Ameen Qudir

Published:
2019-07-25 17:26:37 BdST

প্রথমবার ডেংগু আক্রমনের চেয়ে দ্বিতীয়বার ডেংগু আক্রমনের পরিনতি ভয়াবহ


ডেংগু নিয়ে অজানা

[প্রথমবার ডেংগু আক্রমনের চেয়ে দ্বিতীয়বার ডেংগু আক্রমনের পরিনতি ভয়াবহ.. ]

ডেংগু জ্বর মশা বাহিত ভাইরাস জনিত রোগ।ডেংগু জ্বর দুই রকমের। ডেংগু ফিভার (DF) এবং ডেংগু হেমোরেজিক ফিভার (DHF)।

ডেংগু ভাইরাস সিংগেল স্ট্রেন্ড আর. এন. এ (RNA) ভাইরাস এবং এটি চার রকমের হয়ে থাকে, ডেংগু ভাইরাস ১- থেকে ডেংগু ভাইরাস -৪ (DENV 1-4)। এর মধ্যে ডেংগু ভাইরাস -৩ বেশী বিপদজনক কারন এর আক্রমণে হেমোরেজিক ফিভার সম্ভাবনা বেশী হয়।

প্রথমবার ডেংগু আক্রান্তের লক্ষন গুলো মোটামুটি টিপিক্যাল হয়ে থাকে। অস্বাভাবিক মাত্রার জ্বর, গা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, বমি, লুজ মোশন, দূর্বলতা।

ইমিউনিটি তৈরির ফলে প্রথম যে ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২য় বার তিনি আর ঐ একই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু যদি সেই একই রুগী দ্বিতীয়বার অন্য টাইপের ডেংগু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন, তখন তার ডেংগু জ্বরের ক্লিনিক্যাল প্রেসেন্টেশনটা পুরোপুরি টিপিক্যাল নাও হতে পারে।

সেটা অবশ্য বড় কথা নয়।

বড় কথা হলো, দ্বিতীয়বার ভিন্ন টাইপের ডেংগু ভাইরাসের আক্রমনে 'ডেংগু ফিভার' (DF) এর চেয়ে ভয়ানক বিপদজনক 'ডেংগু হেমোরেজিক ফিভার' (DHF) হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এবং এতে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়, রোগীর প্লাজমা লিকেজ বা রক্তরস বের হয়ে হাইপোভলিউমিয়া হয়। হাইপোভলিউমিয়ার জন্যে রুগীর ব্লাড প্রেশার নেমে যায়, রুগী শকে চলে যায়। এই হাইপোভলিউমিক শকে রোগী মারা যেতে পারে কোন প্রকার এলার্মিং ছাড়াই।

ডেংগু হেমোরেজিক কেনো রক্তরস বেরিয়ে যায়?
ডেংগুতে প্লাজমা লিকেজ বা রক্তরস বের হয় রক্তনালির গায়ে মাইক্রোলিকেজ সৃষ্টি হবার ফলে।

ডেংগু ভাইরাসের আক্রমণে দেহের রোগ প্রতিরোধী কোষ ( মনোসাইট, ম্যাক্রোফেজ, ডেন্ড্রাইডিক সেল, টি-সেল) থেকে নির্গত হয় নানান রকমের ইনফ্ল্যামেটরি মেডিয়েটর, যেমন টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর -আলফা (TNF-a), ইন্টারলিউকেন ২-৬-৮ (IL-2, IL6, IL-8) , গামা-ইন্টারফেরন (INF-g), অক্সিজেন রেডিকেল, ইলাসটেজ, ডেংগু ভাইরাল নন স্ট্রাকচারাল এন্টিজেন -১ (DENV NS-1) ইত্যাদি ।

এসব ইনফ্লামেটরি মেডিয়েটর গুলোর প্রভাবে রক্তনালির অন্তগাত্রে গ্লাইকোক্যালিক্স লেয়ারের ক্ষতি হয়ে মাইক্রোলিকেজ তৈরি হয় যার মাধ্যমে রক্তের রক্তরস (প্লাজমা) বের হয়ে যায়।

কেনো নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরে

ভাইরাসের আক্রমণে বোনম্যারো থেকে প্ল্যাটেলেট উৎপাদন কমে যায় এবং প্লাটেলেট ভেংগে যায় ফলে প্লাটেলেত এর পরিমান কমে যায়। একে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বলে। প্লাটেলেট রক্ত জমাট বাধায় ফলে এর অভাবে রুগীর অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় ।

ডেংগু জ্বরের ঔষধ ও টিকা

ডেংগু জ্বরে কেবল প্যারাসিটামল ঔষধ খেতে হয়। আর ডেংগু হেমোরেজিক ফিভার সন্দেহ হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারন শরীর থেকে মাইক্রোলিকেজের মাধ্যমে ব্লাড বেরিয়ে যাবার কারনে রুগী কে স্যালাইন বা রক্ত দেবার প্রয়োজন পড়ে।

ডেংগু ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হয়েছে। তবে সেটা যারা একবার ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কেবল তাদের কেই দেয়া যেতে পারে। যার অতীতে ডেংগু হয়নি তিনি টিকা নিলে ভালোর চেয়ে মন্দ হবে বেশি।

ডেংগু ভাইরাসের টিকা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারেনা।

ডেংগু জ্বরে মৃত্যু বা মরটালিটি রেইট শতকরা এক ভাগের ও কম। তাই আতংক নয়, বরং এর একমাত্র বাহক মশা মুক্ত থাকা, চারপাশ মশা মুক্ত রাখা, সচেতনতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই প্রধান কর্তব্য।

ডা. মো. সাঈদ এনাম

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়