Ameen Qudir

Published:
2019-07-31 22:15:01 BdST

ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল নিয়ে ভারত ব্যাপি প্রতিবাদের ডাক প্রসঙ্গে


 

 


ডা. রেজাউল করীম,
সর্বভারতীয় চিকিৎসক নেতা
___________________________________

ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন বিল নিয়ে আই এম এ সারা ভারত ব্যাপি যে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে, সেখানে বাংলার আই এম এ নিরব। অথচ, বাংলারই একজন এখন সর্বভারতীয় সভাপতি। বিলে বেশ কিছু পরিবর্তন হলেও, অনেক গুরুতর বিষয় সরকার এড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকটি হল, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাত্র শতকরা 50 ভাগ আসনের ফি সরকার নির্ধারণ করবে। এই ব্যবস্থায় পয়সাওয়ালা লোকেদের সুবিধা হবে। অনেকে দেখছি, এই ফির পার্থক্য জানেন না। আমি একটি উদাহরণ দিই। একটি রাজ্যে সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি মাত্র 4000 টাকা, বেসরকারি মেডিকেলে চলেছে সরকার নির্ধারিত ফি 50,000 টাকা ও সরকার নির্ধারিত নয় এমন সিটে ভর্তি ফি কত তা গোপন। এরকম একটি রাজ্যে সরকার নির্ধারিত বেসরকারি কলেজের টিউশন ফি বছরে প্রায় ১০ লাখ, সরকার অনির্ধারিত রেট প্রায় 20লাখ। সুতরাং, এসব কলেজ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের আওতার বাইরে থেকে যাবে, নিম্নবিত্তের তো এই স্বপ্ন দেখাও মানা। দক্ষিণ ভারতে এই সব উচ্চ মূল্যের ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল ও খাবারের মান ও আলাদা। উত্তর ভারতে এখনো সে অবস্থা হয় নি। এই দেশের বেশির ভাগ মানুষ নিম্ন ও মধ্য আয়ের। তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য পড়াশোনার সুযোগ এর ফলে কমবে। আগামী দিনগুলোতে যে সরকার নতুন কোন মেডিকেল কলেজ তৈরী করবে না তাও বলে দেওয়া যায়। কারণ, বেসরকারি পুঁজি যাতে বিনিয়োগ হায়, এই বিলের সেটাও একটা লক্ষ্য।

এই বিলের ফলে এমন অনেকে রেজিষ্ট্রেশন পেতে পারেন, যারা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট প্রটোকল সমাপ্ত করেননি। সারা দেশের জন্য অভিন্ন মানের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিপন্থী এই আইন। একটি সমমানের অভিন্ন, আধুনিক চিকিৎসা দিতে সরকারের যে দায়বদ্ধতা, এই আইন তা অনেকটা খর্ব করবে বলে মনে হয়। যেহেতু, স্বাস্থ্যকর্মীর ছদ্মনামে অনেকে মডার্ন মেডিসিন লিখতে পারবেন, তাই ওষুধের একদিকে অপব্যবহার হবে, অন্যদিকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টান্স বাড়বে।

তৃতীয়তঃ মেডিকেল কাউন্সিলের রাজ্য সংস্থার হাতে ক্ষমতা আরো বাড়বে। সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের উৎপাত ও আরো বাড়বে বলে মনে হয়।

এই বিলের অনেক ভালো দিক ও আছে। বিশেষতঃ অন্ততঃ একজন সদস্য কমিশনে থাকবেন যিনি পেশেন্ট এডভোকেশির সাথে জড়িত। তিনটি আলাদা আলাদা যে শাখা তৈরী হচ্ছে, তার শীর্ষে থাকবেন চিকিৎসকরা। সেই কমিটিতে সমাজের নানা স্তরের মানুষ ও থাকবেন। এই বিল থেকে পরিষ্কার নয়, যে চূড়ান্ত ক্ষমতা রাজ্য কাউন্সিলের হাতে থাকছে কিনা। এমন অনেক বিষয় আছে যেখানে রাজ্য কাউন্সিল এম সি আই র সব পরামর্শ মানতে বাধ্য থাকতেন না। নতুন আইনে কি হবে, সেটা পরিষ্কার নয়।

এই আইনের প্রসঙ্গে মনে হল সরকার যেন সবকিছু তাড়াহুড়ো করে করতে চাইছেন। সারা দেশে অভিন্ন মেডিকেল শিক্ষার জন্য সরকারের যতটা আগ্রহ, ঠিক ততটা আগ্রহ যেন অভিন্ন পরিষেবার জন্য নয় বলে মনে হচ্ছে। অন্য ক্ষেত্রে ও এটা ঘটছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি শাসকদলের বাধ্যবাধকতা, অথচ ছোট ছোট নানা পরিবর্তন করা হলেও অভিন্ন বিধির কথা বলছেন না।

প্রচুর গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছে।ক্ষমতায় নিয়ে আসার যারা কাণ্ডারী, তাদের কথা যেন ভুলে যাওয়া না হয়। রেলে বেসরকারী করণ, রেলে ছাঁটাই, বুলেট ট্রেনের জন্য সরকারের অতিরিক্ত আগ্রহ, পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও পাত্তা না দেওয়া বা মেডিকেল কমিশন বিল সব যেন একসুরে বাঁধা- সেই সুরটি বেসরকারি করণের। এর ফল ভবিষ্যত বলবে, তবে আমাদের আশঙ্কা এগুলো ক্ষতিকর হবে।
এক্সিট নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ দেখছি না। এক্সিট পরীক্ষা বিধি তৈরী হলে, এ ব্যাপারে যে সব ভুল বোঝাবুঝি আছে, তা দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস। এক্সিট পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে পোষ্ট গ্রাজুয়েট ও পোষ্ট ডক্টরাল পড়তে পারবেন, এটা যদি সরকারের সত্যকারের চিন্তা হয়ে থাকে তাহলে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি স্বাগতই জানাবো। কারণ, এম সি কিউ মুখস্থ করার প্রবণতা এতে কমবে ও বিষয় ভিত্তিক পড়াশোনায় ছেলেমেয়েরা আরো বেশি সময় দেবে। তবে, চিকিৎসক সংগঠনগুলো সঠিক ভাবে এক্সিট নিয়ে ধোঁয়াশা দূর করার যে আবেদন জানিয়েছেন, তা অত্যন্ত সঠিক। রুল তৈরী হলে এই অসুবিধা দূর হবে। সরকার যে তিন বছর সময় হাতে রাখছেন, আশা করা যায় রুল তৈরির সময় ব্যাপক আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা করা হবে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়