Ameen Qudir

Published:
2019-09-22 22:57:30 BdST

বাংলাদেশে সৎ মানুষ কে?


 

 

ডাঃ জোবায়ের আহমেদ
সুলেখক__________________________

ইদানিং মাথায় শুধু নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে।।
নানা ভাবনায় মন অস্থির হয়ে যায়।
আজ সকালে মাথায় যে প্রশ্নটা বারবার আসছে তা হলো এই দেশে আসলে কে সৎ?
সততার চর্চা আসলে কারা করেন এই দেশে।।
অবশ্যই সৎ মানুষ আছেন এই দেশে।
তবে তাদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারেই কমছে বলে আমার ধারনা।
মানুষ কেন সৎ থাকতে পারছেনা এই প্রশ্নটাও আসছে
মাথায়।এবং টাকার নেশা মানুষ কে দিন দিন কিভাবে অমানুষে পরিনত করতেছে তা ভেবে আতংকিত হই।
অর্থ ই অনর্থের মূল এটা আজকাল খুব দৃশ্যমান।।
সৎ বা হালাল উপায়ে এই দেশে কারা বা কোন পেশার লোকের ভালো টাকা ইনকাম করতে পারে??
তাই যে যেভাবে পারছে টাকা ইনকামের প্রতিযোগিতায় মত্ত।
টাকা ইনকামের সেই প্রতিযোগিতায় যেই পন্থা অবলম্বন করছে মানুষ আজকাল তাতে হালাল - হারামের ধার ধারছেনা কেউ।
আমার চিকিৎসা পেশা দিয়ে শুরু করি।
আমাদের দেশের অনেক চিকিৎসক আছেন যারা টাকার নেশায় আর মানুষ নেই।
এক একজন চিকিৎসক টাকা ইনকামের মেশিনে পরিনত হয়েছেন।
শুধু টাকাই বুঝেন উনারা।
সেবা, মানবতা, রোগীর আর্থিক অবস্থা ও অসহায়ত্ব কিছুই উনারা বিবেচনা করেন না।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেন এমন চিকিৎসক এর সংখ্যা কিন্ত কম নয় এই দেশে।
মেডিসিন কোম্পানি থেকে টাকা খেয়ে অপ্রয়োজনীয় মেডিসিন লিখেন অনেকে। বাজে কোম্পানির মেডিসিন লিখতেও অনেকের হাত কাঁপেনা।
ডিব্বা লিখার ডাক্তারেরও অভাব নেই দেশে।
কোম্পানির স্পন্সর নিয়ে ফ্যামিলি ট্যুরে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে গিয়ে নিজের আত্মাটাই বন্ধক রাখেন তাদের কাছে অনেক চিকিৎসক।
Intellectual dishonesty আজ কাল খুব প্রকট কিছু ডাক্তার নামধারী অমানুষ এর মাঝে।
একটা উদাহরণ দেই।
কুমিল্লার একজন বিখ্যাত মেডিসিন স্পেশালিষ্ট যাকে আমি খুব রেস্পেক্ট করতাম তিনি আমার এক রোগীকে ইউরিন ইনফেকশন এর জন্য মেরোপেনাম ইঞ্জেকশন দিলেন ২১ টা। প্রতিটা ইঞ্জেকশন এর দাম ১৩০০ টাকা করে।।
রোগীর বড় ভাই আমাকে ফোন দিলেন।বললেন,স্যার এই ইঞ্জেকশন দিয়েছেন আমার বোন কে। কিন্ত এর টাকা আমরা কিভাবে ম্যানেজ করবো?
তুমি একটু রিপোর্ট টা দেখে বলোনা অন্য কোন মেডিসিনে এই ইনফেকশন কমবে কিনা।
আমাকে ইউরিন কালচারের রিপোর্ট পাঠালো ছবি তুলে।
আমি দেখলাম সেখানে Levofloxacin, Nitrofurantoin, এর মত সস্তা অনেকগুলো এন্টিবায়োটিক সেন্সিটিভ।
আমি লিভোফক্সাসিন দিলাম।
৭ দিন খাওয়ার পর পুনরায় আবার ইউরিন কালচার করে দেখা গেলো ইনফেকশন ভালো হয়ে গেছে।।
রোগীর খরচ পড়লো ১৭৫ টাকা।
কিন্ত মেরোপেনাম দিলে খরত পড়তো ২৭৩০০/ টাকা।
সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর কথা, মেডিকেল ইথিক্স এর কথা ভাবেননি।
উনি ভেবেছেন প্রতি ইঞ্জেকশন থেকে ৫০০ টাকা কমিশন এর কথা।।
দেশে যে এত সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে তা কি সব দরকারী?
কিছু অসাধু ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশে কিছু চিকিৎসক এই অন্যায্য কারবারে সহযোগিতা করছেন তা কি এড়িয়ে যাওয়া যাবে??
তবে এই দেশের হাজার হাজার চিকিৎসক আছেন যারা রোগীবান্ধব,কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেননা,অপ্রয়োজনীয় মেডিসিন লিখে কোম্পানিকে খুশি করেন না।
ইথিক্যাল প্র্যাকটিস করেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
এইবার পুলিশ বিভাগের উপর একটু নজর দেওয়া যাক।
এই মাসে ঢাকা থেকে বাসে সিলেট ফিরছিলাম।তখন আমার সাথে ডিএমপির একজন এডিশনাল এসপি সিলেটে আসেন।
অল্প সময়ে ভালো খাতির জমে উঠে দুজনের মধ্যে।
নানা আলোচনার পর পুলিশের দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্য নিয়ে আলাপ শুরু হলো।
ভদ্রলোক নিজেকে সৎ পুলিশ অফিসার দাবী করে বললেন,আজকাল সৎ থাকা অনেক কঠিন ভাই।
সবাই যখন দূর্নীতিগ্রস্থ, তখন একা সৎ থাকা কঠিন।
উনি বললেন,কিভাবে পুলিশ সাধারন মানুষ কে হয়রানি কে টাকা ইনকাম করে।।
রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার এর হুমকি দিয়ে কিভাবে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে।।
কিভাবে ইয়াবার মামলায় মানুষকে ফাঁসানো হয়।
বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত নামা আসামি রেখে সেখানে ভালো ও নিরীহ মানুষকে ঢুকানো হয় টাকার জন্য।।
দূর্নীতির ফিরস্থি দিয়ে শেষ হবেনা।।
বিভিন্ন থানায় পদায়নের জন্য ২০-৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় একজন ওসিকে।
তখন সেই ওসি পুলিশিং কে আর সেবা ভাবেন না,বিজনেস ভাবেন।।
আমরা সবাই জানি সেসব কথা।
অনেক ভালো ও সৎ পুলিশ অফিসার আছেন তবে তাদের সংখ্যা আজকাল খুবই কম।।
শুধু টাকার নেশাই পুলিশকে আর পুলিশ থাকতে দিচ্ছেনা।
দেশের ইঞ্জিনিয়াররা কি সৎ?
তবে ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজশে রডের পরির্বতে বাঁশ ঢুকে যায় কিভাবে।।
সওজের ইঞ্জিনিয়াররা এক একজন কিভাবে আকুন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
উকিল সাহেবদের কথা আর নাই বলি।
কিভাবে মামলার মারপ্যাঁচে মক্কেলের পকেট কাটেন তা সবাই জানে।।
উনাদের ফিস এর কোন লাগাম নেই।
আপনার বিপদ টের পেয়ে উনারা আপনাকে শুষে খাওয়ার সব ব্যবস্থাই করবেন।
সাংবাদিক সাহেবরা কি সৎ?
টি আর পি ও পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য উনারা কি না করেন।গ্রামে গঞ্জে অনেক সাংবাদিক চাঁদাবাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ আছেন।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে উনারা কতটুকু আন্তরিক?
