে?
বাতাসে পারফিউমের হালকা গন্ধ। বাতাস আসছে দক্ষিন থেকে। দক্ষিনে বাগানবিলাসের ঝোপ। সম্ভবত ঝোপের আড়ালে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।
প্রফেসর ইজিচেয়ারে শুয়ে শান্ত গলায় বললেন,
‘ইরা, এদিকে আসো মা।’
ইরা বাগানবিলাসের ঝোপের আড়াল থেকে নিঃশব্দে এগিয়ে আসল। প্রফেসর বললেন,
‘তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
ইরা অবাক হয়ে বলল, ‘কেন চাচাজান?’
‘আমি ভেবেছি ছাদে এসে তোমাকে বিরক্ত করব না। তাই রাত একটার পর এসেছি। তুমি এসময় ছাদে থাকো না। আমার ধারণা ভুল। তুমি কী আমার উপর বিরক্ত?’
‘আমি বিরক্ত না চাচাজান।’
‘কাঁদছ কেন মা?’
‘আমি কাঁদছি না।’
‘মিথ্যা বলছ।’
‘মিথ্যা কীভাবে বুঝলেন?’
‘তুমি আমার সামনে এসে দাড়াতে পারতে। সামনে অনেকটা ফাঁকা। তা করো নি। পেছনে দাড়িয়েছ। অন্যান্য প্রাণীর সাথে আমাদের অমিল হল, আমাদের চোখ কথা বলে। চোখের কথা গোপন করতে চোখের আড়ালে দাঁড়াতে হয়। তোমার শুধু চোখই কথা বলছে এমন না। তুমি দীর্ঘসময় কেঁদেছ। গলার স্বর ও কম্পাংকের সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি। তুমি মেপেমেপে দু’তিনটা শব্দ ব্যবহার করে বাক্য গঠন করে জবাব দিচ্ছ। বড় বাক্য বলছ না। তুমি জানো, বেশি কথা বললে যে কেউ বুঝে ফেলবে তুমি কাঁদছ।’
ইরা চুপ করে আছে। প্রফেসর জিজ্ঞাসা করলেন,
‘কেন কাঁদছ ইরা? আমাকে বলো। সমাধান খুঁজতে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।’
ইরা কিছু বলল না।
শীত বাড়ছে। হালকা বাতাশ শৈতপ্রবাহে রুপ নিচ্ছে। প্রফেসর টুল থেকে ফ্লাক্স নামালেন। শাল কোলে তুলে নিলেন। কাজের ছেলেটা সিগারেট দেয় নি----কথাটা সত্য নয়। সে সিগারেট দিয়েছে। শালের নিচে রাখা ছিল যেন কুয়াশায় ভিজে না যায়। ছেলেটার বিচক্ষণতা প্রফেসরকে দ্বিতীয়বার মুগ্ধ করল। প্রফেসর বললেন,
‘ইরা, টুলটায় বসো। চা আছে। খুব বাজে চা। সিগারেট ছাড়া এই চা খাওয়া যায় না। তাই তোমাকে খেতে বলছি না।’
ইরা টুলে বসল।
চাঁদের আলোয় আকাশ ঝলসে যাচ্ছে। চোখধাঁধানো জোছনায় দুরের নক্ষত্ররাজির আলো পর্যন্ত ম্লান। কালপুরুষ কিছুটা উত্তরের দিকে সরে এসেছে।
নুপুরের শব্দ।
ইরা নুপুর পরেছে। টুল টানার সময় চুড়ির শব্দ পাওয়া গেল। একঝাক কাচের চুড়ি। মেয়েটা সাজগোছ করেছে।
‘ইরা?’
‘জ্বী চাচাজান।’
‘ছেলেটা কে?’
‘কোন ছেলেটা?’
‘যার সাথে আজ দেখা করেছ?’
‘দেখা করেছি ভাবছেন কেন?’
