Ameen Qudir

Published:
2019-06-16 00:52:07 BdST

আমার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী আমার মা


 

অধ্যাপক মধুশ্রী চৌধুরী


_________________________

 

আমার কল্যাণময়ী ,আনন্দময়ী ,মমতাময়ী জননী ,যিনি ছিলেন একাধারে সুসাহিত্যিক ,গবেষক ,শিক্ষাবিদ ,গ্রন্থপ্রণেতা ,সুদক্ষ প্রশাসক এবং সর্বোপরি একজন সুশিক্ষক । বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র অধ্যাপক ডঃ মঞ্জুশ্রী চৌধুরী । আকাশের মত উদার ছিল তাঁর মন । আমার মা ছিলেন এমন একটা সময়ের প্রতিচ্ছবি , যে যুগে মেয়েদের শিক্ষার সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা ,পারিবারিক মূল্যবোধ জড়িত ছিল ! সাহিত্য ও গবেষণা ক্ষেত্রে তিনি যেমন সফলতা অর্জন করেছিলেন ,তেমনি সাফল্যলাভ করেছিলেন তার শিক্ষকতা জীবনেও ।
এদেশে নারীদের চলার পথে ,বিদ্যার্জনের পথে ,চাকুরীক্ষেত্রে কত বাধা-বিঘ্ন ও কতশত প্রতিকুলতা । সকল প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল পেরিয়ে নির্ভীক ও দৃপ্ত সাহসে এগিয়ে গেছেন এই শিক্ষাব্রতী ,বহুগ্রন্থপ্রণেতা এক প্রজ্ঞাময়ী নারী ।

তিন কৃতি সন্তানের জননী আমার মা কর্মজীবী নারী হয়েও ছিলেন একজন সফল মা ও সুগৃহিণী --.২০০৫ সালে তাঁকে ' রত্নগর্ভা মা 'এওয়ার্ড -এ ভূষিত করা হয় ; কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ,আমার মা নিজেই একজন রত্ন ছিলে। শিক্ষাক্ষেত্র ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য মাকে বেশ কয়েকটি সম্মাননা পদকে ভূষিত করা হয় । তথাপি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মহীয়সী নারীর যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি ।
তিনি গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের গোপনে আর্থিক সহায়তা দান করতেন । ঐশ্বর্য্য ,বিত্ত- বৈভবের প্রতি ছিলনা তাঁর বিন্দুমাত্র আকর্ষণ ।কিভাবে বই পাঠ করে জ্ঞান লাভ করা যায় - তাতেই যেন আনন্দ । মহীয়সী জননীর গুণাবলী আমায় প্রভাবিত ও মুগ্ধ করেছিল দারুণ ভাবে সেই ছোটবেলা থেকেই - তাই মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আমি শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি ।
মা যে ছিলেন আমার জীবনের ধ্রুবতারা । আজ মা নেই । কোন সঙ্কটে ও বিপদে পড়লে এখন কেমন যেন অসহায় বোধ করি । আমি খুঁজে ফিরি মায়ের স্পর্শ মায়ের লেখা বইয়ের পাতায় পাতায় ; মায়ের পুরানো শাড়ির ভাঁজে ভাজে -- এখনো পাই সন্ধ্যামালতীর সুবাস ও অগুরুর সুঘ্রাণ ! অনুভব করি মায়ের লম্বা দীঘল কেশের সুমিষ্ট ঘ্রাণ !

১১ জুন , আমার মহীয়সী মায়ের প্রয়াণদিবস ;আমি জানি আমার মায়ের আশীর্বাদ আমায় ঘিরে আছে নিরন্তর ।। মাগো তোমায় সশ্রদ্ধ প্রণাম ।

২.

আমার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী আমার মা ।

আজকের দিনে বাবা-মায়ের বিয়ের পর স্টুডিওতে তোলা অনেক বছর আগের এই অমূল্য ছবিটি পেলাম ! মায়ের লেখা একটি বইয়ের পাতা উল্টানোর সময় ছবিটি দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা ! কত যুগ আগের ছবি ! সেই যুগে শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও সত্য সুন্দরের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করতে করতে বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে খুঁজেছেন বিন্দু বিন্দু আলো,আমার মায়ের সংগ্রাম মহান শিক্ষকতা পেশা ও লেখনীর মধ্য দিয়ে ।
মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন ,আধুনিক মনষ্ক ,প্রগতিশীল চিন্তা -চেতনার ধারক আমার মহীয়সী জননী অসংখ্য গরীব শিক্ষার্থীকে গোপনে আর্থিক সহায়তা দান করতেন ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যা বিতরণ করে আলোকিত মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন ।মা ছিলেন সেই যুগের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিষ্টিংশন গ্র্যাজুয়েট ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.টি ( প্রথম শ্রেণী ) ; এম. এ, এম.এড (প্রথম শ্রেণী ) এবং পি.এইচ- ডি ।
তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও প্রতিভাদীপ্ত ছাত্রী । আমার মা অধ্যাপক ডঃ মঞ্জুশ্রী চৌধুরী ছিলেন সুসাহিত্যিক ,গবেষক ,গন্থপ্রণেতা,শিক্ষাবিদ এবং সর্বোপরি একজন সুশিক্ষক ।তিনি ছিলেন স্বকীয়
বৈশিষ্টে সমুজ্জ্বল ,তাই আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে মেধা ও মননের সমন্বয় ঘটিয়ে কত যুগ পূর্বে পুরুষশাসিত সমাজে নিজ প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে দক্ষতার সাথে প্রশাসনে জায়গা করে নিয়েছিলেন ! এত উচ্চশিক্ষিত হয়েও মায়ের মাঝে খুঁজে পেয়েছি্লাম শাশ্বত বাংলার কল্যাণময়ী রূপ ! বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিণী আমার জননী তাঁর তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে প্রমাণ করে গেছেন যে কর্মজীবী নারীরাও সফল ও সার্থক সুগৃহিণী ও মা হতে পারে ! আমি ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি ও শিক্ষকতা পেশায় এসেছি । মনে হত ,এত শত কাজ করে সংসার সামলিয়ে কি ভাবে মা লেখালেখিতেও মনোনিবেশ করেন ! মা যেন আমার দশভূজা -- দশ হাতে দশ দিক সামলাচ্ছেন ! মা যে আমার জীবনে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরীর মত ।
তবে এটা ঠিক যে ,মায়ের বিদ্যা অর্জন ও এত কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার শিক্ষানুরাগী বাবা ;তিনি সকল বাধা-বিঘ্ন অগ্রাহ্য করে মাকে এগি্যে যেতে উৎসাহ দিয়েছিলেন সারা জীবন । তাই বলতে হয় কবি নজরুলের সেই কবিতার চরণ -- '' বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি
চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী ,
অর্ধেক তার নর ।। ''

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়