এই দেশের সাংবাদিকরা যে খাম পেয়ে অনেক বড় বড় অন্যায় চেপে যান,খাম পেয়ে তাদের কলম কে স্তব্ধ করে দেন তা অজানা নয়।।
সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। কিন্ত সেই বিবেকবোধ কতজনের মাঝে আছে।।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিউজ পরিবেশন করে উনারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করার নজিরও অনেক।
আবার টাকা খেয়ে শয়তান কে ওলি বানাতেও উনাদের কলম থামেনা এমন নজিরও আছে।।
সততা আন্তরিকতা দেশপ্রেম কতজন সাংবাদিকের ভেতর আছে?
ব্যবসায়ীরা আমাদের নিয়ে কি করেন?
রোজার মাসে যখন অন্য মুসলিম দেশগুলোতে নিত্য পন্যের দাম কমে তখন আমাদের এখানে তা আকাশচুম্বী।।
সিন্ডিকেটের মাধ্যেমে কিভাবে উনারা দাম বাড়ান তা আমরা জানি।
এই যে সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়াতে মশার কয়েল মশারী,এরোসল এর চাহিদা বাড়ার সাথে সাথেই উনারা দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফার লোভে অমানুষে পরিনত হয়ে গেলেন।।।
সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দূর্নীতি নিয়ে আর কিছু বলার নেই।
সিলেটের ডি আই জি প্রিজনের বাসায় ৮০ লাখ টাকা ঘুষ ও দূর্নীতির মাধ্যমে আয় করেছেন তা পাওয়া গেলো।
সরকারি দূনীর্তিবাজ কর্মকর্তারা আবার উনাদের শাশুড়িকে খুব ভালবাসেন।
উনাদের টাকা গুলো শাশুড়ির নামে এফডিআর করা থাকে।।
আপনি বিপদে পড়লে এই দেশের সিএনজিওয়ালা, রিক্সাওয়ালা রেগুলার ভাড়ার চেয়ে তিনগুন চারগুন বেশি ভাড়া আদায় করতে চান।।
শিক্ষকরা কি সবাই সৎ?
স্কুল কলেজের বিভিন্ন স্যাররা উনাদের কাছে টিউশন না নিলে কিভাবে ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের জিম্মি করেন তা আমাদের জানা ও দেখা।।
রাজনীতিবিদ দের নিয়ে কথা বলতে মানা।
দেশে শত শত ক্যাসিনোর সন্ধান মিললো।
বড় বড় রাজনীতিবিদরা সেগুলোর মালিক।
দেশে কিভাবে চাঁদাবাজি, দূনীর্তি, টেন্ডারবাজির মহা উৎসব চলছে তা সবাই দেখছেন।।
আগের দিনে জমিদারের ছেলেরা রাজনীতি করতে গিয়ে ফকির হয়ে ঘরে ফিরতেন।
এখন ফকিরের ছেলেরা রাজনীতিতে নেমে জমিদার হয়ে টাকার পাহাড় গড়ে ঘরে ফিরেন।।
এই দেশের মানুষ যখনই নিরুপায় হয়ে যার কাছে আশ্রয় খুঁজে তখন সেই ব্যক্তিই দানব হয়ে যান।
সব কিছুতেই টাকা ইনকামের নেশা চেপে যায় আমাদের।
ভয়ংকর এই নেশা।
এই টাকার নেশাই আমাদের সৎ থাকতে দিচ্ছেনা।
এক একজন মানুষকে মানবিক মূল্যবোধ লালনকারী মানুষ না বানিয়ে অমানুষ এ পরিনত করছে দিনদিন।।
এই দেশে কে তবে সৎ?
অবশ্যই সৎ মানুষ আছেন তবে অসৎ মোনাফাখোর ও লোভী অমানুষদের সংখ্যা সব পেশায়ই বাড়ছে তীব্র ভাবে।।
দিনশেষে ভুগছে সাধারণ মানুষ।
ভুগবে সাধারণ মানুষ।
এই সাধারণ খেটে খাওয়া সহজ সরল মানুষেরদের নিয়ে ভাবার কেউ নেই।।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়