Ameen Qudir

Published:
2019-07-25 17:56:59 BdST

স্বামী শব্দে সমস্যা কী?


 

 

ডা মোরশেদ হাসান -----------------

ইদা নীং একটি চল হয়েছে স্বামীকে পার্টনার বলা। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে কীভাবে সম্বোধন করবে তা তাদের একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত শব্দকে বাদ দিয়ে, বা বিরাগভাজনের বশবর্তী হয়ে যখন অন্য শব্দকে সামাজিকভাবে অধিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয় তখন তা নিয়ে ভেবে দেখতে হয় বইকি।

স্বামী শব্দে সমস্যা কী? বিশেষ করে শব্দটি তো আজকের নয়। বহু আগে সংস্কৃত থেকে স্বামী বাংলায় এসেছে।
না, সমস্যা আছে। স্বামী শব্দের অর্থগুলো ভালো নয়। স্বামী শব্দ দ্বারা পতি, প্রভু, মনিব, মালিক, খসম, অধিপতি বোঝায়। এসব নামের অর্থ একজন স্বাধীন নারী ঘাড় পেতে মাথায় নেবেন কেন?

কিন্তু ভাষায় শব্দের অর্থ সময়ের হাত ধরে পালটে যায়। একসময় যে অর্থ বোঝানো হত এখন আর তা বোঝানো হয় না। এখন সন্দেশ বলতে মানুষ বোঝে মিষ্টান্নদ্রব্য। আগে সন্দেশ অর্থ ছিল খবর। বেশি দিন আগের কথা নয়, সত্যজিৎ রায়ের বাবা বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক, ছড়াকার সুকুমার রায়ের বহুল প্রচলিত পত্রিকার নাম ছিল সন্দেশ। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন। গবেষণা শব্দের অর্থ কী? গো+এষণা=গবেষণা। গবেষণা শব্দের শাব্দিক অর্থ গোরু খোঁজা। তা এখন বিজ্ঞানীরা অর্থ জানার পর অপমানিত বোধ করে কি শব্দটির অর্থ পালটে ফেলবেন? সেটি হবে অবিমৃষ্যকারীতা।

এরকম অজস্র শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে যা তার আভিধানিক অর্থে এখন আর ব্যবহৃত হয় না। যেমন, ইস্তফা শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। অর্থ মাপ চাওয়া। এখন বাংলা ভাষায় এর অর্থ পদত্যাগ করা। একচ্ছত্র বলতে এখন আমরা বুঝি একচেটিয়া ক্ষমতা। শব্দটির মধ্যে যে মাথায় দেওয়ার ছাতা আছে তা অলক্ষ্যে পড়ে গেছে। আগের দিনে ছাতা ছিল ক্ষমতার প্রতীক। জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে সাধারণ প্রজা ছাতা মাথায় দিয়ে যেতে পারত না। একটি ছাতার মালিক বা একচ্ছত্রের মালিক শুধু জমিদারবাবু।

এমন শব্দের উদাহরণ বাংলা ভাষায় অনেক আছে। বিবাহ সূত্রেই নর-নারী স্বামী-স্ত্রী হয়। বিবাহ না করে লিভ টুগেদার করলে তারা পরস্পরকে অনেক নামেই অভিষিক্ত করতে পারেন। লিভ টুগেদার করার একটি অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে দায়িত্ববোধ বৈবাহিক সূত্রে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মতো থাকে না। ভালো না লাগলে যখন তখন দুজনের পথ দুদিকে অবারিত থাকে। স্বামী-স্ত্রী হলে যে দুজনের পথ দুদিকে করা যাবে না তা নয়, পারস্পরিক বিচ্ছেদের মাধ্যমে তা করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বৈবাহিক সূত্রে স্বামী-স্ত্রী হয়ে পরস্পরকে পার্টনার সম্বোধন কেন? এটি কি শুধুই স্বামী শব্দের প্রতি অ্যালার্জির কারণে? প্রাতিষ্ঠানিক বিয়ের মাধ্যমে যে সম্পর্কের শুরু সেটিকে প্রথমেই পার্টনার শব্দের মাধ্যমে লঘুকরণের মানে কী! এটি কি সমাজের প্রচলিত সিস্টেমের প্রতি বিরুদ্ধাচারণের ইঙ্গিত নয়? এভাবেই হয়তো বিবাহ নামক আদি আচারটি একসময় অচল হয়ে পড়বে। ভবিষ্যতই তা বলে দেবে।

তবে স্বামী-স্ত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থের প্রতি বীতস্পৃহ হয়ে যদি পার্টনার শব্দের প্রচলন হয়ে থাকে তবে এ নিয়ে আলোচনার অবকাশ থাকে বইকি। ছেলেবেলা শব্দটির প্রতি বীতরাগ প্রদর্শন করে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন মেয়েবেলা। তা এমন পরিবর্তন কি সবক্ষেত্রে করা যাবে? ভাষা কি তা মেনে নেবে? ভাষা একদিনে গড়ে ওঠে না। ছেলেমানুষি বাদ দিয়ে মেয়েমানুষি লিখে একই অর্থ প্রকাশ করা যায় না।
যাবে কি ছেলেভুলানোকে মেয়েভুলানো দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা? ছেলেখেলাকে মেয়েখেলা বা ছেলেমিকে মেয়েমি বলে একই অর্থে নিষিক্ত করা?

এখন ছেলেধরা নিয়ে বিস্তর লেখালিখি হচ্ছে। ছেলেধরা সমাসবদ্ধ পদ। উপপদ তৎপুরুষ সমাস। বিচ্ছিন্নভাবে ছেলে ধরা লেখা যায় না। লিখতে হলে নিরেটভাবে ছেলেধরা লিখতে হবে। মেয়েধরা নিয়ে আর কালি খরচ করতে যাব না।
শুধু অনুরোধ করব সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কাউকে মেরে ফেলা তো যায়ই না, এমনকি গায়ে হাতও তোলা যায় না।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়