Ameen Qudir
Published:2016-12-28 03:28:09 BdST
মোর দাম ৩ টাকা
শেখর রায়
_____________
হতভাগা কৃষকের পাশে কেউ নেই
ভারত বাংলাদেশ সহ সমগ্র উপমহাদেশের অন্নদাতা কৃষক সমাজ আজ লাঞ্ছিত, নিপীড়িত। কেউ নেই তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তারা বুকে রক্ত তুলে ক্ষেতে ফসল ফলায়। সেই ফসলের ন্যায্য দাম পায় না সে। তাকে বেঁচে থাকতে হয় ফড়িয়া দালাল মারফৎ।
ঋণে জর্জরিত হতে হয় তাকে, যে কারনে ভারতে অনেক কৃষক আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এক কিলো বেগুন মাত্র ৮ টাকায়, একটা বড় সাইজের ফুলকপি জন্য মাত্র ৩ টাকা, আলু ১০ টাকারও কম, সিম ১৫ টাকা কেজিতে মধ্যস্বত্ত্বভোগী দালাল ফড়িয়া ব্যাপারীদের কাছে প্রায় জলের দামে বেচে দিয়ে নিস্তার পেতে হয় হতভাগা কৃষকদের। লোকসানের পর লোকসান দিয়ে কৃষকের জীবন আজ দিশাহারা। উদ্ভ্রান্ত কৃষক মনের দুশ্চিন্তা দূর করতে ধর্মের আশ্রয় নেয়। আর সেই সুযোগে ধর্মের শয়তান ঠিকাদারেরা কৃষকের মাথায় ঘৃণা বিদ্বেষ চালান করে দেয়। যেভাবে কৃষক সমাজের মধ্যে ঐক্যের বদলে তৈরি হয় কৃত্তিম বিভাজন। তারা ওই অপদার্থ রাষ্ট্র শক্তির কাছে ঐক্যবদ্ধ দাবী তোলা ও আন্দোলন গড়ে তোলার বদলে নিজেরাই মারামারি লুটপাটে মেতে যায়। যে ভাবে সমাজ বদলের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।
যারা চাষবাস ছাড়া আর কোন বিদ্যা জানে না, তারা কি করবে? হয় চাষ করে বাঁচবে, না পারলে মরবে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী ও অফিসার কর্মীদের কিছু আসে যায় না। ওরা মোটা মাইনে, গাড়ি বাড়ি ফোন সব ফ্রি পায়। শাসক দল বা বিরোধী যারাই বল তারা শুধু কৃষকের কাছে ভোট চায়, কিছু ফিরিয়ে দিতে চায় না তাকে। এদের ন্যূনতম কোন দায়বদ্ধতা নেই কৃষিজীবী মানুষের প্রতি। যদি থাকত, তবে ওরা পরিকল্পনা মাফিক প্রতি জেলায় গড়ে তুলতে পারত কৃষক পরিসেবা কেন্দ্র। গড়ে তুলতে পারত জেলায় উপজেলায় ফসল সংরক্ষন কেন্দ্র বা cold storage। গড়ে তুলতে পারত বীজ সংরক্ষন কেন্দ্র। কৃষি সমবায় সৃষ্টি করে যৌথ চাষবাস, যৌথ খামার, যৌথ বিপনন কেন্দ্র খুলতে পারত। গ্রামে পঞ্চায়েত বা ইউনিয়ন পরিষদ আছে, তবে তারা জমি বাড়ি রাস্তা সেতু তৈরি করার দালালি খেতে ব্যাস্ত।
কৃষক বা কৃষিজ ফসলের ন্যায্য দাম বা কৃষি বান্ধব কর্মসূচী রুপায়নের এই সব রাজনীতির দালালদের কোন দায় নেই। ওরা জানে যে গরীব কৃষক দরকারে বাবুদের কাছে হাত জোর করে সামনে এসে দাঁড়াবে, আর ওরা কত মহান সেই নমুনা পেশ করে কৃষককে প্রতারনা করবে।
কৃষকের আল্লা ঈশ্বর কি ? মাটি তার মা, ফসল যার সন্তান। মা যদি অভুক্ত থাকে, তার বুকে সন্তানকে দেবার মত বুকের দুধ আসে না। যে অন্নদাতাদের দয়ায় আমরা হাড়িতে চাল সিদ্ধ করে ভাত খাই, বাজার থেকে সবজি মাছ কিনে খাই।
কিন্তু তাদের কথা কে ভাবে। সাধারন ক্রেতা সাধারন মানুষই ভাবে না যে আমার অন্নদাতার ঘরে কি অন্ন জুটে। সাধারন ক্রেতা বাজার থেকে চড়া দামে ভোগ্যপণ্য কিনে বিপরিতে কৃষকের বাপ বাপান্ত করে। একবারও ভেবে দেখে না যে চাষবাস করে কৃষক আর লাভের মুখ দেখছে না। দালাল ফড়িয়া খুচরো পাইকারি বিক্রেতা সব লাভ ঘরে তুলে নিচ্ছে, আর কৃষকের দেনার দায়ে মাথার চুল বিকচ্ছে।
এক খবরের কাগজ হিসাব দিয়েছে যে বগুড়াতে যে ফুলকপি মাত্র ৩ টাকা কিলোতে কৃষক বেচতে বাধ্য হয়, সেই কপি ১০ গুন বেশি দামে ঢাকা শহরের বাজারে বিকোয়। তেমনি, যে বাঁধাকপি ২ টাকা কিলো দরে বসিরহাটের কৃষক বেচতে বাধ্য হয়, সেই কপি কলকেতার বাবুরা ৩০ টাকা দরে কিনে ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যায়।
আর প্রতি বছর পশ্চিম বঙ্গের জেলায় জেলায় ফসল সংরক্ষনের জায়গার অভাবে রাস্তায়, মাঠে কষ্টের ফসল অবিক্রিত হয়ে পচে নষ্ট হয়। কার কি যায় আসে ভাই। ও তো মরছে দুবাংলার হতভাগা কৃষক। সব দেশে সব রাজ্যে সরকার নামে বস্তু আছে বিলক্ষন। কিন্তু আমাদের অন্নদাতাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করার কোন লোকজন নেই।
২৭ ডিসেম্বর ২০১৬
____________________________
লেখক
শেখর রায় । সমাজ অগ্রগতির লেখক। সমাজ সচেতক।
আপনার মতামত দিন: