Ameen Qudir

Published:
2019-07-02 08:20:57 BdST

বাংলাদেশের অধ্যাপক ও চিকিৎসকের দৃঢ় খোলা চিঠি:আমাদের উপর শোধ নিতে গিয়ে নিজেই ঠকছে না তো?



ডেস্ক
__________________

বাংলাদেশের উপমহাদেশ খ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক রেজাউল করিম ও ডাঃ আমিনুল ইসলাম। স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা আলোকিত ব্যাক্তি। সজ্জন। পরম লোকসেবী। তাদের অপরাধ, এক ব্যাক্তির হিরোগিরির ও বাড়াবাড়ির তারা প্রতিবাদ করেন। সত্য ও মানবতার সেবকদের পক্ষ নেন। সেই দুই চিকিৎসকের খোলা চিঠি।

১.
প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,
আমার অনাকাংখিত বদলী নিয়ে কিছু লিখার ইচ্ছা একেবারেই ছিল না।

বদলী হবে আমি জানতাম, কারন ক্রিকেটার মাশরাফি ইস্যুতে যে ৬ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের দু জনকে একমাস আগেই দূর্গম স্থানে বদলী করা হয়েছে।

দুজন সহযোগী অধ্যাপকের বদলীর বিষয়টি জানার পর বিএমএ মহাসচিব, স্বাচিপ সভাপতি ও মহাসচিবের সাথে সাক্ষাত করে আমরা বদলী বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করি। তারা কি করেছেন জানি না, তবে মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল বদলির আদেশ পেলাম।

সরকারী চাকরীতে বদলী স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু যে পরিস্থিতিতে আমার বদলি হয়েছে তা স্বাভাবিক নয়। বর্তমান বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসে হাজার বিশেক চিকিৎসক কর্মরত আছেন, তাদের মধ্যে পেডিয়াট্রিক হোমটোলজি ও অনকোলজি বিষয়ে মাত্র ৩ জন অধ্যাপক চাকুরীরত আছেন। আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল এ যোগ দেবার পর পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ সত্যিকার কার্যক্রম শুরু করে। চট্টগ্রাম এলাকার শত শত শিশু ক্যান্সার ও রক্তরোগাক্রান্ত শিশু সরকারী হাসপাতালে সেবা পাচ্ছে। শিশু ক্যান্সার আক্রান্তদের ঢাকা বা বিদেশগামীতা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে শতাধিক শিশু ক্যান্সার রোগী আমার অধীনে চিকিৎসাধীন আছে। এমতাবস্থায় আমার বদলী এই শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

বদলির আদেশ পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই আমি কোন নেতার কাছে যাই নি। কিন্তু কিছু অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়া যেভাবে খবরের শিরোনাম করে ফলাও ভাবে প্রচার করছে তাতে কিছু লেখা প্রয়োজন মনে করলাম।

চিকিৎসা আমার পেশা এবং নেশা। আমার জীবনের সিংহভাগ সময়ই গেছে এই পেশায় উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টায়। তাই চিকিৎসকদের জন্য আমার আমৃত্যু ভালবাসা থাকবে। কেউ চিকিৎসক সমাজকে অন্যায় আক্রমন করলে স্বাভাবিকভাবেই আমার মন ভারাক্রান্ত হবে এবং নিজের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করব।

প্রিয় চিকিৎসক ভাই বোনেরা, আমি কোন সরকার বা রাস্ট্রবিরোধী কাজ করি নি, কোন দূর্ণীতি করিনি, কোন সন্ত্রাসীকাজে লিপ্ত হই নি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি সাংসদ মাশরাফি ভার্সেস নড়াইলের চিকিৎসকদের ইস্যুতে অন্য এক চিকিৎসকের পোস্টে একটি কমেন্ট করেছি। আমাকে শোকজ করা হয়েছে, যার উত্তর আমি দিয়েছি। চাকুরীবিধি অনুযায়ী আমি কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিনি।

তারপর ও কেন এই বদলী তার বিচারের ভার সময়ের উপর দিলাম।

- অধ্যাপক রেজাউল করিম

অধ্যাপক, পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজী এন্ড অনকোলজী, এসওএমসি

২.
ফেসবুকে মাশরাফি সম্পর্কিত লেখার শাস্তি স্বরূপ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি হবার আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম আমার subject এর পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ও সুপারভাইজার। রেসিডেন্টদের সাথে রাউন্ড, ক্লাশ, ব্রংকোসকপি, morning session এসব করেই আমার সময় চলে যেতো।
তরুনদের মাঝে থেকে নিজের মধ্যেই যেন তারুন্য ভর করতো। সব সময়ই মনে হতো আমিতো শিক্ষকতার পদে আছি। সারা সপ্তাহেই যদি প্র‍্যাক্টিসে মত্ত থাকি তবে ছাত্রদের দেয়ার জন্য কিছু শিখবো কখন? বিশেষ করে ব্যাপারটা যখন পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের। আমি তাই যেদিন কোর্স কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত হলাম সেদিন থেকেই সপ্তাহে ৬ দিনের পরিবর্তে ৩ দিন করে চেম্বার করতে থাকি( ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও)। ছাত্রদের সাথে knowledge এর gradient মেইনটেইন করার জন্য ছাত্রের চেয়ে শিক্ষকের বেশী পড়াশুনা করা উচিত- এটা আমার যৌক্তিক বিশ্বাস।

ঢাকায় যেহেতু আমার কোন শিকড় নেই, আমার কোন বাচ্চাও ঢাকার স্কুলে পড়েনা -আমি দূরে কোথাও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি এ নিয়ে তেমন দুঃখবোধও নেই। শুধু দুঃখ হচ্ছে এ রেসিডেন্টদের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হব। তাদের নিয়ে আর রাউন্ডে দেয়া হবেনা, তাদের ক্লাশ পরীক্ষায় আমার কোন সংশ্লেষ থাকবেনা, নতুন কোন ব্যাচের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক গড়ে উঠবেনা- এ সব চিন্তায় শুধু বুকের কোনে এক হিমস্রোত বয়ে যায়। Pulmonology র যে সব কাজকর্ম এদেশ সেদেশ ঘূরে শিখে এসেছিলাম তা ও আর করে দেখানোর সূযোগ হবেনা সেটাও হতাশার।

রাষ্ট্র আমাদের উপর শোধ নিতে গিয়ে নিজেই ঠকছে না তো?

"যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে//
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।

ডাঃ আমিনুল ইসলাম
এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (পালমোনোলজি)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়