‘তুমি নুপুর পরেছ। হাতে চুড়ি। শাড়িও পরেছ।’
‘মেয়েরা অকারণেও সাজগোছ করে।’
‘তুমি অকারণে করো নি।। দীর্ঘদিন শাড়িকে বাক্সবন্দী রাখলে একটা আলাদা গন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভবত ন্যাপথলিনের। সেই গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দুপুরে যে পরো নি সেটা পরিষ্কার।’
‘শাড়ি এইমাত্র পরলে দুপুরে দেখা করার কথা বললেন কেন?’
‘আমার কথার স্বপক্ষে আরো একটা দূর্বল যুক্তি আছে। তুমি পারফিউম মেখেছ। রাতে মাখলে পারফিউমের গন্ধ আরো তীব্র হত। কিন্তু ততটা তীব্র নয়। দুপুরের দিকে মাখা। এখন কিছুটা ম্লান হয়ে এসেছে। তুমি দেখা করেছ দুপুরে। ঠিক বলেছি?’
‘জ্বী।’
‘ওর নাম কি?’
‘সাজ্জাদ।’
‘সাজ্জাদ তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। তুমি যদি আমাকে খোলাশা করো, আমি তোমার কষ্ট লাঘবের কিছুটা কূলকিনারা করতে পারি।’
ইরা ক্লান্ত গলায় বলল, ‘আপনার এতক্ষনে বুঝে ফেলার কথা কেন আমি কষ্ট পাচ্ছি। বাবার ধারণা আপনি ম্যাজিশিয়ান। সব আগে আগে বুঝে ফেলেন।’
‘আমি ম্যাজিশিয়ান না, আমি লজিশিয়ান। লজিকের চেয়ে বড় ম্যাজিক আর নেই।’
‘আমি কেন পারি না?’
‘তুমিও পারো।’
‘কীভাবে?’
‘কোন ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে যেখানেই খটকা লাগবে, সেখানে একটা প্রশ্ন তৈরি করে নিবে। যেকোন প্রশ্ন। খুব গুরুত্বহীন নিরীহ ধরণের একটা প্রশ্ন। এরপর তার জবাব খুঁজে বের করবে। এরপর আরেকটা প্রশ্ন তৈরি করবে। প্রশ্নের পীঠে প্রশ্ন। কোন প্রশ্ন হুট করে শূন্য থেকে আনা যাবে না। খেয়াল রাখবে, একটার সাথে আরেকটা প্রশ্নের যেন সম্পর্ক থাকে।’
ইরা বলল, ‘আপনি কি আমার সমস্যাটা সেভাবেই ধরে ফেলেছেন?’
‘হ্যা।’
‘বলুন শুনি কীভাবে ধরলেন।’

প্রফেসর নাজিব গুরুগম্ভীর গলায় বলতে শুরু করলেন,
‘তোমার ব্যাপারে আমার প্রশ্নগুলো হল----
প্রশ্নঃ ১- ইরা ছাদে কেন?
উত্তরঃ সে ছাদে থাকতেই পারে। নিজের বাগানে ঘুরছে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক।
প্রশ্নঃ ২- আজকে কোন ব্যাপারটা অস্বাভাবিক?
উত্তরঃ অনেক রাত পর্যন্ত সে ছাদে আছে।
প্রশ্নঃ ৩- অস্বাভাবিক কোন জিনিসটা চোখে বেশি পড়ছে?
উত্তরঃ সে সাজগোছ করেছে।
প্রশ্নঃ ৪- সাজগোছের কারণ কি?
উত্তরঃ পুরুষজনিত ব্যাপার।
প্রশ্নঃ ৫- কোন পুরুষ? বাবা নাকি অন্য কেউ?
উত্তরঃ অন্য কেউ।
প্রশ্নঃ ৬- কেন বাবা নয়?
