Ameen Qudir

Published:
2016-12-28 00:21:30 BdST

মেয়েদের জীবনের সব থেকে বড় সমস্যা কি


 

 

ডা. নাসিমুন নাহার
______________________________


মেয়েদের জীবনের সব থেকে বড় সমস্যা কি জানেন ?
---পায়ের নীচে একটুকরো শক্ত মাটি আর মাথার উপরে একটা নিরাপদ ছাদের অভাব।

অথচ মেয়েদের কিন্তু বাড়ির অভাব নেই--বাবার বাড়ি/মায়ের বাড়ি /ভাইয়ের বাড়ি/ স্বামীর বাড়ি/ছেলের বাড়ি-- সবগুলোই মেয়েদের বাড়ি ,তবে মৌখিকভাবে।
সম্পর্কের টানাপোড়ন ঘটলেই টের পাওয়া যায় আসলে "কার বাড়ি"!

পারিবারিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এমন অনেক মেয়ে জেনে শুনে বুঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছে শুধু ঘর থেকে বের হলে কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে এই ভয়ে ?
পারিবারিক সমস্যা যে কারনেই হোক না কেন কখনো ছেলেটিকে আশ্রয়হীন হবার দুশ্চিন্তাটুকু অন্তত করতে হয় না আমাদের দেশে, প্লিজ এডমিট ইট।

অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী মেয়ের পক্ষেও সম্ভব হয়ে ওঠে না নিরাপদ একটা আশ্রয় খুঁজে পাওয়া।আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট আসলেই ভীষণ অদ্ভুত এবং ভয়ংকর এখনও।এক টুকরো আশ্রয়ের জন্য কত হাজার মিথ্যের সাথে বসতি !

বাবার/মায়ের বাড়ি যা একজন মেয়ের জন্মসূত্রে নিজের বাড়ি-নিজের শৈশব কৈশোর-পুরোটা মেয়েবেলার শেকড় যেখানে, সেই বাড়িটাও বিয়ের সাথে সাথে কেমন অদ্ভুত রকমভাবে যেন বদলে যায়।স্বামী ছাড়া বাবার বাড়িতে বেড়াতে এলেও লোকের কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়।দুই দিন গড়িয়ে তিনদিন হলেই সবাই শিউর হয়ে যায় যে নিশ্চয়ই জামাইর সাথে ঝগড়া করে এসেছে !
কেন একজন মেয়ের কি তার নিজের বাড়িতে দুবেলা নিজের মতো করে সেই ছোটবেলার দিনগুলোতে ফিরে যেতে মন চাইতে পারে না ?

আর সেখানে যদি পারিবারিক অশান্তির জন্য বাবার বাড়িতে গিয়ে ওঠা হয় তাহলে তো কথাই নেই।বড়জোর হাতের আঙুল গুনে কয়েকটা দিন।তারপর ই শুরু হয়ে যাবে জীবন নাটকের আসল খেলা আপনাকে নিয়ে।সবাই খেলবে আপনাকে নিয়ে ! আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীরা তখন সারাক্ষণ প্রমান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন যে তারা 'সামাজিক প্রাণী'।তিনবেলা না, পারলে দিনে চার /পাঁচ বেলা খোঁজ খবর শুরু হয়ে যাবে আপনার।

আর যদি সম্পর্কের ইতি টেনে চলে আসেন তাহলে তো কথাই নেই ! আপনিই হবেন ঐ সমাজের সব থেকে 'most wanted eligible পাত্রী' এবং 'টক অফ দ্য এরিয়া' !!
পাত্র শারিরীক মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও ব্যাপার না,যেন পাত্রস্হ করতে পারলেই আপনাকে, আপনার পরিবারকে তারা উদ্ধার করে ফেলবেন !
অথচ একটা সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা একজন মানুষের জন্য নতুন আরেকটা সম্পর্কে জড়ানো কখনোই ঐ মুহূর্তে কোনভাবেই healthy সিদ্ধান্ত কিছুতেই নয়।এই সহজ কথাটা বোঝার মতো মানুষ আশেপাশে খুব কম থাকে।

সবথেকে দুঃখজনক কি জানেন ?
আর সবাইকে আপনি overlooked করলেও একটা সময় আসবে যখন আপনি অসহায় বোধ করতে শুরু করবেন নিজের বাবা মায়ের 'ক্লান্তিমাখা, কিচ্ছু না বলা, খানিকটা অপরাধী' মুখ দুটো দেখে।তারা হয়তো কখনোই মুখ ফুটে বলবেন না -- 'Enough !!'
কিন্তু কিছু কথা আপনার নিজের মন- আপনার gut feeling আপনাকে বলে দিবে।এর থেকে কষ্টের যন্ত্রণার অনুভূতি পৃথিবীতে আর কিছু নেই।আপনি যদি অনুভূতিশীল একজন মানুষ হয়ে থাকেন আপনার ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।এতটা কষ্ট সংসার ছেড়ে আসার সময়েও হবে না আপনার।কিন্তু বিয়ের পরে কিংবা বিয়ে ভেঙ্গে যাবার পরে বাবা মায়ের ঘাড়ের বোঝা হবার মতো শাস্তি- অস্বস্তি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই।(ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)

"নিজের এক টুকরো ঘর--এক মুঠো আশ্রয়--নারীর নিজের বাড়ি"---- তা কি এ সমাজে আদৌ সম্ভব !

_______________________________

 

লেখক
ডা. নাসিমুন নাহার । জনপ্রিয় লেখক। ডাক্তার প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিটি লেখাই তাঁর অাকাশচুম্বী পাঠকপ্রিয় হয়।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়