Ameen Qudir

Published:
2019-10-16 20:13:28 BdST

ব্যাক্তিগত এক বিজ্ঞাপনকে ঘিরে রুদ্র ও তসলিমার যেভাবে প্রেম হয়েছিল



ডেস্ক
_______________________

প্রথমত: তিনি চিকিৎসক। লেখক চিকিৎসক। তার পর পান বিশ্বখ্যাতি। তার প্রথম প্রেম ডাক্তার বেলায়। ময়মমন সিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের প্রখ্যাত এক তরুণ কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে। কি ভাবে হয়েছিল সেই ডাক্তার তসলিমা নাসরিন ও কবি রুদ্রর প্রেম। তা জানা গেল সুলেখক ডা. মোরশেদ হাসানের এক লেখায়। লেখাটি প্রকাশ হল।তার লেখায় বিচিত্রার ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপন থেকে রুদ্র-তসলিমার প্রেমের সূচনা। সাপ্তাহিক বিচিত্রার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন থেকেই তসলিমা নাসরিনের উত্থান। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে তাঁকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা নেই, কখনও ছিল বলেও মনে হয় না।বাকিটা পুরো লেখায় ...

তসলিমা নাসরিন ১৯৮৭/'৮৮ সালে পাঠক মহলে পরিচিতি পেতে থাকেন। তখন হাতের কাছে যা পাই তা-ই পড়ি। তসলিমা নাসরিনের রগরগে কিছু কবিতা ছাপা হয় তখনকার সাপ্তাহিক খবরের কাগজে বা অন্য কোনো ম্যাগাজিনে বা দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতায়। বন্ধুবান্ধব হুমড়ি খেয়ে পড়ত। যৌন সুড়সুড়ি থাকত কবিতাগুলোয়। আমার মনে হত তসলিমাকে আমি আরও আগে থেকে চিনি। কবে থেকে? সত্তর দশকের শেষভাগ থেকেই। সে কীভাবে সম্ভব? তসলিমা নাসরিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়েন। আমিও পড়ি। সে তো নয় বছরের ব্যবধানে। তবে?

১৯৭২ সালে প্রথম প্রকাশিত 'বিচিত্রা' ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। ঢাকার দৈনিক বাংলা ভবন থেকে ছাপা হত। বিচিত্রার অনেকগুলো আইটেম ছিল হটকেক। এদেশে বিচিত্রার মতো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সাপ্তাহিক আর বের হয়নি। যাঁরা পড়েছেন তাঁরা জানেন। সত্তর দশকে স্কুলে পড়ি। সাপ্তাহিক বিচিত্রা বাসায় এলে প্রথমেই উলটেপালটে 'কুরুক্ষেত্র' পড়ে নিতাম। মিষ্টিমধুর প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদের সত্যিকার গল্প থাকত। বিচিত্রার পাঠক-পাঠিকারাই লিখে পাঠাতেন। প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ের পর পারিবারিক সংঘর্ষ, নৈকট্য থেকে দূরে সরে যাওয়া, দুটো হৃদয়কে ঘিরে ব্যক্তিত্বের সংঘাত পাঠক-পাঠিকাদের আকুল করে টানত চুম্বকের মতোই। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র আদলে নাম রাখা হয়েছিল 'কুরুক্ষেত্র'।

ক্রীড়াপাতার হাত ধরে সুনীল গাভাস্কার, ইমরান খান, ভিভ রিচার্ডস নামগুলোর সঙ্গে প্রথম পরিচয়, তাঁদের সাদাকালো ছবি দেখি। প্রবাসের চিঠি'তে ফুয়াদ, নমিতা ইসলামের লেখা, সিনেমা সমালোচনা পড়ি, মাহমুদা নামে একজন লিখতেন সম্ভবত। ১৯৭৮ সালে প্রথম বের হয় রনবীর কার্টুন স্ট্রিপ টোকাই, আলাউদ্দিন বা মরণচাঁদের মিষ্টির কার্টুন। এখন সেই আলাউদ্দিন, মরণচাঁদের মিষ্টি আছে কি না জানি না। পাঠকের পাতা আর প্রধান প্রচ্ছদ বা ফিচার পাতা তো আছেই। আরেকটি ছিল ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন। দু'থেকে চার-পাঁচ লাইনে নিজের মনের ভাব ফুটিয়ে ছাপা হত, বিজ্ঞাপন দাতার নামসহ। এটি নিজের খরচে ছাপাতে হত। পুরুষরাই বেশি লিখতেন, মেয়েরা খুব কম। স্মৃতি থেকে একটি নমুনা দিচ্ছি।
--ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে গোলাপি ওড়না পরা মেয়েটিকে বলছি। বাসে পানি খেতে চাওয়ায় আমার পানির ফ্লাস্ক বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। নেভি ব্লু শার্ট পরা যুবকটি আমি। তিনবার চোখাচোখি হয়েছিল। আপনাকেই দিনরাত ভাবি। ভালো লাগলে যোগাযোগ করবেন। ঠিকানা...।

সাপ্তাহিক বিচিত্রার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনেই তসলিমা নাসরিনকে প্রথম দেখি। অনেক পরে হেলাল হাফিজ তসলিমার ত আর নাসরিনের না মিলিয়ে তনা নাম দিয়েছিলেন। তনা ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে লিখেছিলেন, "আমার মরফিয়া তুমি নাও, ঘুমাও মানিক সোনা, ঘুমাও।" রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সেই ডাকেই সাড়া দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে করেন আগমন। সেই ডাকে জীবনেরও নির্গমন ঘটে যায়।
সেই তসলিমা ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে গেলেন। তসলিমার প্রথম কবিতার বই 'শেকড়ে বিপুল ক্ষুধা"।

সাপ্তাহিক বিচিত্রার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন থেকেই তসলিমা নাসরিনের উত্থান। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে তাঁকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা নেই, কখনও ছিল বলেও মনে হয় না। ছাত্র সংসদের দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স আপ হয়েছিলেন। তখনও তিনি খ্যাতি পাননি। নিজের মতো কবিতা লেখেন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়