উত্তরঃ বাবার সাথে রাগ বা অভিমান করে কেউ শাড়ি পরে না। হাতে চুড়ি, পায়ে নুপুর পরে না।
প্রশ্নঃ ৭- অন্য কেউ-টা কে?
উত্তরঃ ইরা নিজেই জবাব দিয়েছে। তার নাম----সাজ্জাদ।
প্রশ্নঃ ৮- আজ দুপুরে সাজ্জাদের সাথে তার যা হয়েছে তা কী ভয়াবহ?
উত্তরঃ হ্যা ভয়াবহ। তাদের সম্পর্কের ইতি টানার মত ব্যাপার।
প্রশ্নঃ ৯- ইতি টানার মত----এর পেছনে যুক্তি কি?
উত্তরঃ যত বড়ই ঝামেলা হোক, মেয়েরা ব্যক্তিগত মোবাইলফোন কখনোই হাতছাড়া করে না। সুইচ অফ করলেও হাতে রাখে। ইরার হাতে ফোন নেই।
প্রশ্নঃ ১০- ইতি টানার মত ঝামেলাটা কী?

প্রফেসর দশ নম্বর প্রশ্নে এসে থেমে গেলেন।
ইরা কান্না চেপে রেখেছে। চাপা কান্না ভয়াবহ জিনিস। বড়সড় কষ্টকে গ্রহণ করার মোক্ষম পদ্ধতি হল, তুলকালাম কান্নাকাটি করা। কান্নাকাটির পর মস্তিষ্কে বড় ধরণের পরিবর্তন আসে। এই মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা যৌক্তিক। কান্নার আগমুহুর্তের অযৌক্তিক চিন্তাগুলো কান্নার জলে ধুয়ে যায়।
প্রফেসর ইরাকে বললেন,
‘ইরা, তুমি অনেক চমৎকার একটি মেয়ে। প্রকৃতি তোমাকে যথেষ্ট মায়া করে একটি বড়সড় বিপদের হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছে। তুমি কী তা বুঝতে পারছ?’
ইরা প্রায় নিঃশব্দে বলল,
‘হুম।’
প্রফেসর আকাশের দিকে তাকালেন। কালপুরুষ আরেকটু দক্ষিনে সরে গেছে। খুব দ্রুত আড়াল হবার পথে।
ইরা বলল,
‘চাচাজান, আপনার কী কখনো মনে হয়েছে, ছাদ থেকে লাফ দিই?’
প্রফেসর বললেন,
‘মনে হয়েছে।’
‘কখন মনে হয়েছে?’
‘এই যেমন এখন মনে হচ্ছে। কড়া চাঁদের আলো আমি সহ্য করতে পারি না।’
‘কেন পারেন না?’
‘এই আলোয় আমি ঠিকঠাক আকাশের তারা দেখতে পাই না।’
‘আকাশের তারার সাথে লাফ দেবার কী সম্পর্ক।’
‘কোন সম্পর্ক নেই। ব্যাপারটা খানিকটা ফ্যাণ্টাসীর মত। আমার মত দূর্বল মানুষের সর্বোচ্চ ফ্যান্টাসী হল অতি বিরক্তিতে ‘মরে যাব’ টাইপ ভাব ধরা। তবে এখন আর এই ফ্যাণ্টাসী তেমন আনন্দ দেয় না। বয়স বেড়েছে। মৃত্যু নামক ব্যাপারটির অতি মন্থনে বিষ উঠেছে।’
ইরা খানিকটা থামল। এরপর নীচু গলায় বলল,
‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মারা যাব। সাজ্জাদের ব্যাপারটির পর আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। আমার মনে হচ্ছে আমি শুধু পড়ছি। যেখানে পড়ছি তার তল নেই। অন্ধকার, অতল গর্ত।’
প্রফেসর নাজিব খানিকটা বিস্মিত হলেন। ইরা মারা যেতে চাচ্ছে, ব্যাপারটি মোটেই রসিকতা নয়। মারা যাব----শুধু এতটুকু ভাবনায় একটা মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। ইরা অল্পবয়সী। এ বয়সে মস্তিষ্ক সবকিছুই দ্রুত গ্রহণ করে। তার কণ্ঠস্বর বেশ শীতল। যুক্তি অনুযায়ী তার মস্তিষ্কও শীতল। শীতল মস্তিষ্কের আত্মঘাতী ভাবনা বেশ বিপদজনক।
প্রফেসর জিজ্ঞাসা করল,
‘ইরা, এই সিদ্ধান্তে তুমি কি অটল?’
