Ameen Qudir

Published:
2019-05-26 20:55:56 BdST

বিকল্প নিরাময়ইনসমনিয়া: আকুপ্রেশারে সমাধান


 


আশেব কাইজী
___________________________

ডাক্তারদের মতে, ঘুমানোর দরকার হলেও ঘুমাতে না পারার অক্ষমতাকে ইনসমনিয়া বলে। আবার ঘুমিয়ে পড়লে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াকেও ইনসমনিয়া বলে। কোনো ব্যক্তির মাঝে এই ঘুম না হওয়ার প্রবণতা কয়েকদিন ধরে চলতে থাকলে সেই ব্যক্তিকে ইনসমনিয়াক বলে।

ইনসমনিয়া প্রধানত দুই প্রকার। এগুলো হলো অ্যাকিউট ইনসমনিয়া এবং ক্রণিক ইনসমনিয়া। অ্যাকিউট ইনসোমনিয়াকে স্বল্পমেয়াদী ইনসমনিয়াও বলা হয়। সাধারণত পরীক্ষা চলাকালীন দিনগুলোতে কিংবা বিভিন্ন দুশ্চিন্তা থেকে অ্যাকিউট ইনসমনিয়া হয়। এটি সাধারণত দুই থেকে তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। তাছাড়া এর জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার প্রয়োজনও হয় না।

ক্রণিক ইনসোমনিয়া হলো দীর্ঘমেয়াদী ইনসোমনিয়া। একজন লোকের সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন ঘুমের অসুবিধা হলে এবং তিন মাস পর্যন্ত এই সমস্যা স্থায়ী হলে তাকে ক্রণিক ইনসমনিয়াক বলে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এ ধরনের মানুষের শরীর, মন ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তাই কারো দীর্ঘদিন ধরে এই ঘুমের সমস্যা থাকলে দ্রুত কোনো আকুপ্রেশার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।

ইনসমনিয়া কেন হয়?

ইনসমনিয়া হাজারটা কারণে হতে পারে। মূলত ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন যেকোনো কিছু ইনসমনিয়া রোগ হওয়ার কারণ হতে পারে। হতে পারে তা সারারাত ধরে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা কিংবা টিভি দেখা। হতে পারে একদিনের তুলনায় বেশি কাজের চাপ। আবার নানা রকম দুশ্চিন্তা এই রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। আমাদের অনিয়মে ভরা জীবনধারা ও কিছু বদঅভ্যাস এই রোগ বয়ে আনতে পারে।

নানা রকম রোগ থেকেও ইনসমনিয়ার আবির্ভাব ঘটতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাতের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রনা, স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমন্ত অবস্থায় অনিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাস) এবং নানা প্রকার স্নায়ুবিক রোগ। আমরা কী ধরনের ঔষধ সেবন করছি তার উপরও এই রোগ নির্ভর করে। বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যেমন বিষণ্ণতা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা, স্কিৎজফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার ইত্যাদি থেকে এই রোগের আবির্ভাব ঘটতে পারে।

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ইনসোমনিয়া সৃষ্টির পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ। ঘুমানোর আগে ভারী খাবার খাওয়া, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সমৃদ্ধ পানীয় পান করা, ধুমপান, ঘুমের অনিয়ম ইত্যাদি ইনসমনিয়া সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

ইনসমনিয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ

একজন ইনসমনিয়াকের মাঝে নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এগুলো নিচে ব্যাখা করা হলো:

১. চোখে ঘুম থাকলেও রাতে ঘুম না আসা।

২. ঘুম আসলেও বেশিক্ষণ ঘুমাতে না পারা।

৩. সারারাত ঘুমালেও ঘুম থেকে উঠার পর দুর্বল অনুভব করা।

৪. দিনের বেলা অবসাদ ও ঘুম-ঘুম ভাব থাকা।

৫. দুশ্চিন্তা, হতাশা ও বিষণ্ণতা বেড়ে যাওয়া।

৬. বিভিন্ন কাজে সঠিকভাবে মনোযোগ দিতে না পারা।

৭. ছোট ছোট বিষয় ভুলে যাওয়া।

৮. দুশ্চিন্তা থেকে মাথাব্যথা।

৯. ঘুম আসছে না কেন তা নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা করা।

এরকম আরো বিভিন্ন সমস্যা একজন ইনসমনিয়াকের মাঝে দেখা যায়। কারো মাঝে দীর্ঘদিন ধরে এমন লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

প্রাকৃতিক প্রতিকার
_______________

ইনসমনিয়া রোগের চিকিৎসায় ওষুধ লাভের চেয়ে ক্ষতি বয়ে আনে অধিক। এধরণের রোগীর আচরণগত পরিবর্তন আবশ্যক। ঘুমের অভাবে ভোগা ইনসমনিয়াকরা আকুপ্রেশার, ইয়োগা ও প্রাণায়ামের সাহায্যে দ্রুত আরোগ্যলাভ করতে পারেন। ইনিসমনিয়ার মানসিক ও আচরণগত চিকিৎসায় জোর দিতে হয়। একজন ইনসমনিয়াকের বিছানা, ঘুম ইত্যাদির প্রতি অনীহা তৈরি হয়। ঘুমানোর সময় ফোন ও কম্পিউটার চালানোর মতো অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ে। একারণে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে এসব ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ক্রণিক ইনসমনিয়াকের অভিজ্ঞ প্রাকৃতিক ;বিশেষ করে আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন থেরাপিতে অংশ নেওয়া অনেক কার্যকরী। শোবার স্থান সর্বদা পরিচ্ছন্ন থাকলে ঘুম দ্রুত আসে। অগোছালো জীবনযাপন পরিহার করে একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চললে এই রোগ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
________________________

আশেব কাইজী । বিকল্প নিরাময় ও বিকল্প দর্শন নিয়ে নিয়মিত লেখেন।
ছবি সৌজন্য : cabothealth.com.au

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়