Ameen Qudir

Published:
2019-09-04 18:18:57 BdST

ফেসবুক আর ব্লগ পড়িয়ে জেনারেশনের কাছে সায়ীদ স্যারের সাহিত্যকে অশ্লীলতা মনে হচ্ছে


ডা. রুমী আহমেদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রখ্যাত চিকিৎসক
____________________

আমি কখনো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যাই নাই - ঢাকা কলেজেও আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের সরাসরি ছাত্র ছিলাম না| স্যারকে কাছ থেকে দেখেছি নিউ ইয়র্ক থাকার সময়| স্যার নিউ ইয়র্কে আসলে ওনাকে নিয়ে রাত জেগে যে আড্ডা গুলো হতো সেগুলোতে থাকতাম আসিফ সালেহ, আশরাফ বুলবুল প্রমুখের আমন্ত্রণে | তাও অনেক আগের কথা, ২০০০ কি ২০০১ /২ হবে| এমনি এক সন্ধ্যায় স্যার বেশ অসুস্থ, কফ কাশি - এজমার মতো হচ্ছে|
আমি তখন রেসিডেন্সি করি - তার পার্ট হিসেবে কুইন্স জেনারেল হাসপাতালে যাই| কুইন্স জেনারেল নিউ ইয়র্ক সিটির মালিকানাধীন হসপিটাল| ওখানে এপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দিয়ে ডাক্তার দেখানো যায়, পরীক্ষা নিরীক্ষা ওষুধ পর্যন্ত ডিসপেন্স করে দেয়া যায় ইন্সুরেন্স ছাড়াই| পরে বিল পাঠাবে - যা আমাদের বাংলাদেশী ভিজিটর রা কেউ পে করেন না| এই তথ্যটা তখন ইমিগ্র্রেন্ট কমিউনিটির অনেকে জানতো, সেই সুবাদে অনেক লোকাল বাংলাদেশী আত্মীয় স্বজন আর ভিজিটর সেলিব্রিটি দের চিকিৎসার জন্য ওখানে নিয়ে যেত| এই সুবাদে আমি বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভদ্রলোক, চিত্র তারকা, আমলা, পলিটিশিয়ান এর চিকিৎসা কুইন্স জেনারেল হাসপাতালে করেছি |
তো আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটা এপয়েন্টমেন্ট করে ফেললাম | কিন্তু স্যার এপয়েন্টমেন্ট এ এলেন না| বুলবুল কে ফোন করে জানলাম স্যার বেশ অসুস্থ কিন্তু কিন্তু বিল এর ব্যাপারটা জানার পর উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে উনি এই ফাইনান্সিয়াল অসাধুটা করতে পারবেন না, তাই চিকিৎসা নেবেন না|

আরো অনেক বছর আগে বিটিভি তে জলসা নামে একটা গানের অনুষ্ঠান হয়েছিল প্রয়াত উপস্থাপক ও গার্মেন্টস অনট্রাপ্রেনর আনিসুল হকের উপস্থাপনায়| ব্যান্ড সংগীত ভার্সেস ধ্রুপদী সংগীত| একেবারে ষ্টার স্টাডেড অনুষ্ঠান| কলিম শরাফী, খান আতা, মুস্তফা মনোয়ার, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, নিলুফার বানু প্রমুখ রিপ্রেজেন্ট করছেন ওল্ডার জেনারেশন কে| নুতন জেনারেশন এর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন হামিন, শাফিন আর পার্থ| সে অনুষ্ঠানে যে দুজন মানুষ তীব্র ভাবে ব্যান্ড সংগীতের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেছিলেন তার একজন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ|

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ কালচারালি বেশ রক্ষণশীল ঘরানার মানুষ| এই রক্ষণশীলতার জন্য যা লাগে সেই সততা, পিওরিটি, সাহস, স্যাক্রিফাইস, স্ট্যাবর্ননেস ওনার মধ্যে আছে|

সম্প্রতি দুটো বিষয়ে কথা বলে উনি বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন| প্রথম বিষয়টায় প্রবাসী শ্রমিক দের কিছু আচরণের ব্যাপারে পলিটিকালি ইনকারেক্ট অথচ ট্রু কিছু অবজারভেশন উনি দিয়েছিলেন| ওনার যে অবজারভেশন তার সাথে আমার অবজারভেশন পুরা মিলে যায়| ইন্ডিভিজুয়ালি আপনি যখন এই প্রবাসী শ্রমিক দের সাথে কথা বলবেন - আপনি ওদেরকে ভিন্নভাবে দেখতে পাবেন, ভেতরের স্ট্রাগল, ইনজাস্টিস, হোপ, হতাশা সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে| কিন্তু বিমানে, বিমানবন্দরে কালেক্টিভলি ওদের আচরণ যে সভ্যতার নূন্যতম মাত্রার নিচে তা অস্বীকার করার উপায় নাই|

আর দ্বিতীয় ব্যাপারটা শাড়ি| এটা আগে মাথায় আনতে হবে যে যারা আজ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বিরুদ্ধে শাড়ি লিখাটার জন্য ভোকাল, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ তাদের দাদা বা নানার বয়েসী| চিন্তা ভাবনার মধ্যে একটা জেনারেশন গ্যাপ যে থাকতে পারে তার স্পেস কিন্তু আমাদের নুতন জেনারেশন গুলোকেই করে দিতে হবে| উনি ওনার জেনারেশন এর দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখেছেন - সেই জেনারেশন এর ধ্যান ধারণার মধ্যে জেন্ডার ইকুয়ালিটি এডজাস্টমেন্ট আর পলিটিকাল কারেক্টনেস এর কোন উপাদান নাই| তাই আমাদের কাছে এই জেনারেশনে বসে ওনার লিখাটা পুরুষতান্ত্রিক আর আউট অব টাচ মনে হচ্ছে| আর সাহিত্য ও বদলাচ্ছে| আমাদের এই ফেসবুক আর ব্লগ পড়িয়ে জেনারেশন এর কাছে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর সাহিত্য কে অশ্লীলতা মনে হচ্ছে|

আর এর সাথে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা তো আছেই| এই বিগট দের মধ্যে যারা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর লিখায় যৌনতার ছোঁয়া খোঁজেন তারা কখনোই ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে মকসুদুল মোমেনীন এর অশ্লীলতার / যৌনতার ব্যাপারে মুখ খুলবেন না|

দৈনন্দিন ইউজের জন্য শাড়ি অবশ্যই এই যুগের জন্য একটি বেশ ইনকনভেনিয়েন্ট পোশাক| অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এটা হয়তো অনুধাবন করতে পারেননি অথবা ওনার জেনারেশনে বসে কালচারাল পিওরিটি তে বসে এটা অনুধাবন করতে চান নি| এই ব্যাপারটা আমাদের ই বুঝতে হবে! উনি কি আমাদের এতটুকু কন্সিডারেশন ডিজার্ভ করেন না?
##

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়