‘জ্বি।’
‘বদলানোর কোন সুযোগ নেই?’
‘সুযোগ আছে। কিন্তু ইচ্ছা নেই। বেঁচে থাকার স্পৃহা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। স্পৃহাটা বর্তমানে আমার মাঝে অনুপস্থিত।’
প্রফেসর নাজিব ক্ষীণ স্বরে বললেন,
‘সিদ্ধান্ত একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ইউথানসিয়া নামক একটি ব্যাপার আছে। ইউরোপের কিছু দেশে আইনসিদ্ধ। কেউ মরে যেতে চাইলে তাকে মরতে সাহায্য করা হয়। তার ইচ্ছাকে সম্মান করা হয়। আমিও সম্মান করছি।’
ইরা কিছু বলল না। প্রফেসর বলল,
‘তোমার আগ্রহ থাকলে আমি তোমাকে একটা গল্প বলতে চাই।’
ইরা খানিকটা ভুরু কুঁচকালো। অন্ধকারে কুঁচকানোর ব্যাপারটি ঠিকঠাক বোঝা গেল না।
‘কেন বলতে চান?’
‘কেন চাই জানি না। প্রকৃতি তার নিজ প্রয়োজনে মাঝেমাঝে বড়সড় পরিকল্পনা করে অসময়ে অপরিচিত দুজন মানুষকে পরিচিত করিয়ে ফেলে। তাদের পারস্পারিক চিন্তাভাবনার জগতকে নাড়া দেবার ব্যবস্থা করে। আমার ধারণা, আজকের রাতে তোমার সাথে আমার দেখা হবার ব্যাপারটিও তেমন। প্রকৃতির পূর্ব পরিকল্পিত।’
ইরা বলল,
‘আপনার গল্প বলুন।’
প্রফেসর নাজিব বেশ শান্ত ও স্নিগ্ধ গলায় বললেন,
‘আমি তখন মাত্রই সাইকিয়াট্রিতে প্রফেসরশীপ পেয়েছি। বড় দায়িত্ব। পোস্ট-গ্রাজুয়েটদের পরীক্ষা নিতে গেছি ঢাকায়। তিনদিন পর ফিরলাম। কাধভর্তি খেলনা। আমার মেয়ের জন্য। তার বয়স মাত্র দুই বছর।
বাসায় ফিরে দেখি আমার মেয়ে নেই। মেয়ের মা নেই। আমি ভাবলাম কোথাও ঘুরতে গেছে। যথাসময়ে ফিরবে। আমি বাসায় বসে বসে অপেক্ষা করলাম।
ইরা জিজ্ঞাসা করল,
‘এরপর?’
‘সেদিন কেউ ফিরল না। আমি ভাবলাম বিপদে পড়েছে। পুলিশে ডায়েরি করলাম। কাছের সবাইকে ফোন করে অস্থির করে তুললাম। সাতদিন চলে গেল। আমি পাগলপ্রায়।’
‘সাতদিন পর পেলেন?’
‘না পাই নি। আজ পনের বছর পূর্ণ হল।’
ইরা বিস্মিত হয়ে বলল,
‘আশ্চর্য ব্যাপার। দুটো মানুষ এভাবে নিরুদ্দেশ হতে পারে না। আপনি কি এখনো জানেন না তারা কোথায় আছে?’
প্রফেসর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
‘এখন জানি।’
‘আপনি যোগাযোগের চেষ্টা করছেন না?’
‘না।’
‘কেন?’
‘কেন করছি না এই জবাব আমি দিতে চাই না ইরা। তোমার ভাল লাগবে না।’
ইরা কিছু বলল না। প্রফেসর পরিবেশকে হালকা করার জন্য বললেন,
‘আমার মেয়েকে নিয়ে একটা ছোট ঘটনা আছে। শুনতে চাও?’
ইরা বলল,
‘চাই।’
প্রফেসর আনন্দিত গলায় বললেন, ‘আমার কন্যা তখন অল্পবিস্তর আওয়াজ দিতে শিখেছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সে প্রথমে যেসকল শব্দ বলা বলবে, আমি তার একটা লিস্ট দাঁড় করালাম। লিস্টে প্রথম শব্দগুলো হল-
মামা
বাবা
দুদু
দাদা
কাকা বিবিধ।
এসব নির্দিষ্ট শব্দ কেন উৎপন্ন হবে?
এর পেছনের যুক্তি আমি খুঁজে বের করলাম। অবচেতন মনে ভোকাল কর্ড থেকে সমতরঙ্গের স্বর উৎপন্ন হয়। ঠোঁটে বারবার অনুরণিত হলে বাই-সিলেবল টাইপের শব্দ উৎপন্ন করে। মানবমস্তিষ্ক আদি বয়সে মিশ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে শব্দ উৎপন্ন করতে পারে না। যেমন- কখনো মাগো, বাবারে, দুদুটা বা দাদাভাই টাইপের শব্দ উৎপন্ন হয় না।
তনু দু’বছরের মাথায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম যে শব্দটা বলল, তা হল---- ‘ও বাবা’।
কন্যার মুখনিস্মৃত আদি শব্দ শুনে বড়সড় রকমের ধাক্কা খেলাম। অতি আনন্দে হাতের চায়ের কাপ পড়ে তার পা পুড়ে গেল। আশ্চর্য কারণে আমি মাংস পোড়ার যন্ত্রণা বুঝতেই পারলেন না।
একটি স্পষ্ট ও রহস্যময় শব্দ শুনে আমার পিতৃহৃদয় আদ্যেপান্ত আলোড়িত হল। অতি আনন্দের চোটে আধপাগল হয়ে গেলাম। মিসটিক আবেগ আমাকে দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত কর্মাকাণ্ড করে নিল।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ব্যাপার হল, কন্যাকে রাত দুটোয় ছাদে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করি। আকাশময় তারা। আঙ্গুল দিয়ে কন্যাকে একটা একটা করে তারা চেনাই। কোলের কন্যাকে ফিসফিস করে বলি,
‘মাগো, এটা বেলাট্রিক্স। সিংহের মাথার মত দেখা যায়। তার ডানেরটা বেটেলজিয়াস। তরবারির মত। তাদের কোমরে তিন তারা। মিনতাকা, আলনিলাম,আলনিটাক...
আমার বিচিত্র কর্মাকাণ্ডে আমার কন্যা বিরক্ত না হয়ে পাখির মত শান্ত হয়ে শুয়ে থাকত। কন্যা হারিয়েছি কিন্তু চমৎকার অনুভূতিটুকু হারাতে পারি নি। বর্ষপূর্তির দিনে আমি আকাশের তারায় তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।
ইরা বলল,
‘আপনি সূক্ষ্ম চেষ্টা করছেন আমাকে আত্মহত্যার ব্যাপারটি থেকে টেনে বের করতে।’
‘তোমার ধারণা ভুল। আমি বের করছি না। তুমি নিজেই বের হয়েছ। তুমি এই ব্যাপারটি এখনো জানো না। আমার কাজ হল সেটা জানিয়ে দেওয়া।’
ইরা ভুরু কুঁচকে বলল,
‘কীভাবে বের হলাম?’
প্রফেসর খানিকটা আগ্রহ নিয়ে বললেন,
‘প্রতিটা বিপদ মানুষকে একটি নির্দিষ্ট থ্রে-শোল্ডে ধাক্কা দেয়। এই লেভেলের ধাক্কা খেলে মানুষ সহ্য করতে পারে না। খুঁটি ভেঙ্গে যায়। মানুষের মনে হয়, সব শেষ। রেডিও টিভি বন্ধ করে দেবার মত নিজের অসহনীয় যাপিত জীবনকে হুট করে থামিয়ে দিলে বুঝি সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তোমার বিপদ তোমাকে এমনি এক ধাক্কা দিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল তুমি ধাক্কাটা খুব ভালোভাবে সামলে উঠতে পেরেছ। দীর্ঘসময় কান্নাকাটি করেছ। ছাদে উঠে নিজেকে নিয়ে ভেবেছ। শুরুতে আমার সাথে কথা না বললেও এখন বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছ। কারণ আত্মহত্যার মত জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি থেকে তুমি অনেকটা মুক্ত হয়েছ।’
ইরা বলল,
‘আর আত্মহত্যার সম্ভাবনা নেই?’
‘অবশ্যই আছে। বড় ভুমিকম্প থেমে গেছে। তোমার খুঁটি না উপড়ালেও এখন বেশ দূর্বল। এখন চলবে আফটার শক। ছোটছোট ভুমিকম্প। তুমি চাইলে এই শক কিছু করতে পারবে না।’
ইরাবতী বিশেষ কিছু বলল না।
পাশের ত্রিপদী স্ট্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপনার টেলিস্কোপ কাজ করেছে শেষ পর্যন্ত?’
প্রফেসর নাজিব খানিকটা ভালো বোধ করলেন। ইরাবতী এখন বৈশ্বিক চিন্তাভাবনা করছে। তার মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা আত্মহত্যার মত বিপদজনক ব্যাপারটি থেকে খানিকটা সরে এসেছে। মস্তিষ্ক এখন দিঘীর শান্ত জলের মত। জল নড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম।
প্রফেসর আগ্রহ নিয়ে জবাব দিলেন,
‘না গো মা। কাজ করছে না।’
ইরা বলল,
‘আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি একদিন আপনাকে একটা টেলিস্কোপ কিনে দিব। দুইশ আলকবর্ষ দূরে পৃথিবীর মত দেখতে একটা সবুজ গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি টেলিস্কোপে সেই গ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকবেন।’
‘কেন তাকিয়ে থাকব?’
‘কারণ আমার ইচ্ছে হল, সেই গ্রহটা হবে আমাদের। এই পৃথিবীর যেসকল মানুষ ভয়ংকর পরিমাণ একা, তারা সেই গ্রহের বাসিন্দা।’
‘গ্রহটা দেখতে কেমন?’
‘কেমন দেখতে জানি না চাচা।’
‘বানিয়ে বানিয়ে বল শুনি।’
ইরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
‘সুবিশাল প্রান্তর। প্রান্তর জুড়ে সবুজ আর সবুজ। এরপর বিশাল জলরাশি। সমুদ্র। সমুদ্রের নীল জল।’
‘আর কিছু নেই?’
‘আছে।’
‘কী আছে?’
‘সমুদ্রে অনেক পালতোলা নৌকা।’
প্রফেসর হেসে বললেন,
‘সমুদ্রে নৌকা তো উল্টে যাবে ইরা।’
‘উল্টে গেলে যাবে। সেখানে উল্টে যাবার ভয় ভয় থাকবে না। সবুজ গ্রহে জীবন সরল অংকের সমীকরণের মত কখনো শূন্য হবে না।’
প্রফেসর বেশ শান্ত গলায় বললেন,
‘অবশ্যই গো মা, অবশ্যই।’
@@@@@@@

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়